ঢাকা, ২৪ নভেম্বর রোববার, ২০২৪ || ১০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
১৭৮৮৭

যে দেশ থেকে যা আমদানি করে বাংলাদেশ

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৯:১৪ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০  

ভারত সম্প্রতি বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে। ফলে হঠাৎ করে দেশে নিত্যপণ্যটির দাম কয়েক গুণ বেড়ে যায়। বাংলাদেশে বাৎসরিক পেঁয়াজের চাহিদার ৪০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। এর ৯৫ শতাংশ আসে ভারত থেকে। মূলত সেজন্যই তারা রপ্তানি বন্ধ করলে দেশের বাজারে দাম বাড়ে।

 

একই ঘটনা ঘটে চিনি, গম, ভুট্টা, মসুর ডাল কিংবা মসলা যেসব দেশ থেকে আসে। তারা রপ্তানি বন্ধ করলে দাম বেড়ে যায়।  যদিও বছরে খাদ্যশস্য ও মসলার যে চাহিদা সেটার প্রায় সবই বাংলাদেশে উৎপাদন হয়। 

 

কিন্তু এর বাইরে একটি বড় অংশের খাদ্যশস্য এবং অন্যান্য পণ্য আমদানি করে সরকার। এর মধ্যে চাল, গম, ভুট্টা, পেঁয়াজ, মসুর ডাল, ছোলা, সয়াবিন তেল, চিনিসহ নানারকম নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য রয়েছে।

 

আমদানিতে শীর্ষে দেশসমূহ

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪ লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকার বেশি পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। এ পণ্যের মধ্যে এক পঞ্চমাংশ নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী। 

 

এর মধ্যে সর্বোচ্চ আমদানি হয় চীন থেকে, মোট আমদানির ২৬ শতাংশের বেশি। তালিকায় এরপরেই রয়েছে ভারত, দেশটি থেকে মোট আমদানির প্রায় ১৫ শতাংশ হয়। পরে যথাক্রমে সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, ব্রাজিল, দক্ষিণ কোরিয়া এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত রয়েছে।

 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, জুলাইয়ে যে খাদ্যসামগ্রী আমদানি করা হয়েছে, সেখানে শীর্ষ ১০টি পণ্যের মধ্যে রয়েছে যথা অপরিশোধিত চিনি, পাম তেল, সয়াবিন তেল, দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য, আদা, মরিচ, গম, চাল, মসুর ডাল ও পেঁয়াজ। এছাড়া রসুন, চা, তেলবীজ এবং হলুদ রয়েছে শীর্ষ খাদ্যসামগ্রী আমদানির মধ্যে।

 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী, ভোজ্য তেল আমদানি হয়েছে ১৪ হাজার ৪৩২ কোটি টাকার, গম ৯ হাজার ৬৪২ কোটি টাকার, চাল ১ হাজার ৪৪ কোটি টাকার, তেলবীজ ৫ হাজার ৪৯২ কোটি টাকার, চিনি ৫ হাজার ৪৩২ কোটি টাকার এবং ৩ হাজার ৪৫৭ কোটি টাকার ডাল জাতীয় খাদ্যশস্য এসেছে।
এছাড়া দেশে ভুট্টা, শুকনো সবজি, আপেল ও সিট্রাস জাতীয় ফল এবং জাফরান ও হলুদসহ বিভিন্ন মসলা আমদানি করা হয়।

 

কোন দেশ থেকে কী আসে?
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) আওতায় নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মধ্যে চিনি, সয়াবিন তেল, পেঁয়াজ, মসুর ডাল, ছোলা, খেজুরসহ বেশ কিছু পণ্য আমদানি করা হয়। এর বাইরে চাল, গম ও ভুট্টার মতো খাদ্যশস্য আমদানি হয় জিটুজি অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের সরকারের চুক্তির মাধ্যমে এবং ব্যক্তি উদ্যোগে।

 

চীন
বাংলাদেশ আমদানির সবচেয়ে বড় অংশটি করে চীন থেকে। প্রধান পণ্যের মধ্যে রয়েছে সয়াবিন তেল ও পাম অয়েল ও গম। পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, এ বছরের জুলাইতে দেশটি থেকে ৮ হাজার ৭৫৯ কোটি টাকার পণ্য আমদানি করা হয়েছে।

 

ভারত
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ভারত থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ। 
দেশটি থেকে যেসব খাদ্যপণ্য আসে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে পেঁয়াজ, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, সূর্যমুখী ও সয়াবিন তেলসহ ভোজ্য তেল, চিনি, মধু, কোমল পানীয়, চিপস, বিস্কুট, চকলেট ও ক্যান্ডি জাতীয় খাবার। দেশে বাৎসরিক পেঁয়াজের চাহিদার ৪০ শতাংশ আমদানি করতে হয়।  যার ৯৫ শতাংশ আসে ভারত থেকে।

 

ব্রাজিল
বিশ্বের নবম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ব্রাজিল থেকে বাংলাদেশে খাদ্যসমাগ্রীর মধ্যে গম, চিনি, মাংস এবং নানাধরণের শুকনো ফল ও মসলা আমদানি হয়।

 

ইন্দোনেশিয়া
বাংলাদেশের পাম তেল আমদানিতে বড় উৎস ইন্দোনেশিয়া। দেশের প্রায় ৮৫ শতাংশ এ তেল আসে দেশটি থেকে। এছাড়া সুগন্ধি চাল এবং মসলা আনা হয় ইন্দোনেশিয়া থেকে।

 

আমদানি নির্ভরতা কেন কমানো যায় না?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সায়মা হক মনে করেন, সরকারের দেশীয় চাহিদা অনুযায়ী বছরের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয় না। ফলে প্রতিবছর দেশে উৎপাদনের পরেও চালের মতো আবশ্যিক খাদ্যশস্যের একটি অংশ আমদানি করতে হয়।

 

তিনি বলেন, এক্ষেত্রে সরকারকে আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রয়োজনে প্রতিটি খাদ্যশস্যের চাহিদা হিসাব করে গবেষণা এবং বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে সরকারকে আমদানি নির্ভরতা কমানোর জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করতে হবে।

 

গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনও আমদানি নির্ভরতা কমাতে সরকারের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার কথা বলেছেন। তবে কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমকে মেনে নিয়েই সামনে এগোতে হবে। এক্ষেত্রে চীনের উদাহরণ দেন।

 

তিনি বলেন, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ প্রায় ১৩ হাজার মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এখন দেশের সঙ্গে দেশটির শিগগির বাণিজ্যে সমতা আনা সম্ভব হবে না। কিন্তু যদি আমরা চীনের প্রয়োজন মাথায় রেখে রপ্তানি বাড়াতে পারি, তাহলে বাণিজ্য ঘাটতি কমবে।