ঢাকা, ২৪ নভেম্বর রোববার, ২০২৪ || ১০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
১০৪৮

মেঘনার চরে সয়াবিন উৎপাদনের নতুন সম্ভাবনা

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১২:২৪ ১৮ জানুয়ারি ২০২১  

বাংলাদেশ সয়াবিন উৎপাদনে বিশ্বের ৩৫তম দেশ। আর দেশে তা উৎপাদনে প্রধান জেলা লক্ষীপুর। সেখানকার মেঘনা নদীর বুকে জেগে ওঠা চরে হাজার একর জমিতে সেটি চাষ হয়েছে। এ কাঁচা সয়াবিনের পুরোটাই বীজ হিসেবে দেশের বিভিন্ন জেলার কৃষকদের কাছে বিক্রি হচ্ছে। এ অঞ্চলের কয়েকটি চর থেকে অসময়ে উৎপাদিত সয়াবিনের পরিমাণ ১০ হাজার টনেরও বেশি, যার বাজার মূল্য প্রায় ২০০ কোটি টাকা।  

 

আর এ বীজ উৎপাদনে জড়িয়ে আছে চরের ভূমিহীন ৫ হাজারেরও বেশি মানুষ।  ফলে নদীর বুকে জেগে ওঠা বিশাল চরাঞ্চলগুলোতে তা উৎপাদনের নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। পৌষ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে এ সয়াবিন সংগ্রহ, মাড়াইসহ ক্রয়-বিক্রয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষি। 

 

এ অঞ্চলের কৃষকরা স্থানীয়ভাবে এবং বিএডিসি থেকে এর বীজ সংগ্রহ করেন। পরে পৌষ মাসে এসব বুনে সয়াবিনের আবাদ শুরু করেন। জেলার চরকাচিয়া, কানিবগার চর, টুনুর চর, খাসিয়ার চর ও চরইন্দুরিয়ার বিশাল অঞ্চলজুড়ে কৃষকরা আশ্বিন মাসের মাঝামাঝিতে তা বপন করেন। আর পৌষের শুরুতেই সেটি বিক্রির উপযোগী হয়।

 

কৃষক নিজেদের উৎপাদিত বীজ দিয়েই আবার নতুন আবাদ শুরু করেন। তারা জানান, প্রতি দেড় শতক জমিতে সয়াবিন আবাদ হয় ২০ কেজি। আর মৌসুমে এক একর জমিতে তা উৎপাদন হয় ৪০ মণ। কাঁচা বীজ সয়াবিন প্রতিমণ বিক্রি হয় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। আর মৌসুমে সেটি বিক্রি হয় প্রতিমণ ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়।

 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, রায়পুর উপজেলার উত্তর ও দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের মেঘনার নদীর চরকাচিয়া, কানিবগার চর, টুনুর চর, খাসিয়ার চর, চর ইন্দুরিয়া এবং সদর উপজেলার মেঘার চরে ৩-৪ বছর ধরে অসময়ে (বর্ষাকালে) সয়াবিন চাষ করছেন কৃষকরা। প্রায় ২০ হাজার একর জমিতে এটি  চাষ হচ্ছে। প্রচলিত সয়াবিনের তুলনায় এর দামও বেশি বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

 

রায়পুর উপজেলার চরকাচিয়া পানির ঘাট এলাকার সয়াবিন ব্যবসায়ী স্বপন গাইন জানান, চরকাচিয়া পানির ঘাট ও মোল্লারহাটে প্রতি শনি ও মঙ্গলবার এর হাট বসে। চরকাচিয়া, কানিবগার চর, টুনুর চর, খাসিয়ার চর ও চরইন্দুরিয়ায় উৎপাদিত বীজ এসব বাজারে আসে। প্রতি হাটে গড়ে প্রায় ৫০০ থেকে এক হাজার টন তা বিক্রি হয়। ওই বাজারের সয়াবিন নিয়ে হায়দারগঞ্জ, হাজীমারাসহ উপজেলার আরও পাঁচটি বাজারে বিক্রি হয়। লক্ষীপুর ছাড়াও নোয়াখালী, চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবসায়ীরা তা কেনেন।

 

চরকাচিয়া ও টুনুর চরে গিয়ে দেখা যায়, চরাঞ্চলের বিশাল এলাকাজুড়ে সয়াবিনের আবাদ করা হয়েছে। কৃষক-কিষানি গাছ থেকে পাকা সয়াবিন মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। মাড়াই করা বীজ আবাদের জন্য চাহিদা অনুসারে রেখে বাকি অংশ নৌকায় করে ঘাটে নিয়ে যাচ্ছেন কৃষক। সেখানে আড়তদার ও পাইকারি বিক্রেতারা তা সংগ্রহ করে প্যাকেট করে বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছেন অন্যত্র।

 

মোল্লারহাট বাজার এবং পানিরঘাট বাজারে গিয়ে দেখা যায়, পুরোনো শুকনো বীজ কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। আর কাঁচা নতুন  বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২১০ টাকায়। কানিবগার চরের সয়াবিন চাষি ইসমাইল ব্যাপারী বলেন, ‘আগের বছরের শুকনো বীজের তুলনায় নতুন কাঁচা উৎপাদিত শতভাগ গজায়। যে কারণে দ্বিগুণ দামেও কৃষক কাঁচা সংগ্রহ করেন।

 

চরকাচিয়ায় ২০ একর জমিতে সয়াবিন আবাদ করেছেন শাহজাহান মোল্লা। তিনি জানান, দুই বছর আগেও স্থানীয় কৃষক ও বিএডিসি থেকে বীজ সংগ্রহ করতেন। গত বছর তিনি স্থানীয় এক কৃষকের পরামর্শে কাঁচা সয়াবিন জমিতে বপন করেন, ফলনও হয় ভালো। এ মৌসুমে ২০ একর জমিতে আগাম তা আবাদ করে প্রতি একরে তিনি ১২ মণ করে পেয়েছেন।

 

একই এলাকার সয়াবিন চাষি নুর নবী হাওলাদার জানান, দুই একর জমিতে তিনি আগাম আবাদ করেছেন। কাঁচা বীজ কেজি ২০০ টাকা দরে ৪০০ কেজি বিক্রি করেছেন তিনি। তবে এ বছর চরে কয়েক দফা জলোচ্ছাসের কারণে উৎপাদন কম হয়েছে। তবুও তিনি ২৫ মণ সয়াবিন পেয়েছেন এবং দাম ভালো পাওয়ায় মুনাফা হয়েছে বলেও জানান।

 

নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার বীজ ব্যবসায়ী মহিন হোসেন বলেন, প্রতি টন সয়াবিন ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা দরে ৪ টন ক্রয় করেছেন তিনি। খুচরা বিক্রেতাদের কাছে কেজিতে ৫ টাকা লাভে বিক্রি করছেন।

 

কয়েকজন সয়াবিন চাষি জানান, ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাস তা চাষের প্রধান মৌসুম। এ সময়েই চরের বালুময় মাটি থেকে বীজ ঘরে তোলেন কৃষক। সেটি সপ্তাহখানেক পর আবার মাটিতে বপন করেন কৃষক।

 

উল্লেখ্য, সয়াবিন উৎপাদনে শীর্ষে থাকার কারণে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সরকার উপকূলীয় জেলা লক্ষীপুরের ব্র্যান্ডিং নাম রাখে সয়াল্যান্ড।