ঢাকা, ২৪ নভেম্বর রোববার, ২০২৪ || ১০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৮১০

শব্দের চেয়ে ৫ গুণ দ্রুত বিমান তৈরিতে হাড্ডাহাড্ডি প্রতিযোগিতা!

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৯:৫৭ ৪ সেপ্টেম্বর ২০২০  

‘আমার চাকরি জীবনের একটা বড় অংশ কেটেছে দ্রুতগতিতে উড়তে পারে-এমন সব বিমান তৈরি করে’ বলছেন অ্যাডাম ডিসেল। তিনি ব্রিটিশ কোম্পানি রিঅ্যাকশন ইঞ্জিন-এর যুক্তরাষ্ট্র শাখার প্রধান।

এ কোম্পানি একটি হাইপারসোনিক বিমান তৈরি করছে, যেটি শব্দের চেয়েও পাঁচগুণ দ্রুতগতিতে উড়তে পারে। অর্থাৎ বিমানটি মাক-৫ বা প্রতিঘণ্টায় ৬,৪০০ কিলোমিটার পথ উড়তে পারবে। মাক-১ হচ্ছে গতিমাপক সংখ্যা। শব্দ প্রতিঘণ্টায় ১২৩৫ কিলোমিটার পথ উড়ে যেতে পারে।

এদের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে একটি যাত্রীবাহী বিমান তৈরি করা। লন্ডন থেকে সিডনি যেতে যেটির সময় লাগবে মাত্র চার ঘণ্টা। এখন সময় লাগে ২১ ঘণ্টারও বেশি। লস অ্যাঞ্জেলস থেকে টোকিও যেতে এ বিমানের সময় লাগবে মাত্র দুই ঘণ্টা।

তবে হাইপারসোনিক বিমান তৈরির গবেষণার বেশিরভাগ চলছে বেসরকারি বিমান নয়, জঙ্গীবিমান তৈরির লক্ষ্যে।

জেমস অ্যাকটন হলেন ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস-এর পদার্থবিজ্ঞানী। তিনি বলছেন, হাইপারসোনিক অস্ত্র তৈরিতে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন বিভিন্ন ধরনের নকশা নিয়ে কাজ করছে।

মাক-৫ গতিতে একটি বিমান উড়ে গেলে যে পরিমাণ তাপ তৈরি হবে, তা সহ্য করতে পারে-এমন উপকরণ তৈরির গবেষণা চলছে। বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করছেন, এর সঙ্গে তাল মেলাতে পারে এমন প্রযুক্তি তৈরি করতে। এসব হিসাব মিলে গেলেই পৃথিবীর ভূমণ্ডলের ভেতর দিয়ে শব্দের চেয়ে পাঁচগুণ গতিতে উড়ে যাওয়া সম্ভব হবে।

তবে হাইপারসোনিক বিমান তৈরির চেষ্টা নতুন নয়। সেই ১৯৬০ সালে এক্স-১৫ নামে  হাইপারসোনিক রকেট তৈরি করে আমেরিকা। আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র যাকে আইসিবিএম বলা হয়, সেগুলো যখন মহাকাশ থেকে আবার বায়ুমণ্ডলে ফিরে আসে, তখন সেটির হাইপারসোনিক গতি থাকে।

এখন বিশ্ব পরাশক্তিগুলো এমন অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে, যেটি বায়ুমণ্ডলের ভেতর দিয়ে উড়ে যেতে পারবে। উচ্চতাপ থেকে রক্ষার জন্য একে আর মহাশূন্যে পাঠানোর প্রয়োজন হবে না। আর এ অস্ত্র দিয়ে শুধু শহর নয়, যেসব লক্ষ্যবস্তু নড়াচড়া করতে পারে, সেটিকেও আঘাত করা সম্ভব হবে।

লক্ষ্য: বিমানবাহী রণতরী

হাইপারসোনিক গবেষণায় অগ্রবর্তী তিনটি দেশ এ খাতে বিপুল সামরিক বরাদ্দ ব্যয় করছে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগনে সংবাদ ব্রিফিং-এ মার্কিন প্রতিরক্ষা বাহিনীর হাইপারসোনিক গবেষণা বিভাগের উপপরিচালক মাইক হোয়াইট জানান, প্রতিপক্ষ শক্তি তাদের শ্রেষ্ঠত্বকে চ্যালেঞ্জ করছে। আর এটাই এ খাতে মার্কিন গবেষণাকে গতিশীল করছে।

হাইপারসোনিক মিসাইল তৈরির মূল সমস্যা লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত করার সঠিকত্ব। আর ঠিক এ কারণেই চীনের হাতে হাইপারসোনিক ক্ষেপণাস্ত্র থাকলে মার্কিন বিমানবাহী রণতরীগুলোকে চীনা উপকূল অনেক দূরে রেখে চলাচল করতে হবে।

হাইপারসোনিক মিসাইল যখন উড়ে যেতে থাকে, তখন তাপমাত্রার কারণে মিসাইলের চারপাশে একটা গ্যাসের প্লাজমা আবরণ তৈরি হয়। এজন্য মিসাইলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটে। সামরিক যোগাযোগের স্যাটেলাইট মিসাইলকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। লক্ষ্যবস্তু যদি চলমান হয়, তাহলে মিসাইল আর লক্ষ্যভেদ করতে পারে না।

হাঙ্গরমুখো মিসাইল

হাইপারসোনিক মিসাইলের আরেকটি বড় সমস্যা রাসায়নিক পরিবর্তন। অতি দ্রুতগতি এবং উচ্চ তাপমাত্রার ফলে অক্সিজেনের অণুগুলো ভেঙে পরমাণুতে পরিণত হয়। সেটা মিসাইলের ইঞ্জিনের দক্ষতাকে অনেকখানি কমিয়ে ফেলে। কিন্তু এরপরও হাইপারসোনিক গবেষণায় নাটকীয় অগ্রগতি হয়েছে। 

যুক্তরাষ্ট্র ২০১০ সালে প্রশান্ত মহাসাগরে হাঙ্গরের মুখের মতো দেখতে এক্স-৫১ হাইপারসোনিক মিসাইলের পরীক্ষা চালিয়েছে। এটি পাঁচ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে হাইপারসোনিক ছিল।
মিসাইলটি অনেক উঁচু দিয়ে উড়ে যাওয়া একটি বি-৫২ বম্বার থেকে ছোঁড়া হয়। এর সঙ্গে লাগানো ছিল একটি বুস্টার রকেট। যেটি প্রথম ধাপে মিসাইলটিকে ৪.৫ মাক গতি এনে দেয়। এরপরই সেটির নিজস্ব ইঞ্জিন চালু হয় এবং গতি আরও বেড়ে যায়।

হাইপারসোনিক বিমানের গবেষণায় এসব সমস্যা দূর হলেই আগামী ১৫ বছরের মধ্যে যাত্রীবাহী বিমান আকাশে পাখা মেলবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা। হাইপারসোনিক বিমানে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভিআইপিরা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে পারবেন। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে চায় মার্কিন বিমানবাহিনী। তারা বিশেষভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্য হাইপারসোনিক বিমান তৈরি করতে চায়।

সেজন্য বিমান বাহিনী অ্যাটলান্টা-ভিত্তিক একটি কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্য ২০ জন যাত্রীবাহী বিমান নির্মাণের সম্ভাবনা পরীক্ষা করে দেখবে তারা। মাক-৫ গতিতে আকাশে উড়বে যে স্বল্প ক'জন ভাগ্যবান তার সঙ্গে যুক্ত হবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের নাম।