ঢাকা, ২৫ নভেম্বর সোমবার, ২০২৪ || ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৭৮১

যেসব কারণে পেঁয়াজের দাম ২০০ টাকা ছাড়াল

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৯:৫১ ১৭ নভেম্বর ২০১৯  

ঢাকায় বাজারে শনিবার সকালের দিকে পেঁয়াজের দাম ছিল কেজিপ্রতি ২২০ টাকার মতো। গেল শুক্রবার যা ছিল ২০০ টাকা। রোববার দিন শেষে তা ২৫০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। পারদ গরম দিলে যেমন এর তাপ বাড়ে, সেরকমভাবেই দিনভর একটু একটু করে পেঁয়াজের দাম বেড়ে চলেছে। 
ঢাকার সুপারশপগুলোতেও ইতিমধ্যেই ২৫০'র উপরে দাম নেয়া হচ্ছে।
গেল সেপ্টেম্বর থেকে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ রাখার পর সরকার বেশ কিছু উদ্যোগের কথা বলেছে। তবে এর দাম কিছুতেই পড়ছে না। আমদানি থেকে শুরু করে বেচাকেনার কয়েক ধাপে কথা বলে বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে দাম না কমার পেছনে কী কী বিষয় কাজ করছে।
ভারত থেকে আমদানি বন্ধই কী একমাত্র কারণ?
পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের একটি সমিতি জানিয়েছে, চাহিদার ৬০% মেটানো হয় দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজ থেকে। বাকি ৪০% আমদানি করা হয়। আর ভারত থেকেই সিংহভাগ আমদানি করা হয়।
মো. রফিকুল ইসলাম রয়েল বেনাপোলের একজন পেঁয়াজ আমদানিকারক। তিনি বলছেন, বাংলাদেশে পেঁয়াজের বাজার অনেকটাই ভারতের ওপর নির্ভরশীল। এ মুহূর্তে ভারত আমাদের তা দেবে না। সেটার কারণে এ অবস্থা। সহসা দাম কমার কোনও সম্ভাবনা নেই।
ভারতকেন্দ্রিক আমদানি যারা করেন, তারা অন্য কোনও জায়গা থেকে পেঁয়াজ আনার ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন আমদানিকারক। 
সম্প্রতি মিশর, পাকিস্তান, চীন, মিয়ানমার, তুরস্কসহ বেশ ক’টি দেশ থেকে মসলাটি আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই কয়েকটি দেশ থেকে কিছু এসেছেও।
রফিকুল ইসলাম বলছেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আনতে যত কম খরচ অন্য যায়গা থেকে আনতে গেলে জাহাজে অনেক বেশি ব্যয়। যেমন ধরেন মিশর বা পাকিস্তান থেকে আনলে দামে কুলাচ্ছে না।
তিনি এর একটা হিসাব দিয়ে বললেন, ভারতে দাম দেয়ার পর বাংলাদেশের ভেতর পর্যন্ত সেটি আনতে খরচ কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ আড়াই টাকা। কিন্তু মিশর থেকে আনতে ধরুন পড়বে ২০ থেকে ২৫ টাকা।
রপ্তানি প্রক্রিয়ায় সময় লাগছে
ঢাকায় মশলা জাতীয় পণ্যের প্রধান আড়ত সদরঘাটের কাছে শ্যামবাজারে। আমাদানিকারকদের কাছ থেকে আনা পেঁয়াজ এখান থেকে ঢাকার বিভিন্ন বড় বাজারে যায়। সেখানে কমিশনিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন মাহবুবুর রহমান বিদ্যুৎ।
তিনি বলছেন, আমরা একটা গ্যাপে পড়ে গেছি। বিভিন্ন বড় আমদানিকারক ভারত ছাড়া অন্য জায়গা থেকে পেঁয়াজ আমদানি করার জন্য এলসি খুলেছে। এলসি খোলা, ওসব দেশে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা, পরে জাহাজে করে আনা এসব তো সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আরও দিন ১৫ সময় লাগবে আসতে। এখন আমাদের কাছে পেঁয়াজ কম।
তিনি বলছেন, ৪/৫দিন ধরে কোনও পেঁয়াজ পাননি। ভারত ছাড়া অন্য দেশগুলো থেকে যতটুকু এসেছে তা যথেষ্ট নয়।
মুনাফার লোভে বাজার নিয়ন্ত্রণ?
শ্যামবাজারের কমিশনিং এজেন্টরা যাদের কাছে আমদানিকারকদের পণ্য বিক্রি করে কমিশন পান তারা হলেন আড়তদার। কাওরানবাজার কাঁচামাল ক্ষুদ্র আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির প্রেসিডেন্ট ওমর ফারুক অভিযোগ করছেন, ইচ্ছা করে বাজারে কম পেঁয়াজ ছাড়া হচ্ছে।
তিনি অভিযোগ করছেন, কিছু ব্যক্তি বিশেষে পেঁয়াজ আমদানি করতে দেয়া হয়েছে। উনারা লাভ না করা পর্যন্ত তা ছাড়বে না। একধরনের সিন্ডিকেট-বাজি হচ্ছে। সেপ্টেম্বর থেকে এখন নভেম্বরের মাঝামাঝি। আমদানিকারক ছাড়া সরকার যদি নিজের উদ্যোগে এতদিন ব্যবস্থা নিতো আর সঙ্গে বেসরকারিভাবে একসঙ্গে কাজ হতো, তা হলে এ অবস্থা হতো না।
ওমর ফারুক বলছেন, মিয়ানমার ও চীন থেকে আনা কিছু পেঁয়াজ তারা পাচ্ছেন। কিন্তু তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। এছাড়া নতুন মৌসুমের দেশি পেঁয়াজ এখনো বাজারে আসতে শুরু করেনি। গত বছরের যে উৎপাদন সেটিই এ মৌসুমে বিক্রি হয়। সেটি পরিমাণে কমে গেছে। অন্যদিকে তারাও মজুদ রেখে বেশি মুনাফা করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি দেশি পেঁয়াজ স্থানীয় পর্যায়েই বেশি দামে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। নতুন পেঁয়াজ আসতে আরও একমাস সময় লাগবে।
ক্রেতা ও খুচরা বিক্রেতার যা দশা
মিরপুরের রূপনগর এলাকার বাসিন্দা স্বপ্না আক্তার এদিন বাজারে গিয়ে খেয়াল করলেন, অনেক বেশি লোক একটু নিম্নমানের পেঁয়াজ কিনছেন। যেগুলো একটু নরম হয়ে যাওয়া এবং উপর থেকে একটু খোসা ছাড়িয়ে বিক্রি হয়।
তিনি বলছেন, দেখলাম যেসব ঘরের লোকেরা এগুলো কেনেন না তারাও আজ এ পেঁয়াজ কিনছেন। অনেক বিক্রেতাও তা পরিমাণে কম এনেছেন। নিজে অন্যসময় যতটুকু কিনতেন এর থেকে কম কিনেছেন।
একজন বিক্রেতা বলছেন, আমরাও পেঁয়াজ কম আনছি। কারণ বিক্রি হচ্ছে কম। যদি দাম আরও বাড়ে, আনার পর বিক্রি না হলে? সেজন্য কম আনছি। আগে ১০০ কেজি নিতাম বেশ কয়দিন ধরে বিক্রি করতাম। কিন্তু এখন ধরেন ২০ কেজি নিচ্ছি।
কী বলছে সরকার?
কৃষিমন্ত্রী ড: আব্দুর রাজ্জাক যথাসময়ে পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে সরকারের দুর্বলতার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলছেন, গত বছর আমাদের আগেই বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। মাঠে অনেক পেঁয়াজ ছিল। এটি সহজেই পচনশীল একটি ফসল। অনেক ক্ষতি হয়েছে। যার জন্য আমাদের ঘাটতি ছিল। আমাদের একটি দুর্বল দিক হলো- আগেই অ্যাসেস করা উচিত ছিল পেঁয়াজের ঘাটতি হবে এবার।
তিনি বলছেন, স্থানীয় যে উৎপাদন হয়েছে সেটি যথেষ্ট নয়। কিন্তু সবচেয়ে সমস্যা করেছে ভারত। তাদের কোনও সমস্যা নাই। তবুও তারা কেন রপ্তানিতে ব্যান দিলো আমি জানি না।
ওদিকে রপ্তানি নিয়ে কথা বলার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হয়েছিলো। বাণিজ্যমন্ত্রী এখন বিদেশে রয়েছেন। আর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব কিছু বলতে রাজি হননি।