ঢাকা, ২৬ নভেম্বর মঙ্গলবার, ২০২৪ || ১২ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৮৬৭

মা হওয়ার পর যেভাবে ফিটনেস ধরে রাখবেন

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২০:৪৩ ২৮ আগস্ট ২০১৯  

চার মাস আগে প্রথম সন্তানের মা হয়েছেন মন্টি দে। একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন তিনি। আর মাত্র এক মাস পরই মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষে যোগ দিতে হবে চাকরিতে। কিন্তু এ ক’দিনেই বেশ মুটিয়ে গেছে মন্টি। আয়নাতে নিজের চেহারা যেন নিজেই চিনতে পারছেন না। মূলত মা হওয়ার পর থেকে বেশ শারীরিক পরিবর্তন হয়েছে তার। বেশ চিন্তায় পড়ে গেলেন তিনি। কারণ, চাকরিতে তাকে বেশ দৌঁড়াতে হয়। আর শরীর ফিট না থাকলে কি করে হয়।

অনেক ভেবেও কী করা যায় বুঝতে পারছেন না মন্টি। শেষ পর্যন্ত শরণাপন্ন হলেন তারই স্কুল বান্ধবী ডা. শর্মিলার। সব শুনে ডাক্তার পরামর্শ দিলেন, আবার ব্যায়াম শুরু করার।
গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. নুরানী নিরু বলেন, মা হওয়ার পর আমরা ধরেই নিই, আমাদের শারীরিক ফিটনেস শেষ। আমরা আর আগের মতো সুন্দর হতে পারব না। পাব না চেহারার সেই সৌন্দর্য্য। কিন্তু আগের সেই শারীরিক সৌন্দর্য্য ফিরে পাওয়া খুব কষ্টের কিছু না। এজন্য দরকার দৃঢ় মনোবল আর আত্মবিশ্বাস।

তিনি বলেন, মানসিকভাবে সুস্থ থাকলে যেকোনও মা’ই শারীরিকভাবে সুস্থ হয়ে উঠতে পারে। মা হওয়ার পরবর্তী শারীরিক নাজুক অবস্থা থেকে পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে ছয় মাস থেকে এক বছর সময় লেগে যেতে পারে। মূলত বড় হওয়া জরায়ু ও দুর্বল হয়ে পড়া পেলভিক মাংসপেশিগুলো আগের অবস্থানে ফিরে আসে ছয় সপ্তাহের মধ্যেই। শুরু থেকেই পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ করলে প্রসাব ধরে রাখার সমস্যা বা তলপেটের পেশির দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা যায়। তবে পুরোদমে ব্যায়াম শুরু করা উচিত ছয় মাস পর থেকে। আর বুকের দুধ খাওয়ানোর কারণে প্রথম ছয় মাস খুব বেশি ডায়েট না করাই ভালো।

প্রায় একই ধরনের কথা বলেন পিটিআরসি রিহ্যাব অ্যান্ড ফিজিওথেরাপি সেন্টারের পরামর্শক শায়লা। তার সেন্টারে আজকাল অনেক মা হারিয়ে ফেলা ফিটনেস ও ফিগার ফিরে পেতে নানা সেশনে আসছেন। এ ব্যাপারে দৃষ্টিভঙ্গি অনেক পাল্টেছে। তবে মা হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে স্বাভাবিক হাঁটাচলা শুরু করলেও ছয় মাস পর্যন্ত কোনো ভারী ব্যায়াম না করাই উচিত। বিশেষ করে যদি সিজারিয়ান হয়ে থাকে। ছয় মাস পর থেকে বিশেষজ্ঞের অধীন নির্দিষ্ট কিছু ব্যায়ামের মাধ্যমে আগের ওজন ও ফিগার পাওয়া সম্ভব। কেবল ওজন কমানোটাই মুখ্য নয়, মা হওয়ার পর পেট ও পেলভিসের পেশিগুলো শিথিল বা লুজ হয়ে পড়ে। এর স্থিতিস্থাপকতা বাড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট ব্যায়াম লাগে। ফিট থাকার জন্য মা হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পর থেকে প্রতিদিন ৪০ মিনিট করে হাঁটা ভালো।

ফিট থাকতে খাবারের ভূমিকা আছে। ফিটনেস বা স্ট্রেংথ কেবল শরীরের ব্যাপার নয়, এটা মনেরও। অনেক মেয়েই মা হওয়ার পর মানসিক শক্তি ও আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন। অনেকে মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষে কাজে ফিরে যান বটে, কিন্তু সেই এনার্জি যেন হারিয়ে ফেলেন।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সিফাত ই সাঈদ বলেন, বেশির ভাগ নতুন মায়েরই পোস্টপারটাম ডিপ্রেশন হয়। মনে হয় যেন সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে।

এ বিষয়ে তার পরামর্শ হলো, শরীর ও মন পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে আসতে ৬ থেকে ৯ মাস লাগবে। রাতারাতি আগের মতো হওয়া যাবে না। এটা আগেই মেনে নিতে হবে। ধৈর্য ধরতে হবে। নিজের জন্য সামান্য হলেও আলাদা একটু সময় বের করতে হবে। যে সময় আপনি নিজের যত্ন নেবেন, ব্যায়াম করবেন বা হাঁটবেন, চাইলে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আড্ডা দেবেন, একটা ভালো ছবি দেখবেন বা গান শুনবেন। পরিবারের অন্যরা নবজাতকের দায়িত্ব দিনে দু–একবার না নিলে এটা সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে স্বামী সবচেয়ে ভালো ভূমিকা রাখতে পারেন।