ঢাকা, ২৬ নভেম্বর মঙ্গলবার, ২০২৪ || ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
১০৮৫

রাজশাহীতে ২০০ কোটি টাকার খেজুর গুড় উৎপাদনের আশা

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২১:৩০ ১১ ডিসেম্বর ২০১৮  

প্রকৃতিতে এখন শীতের আগমনী বার্তা। শীতে অন্যতম আকর্ষণ খেজুর রস ও গুড়। আর এর সঙ্গে রয়েছে গুড়ের তৈরি পিঠা-পায়েস।

 

তাই রাজশাহী অঞ্চলের বিভিন্ন উপজেলার গ্রামগুলোতে গাছিরা খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

 

রস সংগ্রহের জন্য এরইমধ্যে অধিকাংশ গাছ তৈরি করা হয়েছে। কিছু গাছ থেকে স্বল্প পরিমাণ রস সংগ্রহও করা হচ্ছে।  এরইমধ্যে এ বিষয়টি কেন্দ্র করে গ্রামাঞ্চলগুলোতে শুরু হয়েছে উৎসব আমেজ।

 

আর এ শীত মৌসুমে সংগৃহীত রস থেকে রাজশাহীতে প্রায় ২০০ কোটি টাকার গুড় উৎপাদনের প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এর ফলে চাঙা হয়ে উঠবে গ্রামীণ অর্থনীতি।

 

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, গাছ তৈরি, রস সংগ্রহ, গুড় তৈরি, বাজারজাত আর পরিবহনসহ - সব মিলিয়ে একলাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

 

রাজশাহীর চারঘাট, বাঘা, পুঠিয়া, দুর্গাপুর এবং পবা উপজেলায় রয়েছে সবচেয়ে বেশি খেজুর গাছ। এ পাঁচটি উপজেলায় খেজুর গাছের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪ লাখ।

 

রস সংগ্রহের প্রস্তুতিপর্ব হিসেবে গাছিরা গাছের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় বর্তমানে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

 

চারঘাট উপজেলার সারদা এলাকার চাষী মোহাম্মদ করিম বলেন, আমার জমির আইল এবং পুকুরপাড়ে দেড়শ’ খেজুর গাছ আছে। এরইমধ্যে ৫০টি গাছ রস সংগ্রহের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।

 

বাকি গাছগুলোও প্রস্তুতের প্রক্রিয়া চলছে। আর কয়েক দিনের মধ্যে এ কাজ শেষ হবে। ইতিমধ্যে কয়েকটি গাছ থেকে স্বল্প পরিমাণে রস সংগ্রহ শুরু হয়েছে।

 

তিনি বলেন, গত শীত মৌসুমে দেড়শ’ গাছের রস থেকে গুড় তৈরি করে প্রায় চার লাখ টাকা আয় হয়েছে। অথচ খেজুর গাছের পরিচর্যার জন্য ব্যয় করতে হয়নি। এছাড়া ৩০ জন মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। বাজারে গুড়ের দাম ভালো থাকলে এবারও চার লাখ টাকা আয় হবে বলে আমি আশাবাদী।

 

দুর্গাপুর উপজেলার কানপাড়া এলাকায় গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত গাছি শফিকুল ইসলাম বলেন, অক্টোবরের শেষ থেকে মার্চ মাসের মাঝামাঝি প্রায় সাড়ে চার মাস গাছ থেকে রস সংগ্রহ করি। একেকজন গাছি প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০টি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন।

 

তিনি বলেন, গাছ পরিচর্যা এবং রস সংগ্রহের জন্য গাছের মালিক প্রতিদিন প্রায় ৩শ’ টাকা পারিশ্রমিক দেন। মাত্র কয়েক ঘণ্টা কাজ করে আমরা এ টাকা উপার্জন করি। আমার মতো রাজশাহীর অন্য অঞ্চলের কয়েক হাজার গাছির শীত মৌসুমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়।

 

পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর এলাকার দিলরুবা খাতুন খেজুর রস থেকে গুড় তৈরি করেন।

 

তিনি বলেন, দু’ সপ্তাহ পর থেকে গুড় তৈরি শুরু হবে। এজন্য পারিশ্রমিক হিসেবে ৫শ’ টাকা দেন মালিক। এর মাধ্যমে আমার মতো অনেক নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে।

 

রাজশাহীর দুর্গাপুর সদর, ওই উপজেলার কানপাড়াহাট, সিংগাহাট, পুঠিয়ার বানেশ্বর, চারঘাট এবং পবা উপজেলা সদরের মোকামগুলোতে গুড় বিক্রি করা হয়। গ্রামাঞ্চল থেকে এসব মোকামে গুড় পরিবহনের জন্য ব্যবহার করা হয় ভ্যান।

 

এর ফলে কয়েক হাজার ভ্যানচালকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি মোকামগুলো থেকে ট্রাকে করে ঢাকা এবং চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয় গুড়। এ কারণে গুড় মৌসুমে জমজমাট হয়ে ওঠে ট্রাক মালিকদের ব্যবসা।

 

চারঘাট উপজেলার মুক্তারপুর এলাকার চাষী আবদুল হাকিম বলেন, রস এবং গুড় ছাড়াও খেজুর গাছের পাতা দিয়ে মাদুর তৈরি ও জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হয়। টিনের চালা ঘরের তীর তৈরিতেও খেজুর গাছ অনন্য।

 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর রাজশাহীর উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালী জানান, শীত মৌসুমের সাড়ে চার মাসে একটি গাছ থেকে প্রায় ২০ থেকে ২৫ কেজি গুড় উৎপাদন হয়।

 

এ অঞ্চলে ২শ’ কোটি টাকার গুড় উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এ মৌসুমেও খেজুরের গুড়কে কেন্দ্র করে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি রাজশাহী অঞ্চলের অর্থনীতি চাঙা হয়ে উঠবে। খেজুর গুড় তৈরীর এ উৎসব সবার জন্যই এখন আনছে সুখের বারতা।