ঢাকা, ২৬ নভেম্বর মঙ্গলবার, ২০২৪ || ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৬৯৫

শীতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ান এসব উপায়ে

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২১:২৭ ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯  

সীমান্তের সৈন্যদলের মতোই এরা নাওয়া-খাওয়া ভুলে দিনরাত পাহারাদারি করে। শত্রু দেখলেই দল বেঁধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শত্রুকে ঘায়েল করে। কিন্তু যখন হেরে যায়, তখনই অসুখ বিসুখ নাস্তানাবুদ করে ফেলে। শরীরের ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এমনই এক সেনাদল। এ সিস্টেম জোরদার হলে ক্যানসারসহ অনেক অসুখ বিসুখকেই দূরে সরিয়ে রাখা যায় অনায়াসে।
ক্রিটিক্যাল কেয়ার স্পেশালিষ্ট পুষ্পিতা মণ্ডলের মতে, ইদানীং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের ফলে বাড়তি ওজনের বোঝা বইতে হচ্ছে। নানা অসুখ বিসুখের মুলে আছে ওবেসিটি। তাই রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বাড়ানোর প্রথম শর্ত-ওজন স্বাভাবিক রাখার জন্য সঠিক খাবার খাওয়া এবং নিয়মিত শরীরচর্চা করা। এই অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে ছোটবেলা থেকেই।
রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থার খুঁটিনাটি
শরীরের বিভিন্ন কোষ, টিস্যু ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নির্দিষ্ট নিয়মে বাইরের যেকোনও বিরূপ ঘাত-প্রতিঘাত থেকে আমাদের রক্ষা করে। এ সম্পূর্ণ সিস্টেমের ডাক্তারি নাম ‘ইমিউনিটি সিস্টেম’। এর বেশ কয়েকটি ভাগ আছে যেমন সারফেস বেরিয়ার, ইনেট ইমিউন সিস্টেম, কমপ্লিমেন্ট সিস্টেম, অ্যাডাপ্টিভ ইমিউন সিস্টেম ইত্যাদি।
সারফেস বেরিয়ারের প্রথম সৈন্যদল হলো ত্বক। বাইরের পরিবেশের  ঘাত-প্রতিঘাত থেকে আমাদের রক্ষা করে শরীরের সবচেয়ে বড় অঙ্গ ত্বক। গরম, ঠাণ্ডা, ধুলো, দূষণসহ নানা জীবাণু শরীরে প্রবেশ করতে বাধা দেয় এ অতি বিশ্বস্ত পাহারাদার। ইনেট ইমিউন সিস্টেম হলো কোনও মাইক্রো-অরগ্যানিজম বা টক্সিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তাদের শরীর থেকে দূর করে দেয়া। কমপ্লিমেন্ট সিস্টেমের অন্যতম লিউকোসাইট বা শ্বেতকণিকা। এরা সদা জাগ্রত পাহারাদার। বাইরের শত্রু প্রবেশ করলেই রে রে করে তেড়ে যায়। এছাড়া আমাদের ইমিউন সিস্টেমের মধ্যে আছে ডেনড্রাইটিক সেল, কিলার টি সেল ইত্যাদি।
স্ট্রেস বাড়লেই কমজোরি
কখনও রাস্তাজুড়ে মিটিং-মিছিল, কখনও ট্রেন-বাস অবরোধে গন্তব্যে পৌঁছনো নিয়ে দুশ্চিন্তা। সব মিলিয়ে শরীর মনের স্ট্রেস বাড়ে শিশু থেকে বড় সবারই। রাতের ঘুমটুকু ছাড়া বিশ্রামের তেমন ফুরসত নেই। তাও পর্যাপ্ত ঘুম হয় না অনেকেরই। এর নিট ফল পড়ে আমাদের শরীরের পুরো সিস্টেমের উপর।
গবেষণায় জানা গেছে, লাগাতার মানসিক চাপের ফলে স্ট্রেস হরমোন গ্লুকোকর্টিকয়েডস নিঃসরণ বেড়ে যায়। এর ফলে আমাদের শরীরের রক্ষাকর্তা লিম্ফোসাইট উৎপাদনকারী থাইমাসের কাজ ব্যহত হয়। ফলশ্রুতিতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়। শিশু থেকে বয়স্ক সবারই বাড়তি স্ট্রেস ইমিউনিটি কমিয়ে দিয়ে নানা অসুখ ডেকে আনে।
উপায়
স্ট্রেস কমাতে নির্দিষ্ট সময় কাজের পর গান শোনা বা আড্ডা দেয়া অথবা গল্পের বই পড়া এবং পোষ্যর সঙ্গে সময় কাটানো যেতে পারে। এছাড়া নিয়ম করে আট ঘণ্টা ঘুমোন জরুরি। ঘুম কম হলেও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে।
সাইটোকাইনস ও হোয়াইট ব্লাড সেল বাড়ানোর উপায়
ভাবছেন এরা আবার কারা! অসুখ নামক জঙ্গী দমনের অন্যতম অস্ত্র এরা। আর এদের শক্তি বাড়ানোর উপায় খুব কঠিন নয়। সপ্তাহে কমপক্ষে পাঁচ দিন দৈনিক আধ ঘণ্টা অর্থাৎ সপ্তাহে সর্বসাকুল্যে ১৫০মিনিট শরীরচর্চা, মর্নিং বা ইভিনিং ওয়াক করতেই হবে। এর সঙ্গে নিয়ম করে মিনিট পাঁচেক মেডিটেশন করতে পারলেই কেল্লা ফতে! আর আছে কিছু ইমিউনিটি বুস্টার খাবারদাবার।

চিকিৎসক পুষ্পিতা মণ্ডলের কথায়, ভিটামিন সি, বায়ো ফ্ল্যাভোনয়েডস, ফাইটোকেমিক্যালসহ বেশ কিছু অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে পারে। আমলকি, কমলালেবু, বাতাবিলেবুসহ সব ধরনের লেবু জাতীয় ফলে ভিটামিন সি আছে। এছাড়া রঙিন টাটকা শাক-সব্জি, তাজা ফল, বাদাম, চিকেন, মাছ, দুধ, ডিমসহ সব খাবারেই আছে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, মিনারেলস ও অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। তবে ভাজা, তেল, ঝাল-মশলা সহযোগে রান্না করে খাবারের গুণ নষ্ট না করাই ভালো। নিয়ম করে চিনি ছাড়া দইও খাওয়া দরকার। বাদ দেন প্রক্রিয়াজাত খাবার, বাক্সবন্দি প্রিজারভেটিভ দেয়া, কৃত্রিম রং ও অ্যাডিটিভ যুক্ত খাবার। বিশেষ করে শীতে সুস্থ থাকতে এসবের বিকল্প নেই।