ঢাকা, ১২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার, ২০২৪ || ২৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৬২৫

রিক্সাচালকের প্রেসক্রিপশন 

ড. মুনীরউদ্দিন আহমদ

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৩:৫৯ ১৭ জুলাই ২০২০  

বছর দুয়েক আগে আমার ফুলার রোডের বাসা থেকে রিক্সায় মোকাররম ভবনে যাচ্ছিলাম। এলার্জির কারণে আমার প্রায় সর্দিকাশি হয়। রিক্সায় বসে কাশছিলাম।

রিক্সাওয়ালা জিজ্ঞেস করল - স্যারের শরীর খারাপ?

বললাম- হ্যাঁ, সকাল থেকে শরীরটা একটু খারাপ।

রিক্সাচালক বলল - স্যার,  জি-ম্যাক্স (অ্যাজিথ্রোমাইসিন) খান। আমি সর্দি-কাশি-জ্বর হলে ওষুধটি খাই। আপনি খেয়ে দেখেন। তিন দিনেই ভালো হয়ে যাবেন।

 

অ্যাজিথ্রোমাইসিন হলো ব্রোড স্পেকট্রাম অ্যান্টিবায়োটিক এবং এটি একটি প্রেসক্রিপশন ড্রাগ। একজন রিক্সাচালক আমাকে সর্দিকাশির জন্য একটি ব্রোড স্পেকট্রাম অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে। বাকি পথটুকু ওর ডাক্তারি বিদ্যা নিয়ে আর কিছু না বলে গভীরভাবে ভাবতে ভাবতে অফিসে পৌঁছালাম।

 

ভাবছিলাম- এত বছর কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে পড়াশোনা করে কেন ফার্মাসিস্ট হলাম, আর কেনই বা এত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টারি করে সময় নষ্ট করলাম। রিক্সাচালক হলেই তো ওষুধ বিশেষজ্ঞ হয়ে যেতে পারতাম।


আমার ইদানীং মনে হয়, বাংলাদেশে রোগ ও ওষুধ বিশেষজ্ঞ হওয়ার জন্য ফার্মাসিস্ট ও চিকিৎসক হওয়ার দরকার নেই। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই জন্ম গ্রহণ করে রোগ ও ওষুধ বিশেষজ্ঞ হয়ে।

 

আমার এই ধারণাটি একদম পাকাপোক্ত হয়ে গেছে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে। গতকাল লন্ডন প্রবাসী আমার এক আত্মীয় সাংবাদিক  করোনা সংক্রমণ ও তার ওষুধ নিয়ে একটু আলাপ করতে চেয়ে ম্যাসেন্জারে সময় চাইলেন।

 

আমি তাঁকে লিখেছি - করোনা ও তার ওষুধ সংক্রান্ত কোনো জ্ঞানই আমার নেই। যা ছিল সব বিলীন হয়ে গেছে। প্রতিদিন যে হারে করোনার ওষুধ ও ভ্যাক্সিন আবিষ্কার হচ্ছে, তা মনে রাখা আমার পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছে না। তাই এসব নিয়ে আমি ইদানীং আর ভাবছি না। গত চার মাস ধরে আমার ব্রেনের ওপর অনেক চাপ গেছে। আর নয়। সেজন্য আমি এখন আর কোনো সাংবাদিকের সাথে কথা বলি না, কোনো টক শো'তে অংশ নিই না। আমি দেখেছি, এদেশে সত্যি কথা যারা বলে, মানুষ ভাবে- তারা চেতনায় বিশ্বাসী নয়, দেশ প্রেমিকও নয়।


স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষ স্বাধীনভাবে যা ইচ্ছা বলুক, লিখুক, আর যার ইচ্ছা শুনুক, গিলুক, তাতে কার কী আসে যায়!


আজ বিশ্ববিখ্যাত নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকার এক খবর পড়লাম। প্রতিবেদনটি পড়ে খারাপ লাগার কথা থাকলেও একটুও বিব্রতবোধ করিনি। কারণ আমার চেতনা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আমি জানি এদেশের মানুষ কী ধাতু দিয়ে গড়া।

 

পত্রিকাটি বাংলাদেশকে দশ হাজারেরও বেশি ভুয়া করোনা সার্টিফিকেট প্রদানকারী দেশ হিসেবে বিশ্বদরবারে পরিচয় করে দিয়েছে। ভুয়া সার্টিফিকেট প্রদানকারী গ্রেপ্তারকৃত আরও কয়েকজনের কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বিশ্বের আর কোনো দেশে করোনার ভুয়া সার্টিফিকেট প্রদানের খবর আমি এখনো শুনিনি। অথচ আমরা নাকি উন্নতি অগ্রগতির দিক থেকে সিংগাপুর কানাডাকে ছাড়িয়ে গেছি।

 

মনে রাখা দরকার- বিশ্বে আমাদের চেয়েও অনেক দরিদ্র দেশ রয়েছে। ওসব দেশের মানুষের আমাদের মতো এত অধঃপতন হয়নি, কখনো হবেও না। 

মুক্তমত বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর