ঢাকা, ২১ নভেম্বর বৃহস্পতিবার, ২০২৪ || ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৩৮৯

`শেষ হইয়া হইল না শেষ`-শিক্ষাক্রম নিয়ে আরো দুটি কথা

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২২:৪১ ৬ ডিসেম্বর ২০২৩  

শিক্ষা ব্যবস্থা সে যেই মডেলেরই হোক, তার বাস্তবায়ন, উদ্দেশ্য সাধন এবং সফলতার মূল উৎপাদক শিক্ষকরা। তাই প্রাথমিক বিবেচনাই হচ্ছে শিক্ষকদের মান। সমস্ত শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা  রেখেই প্রশ্ন রাখছি , আমাদের শিক্ষক সমাজের শতকরা কত অংশের সেই যোগ্যতা আছে?

 

শিক্ষকতা আমাদের দেশের লোভনীয় কোন পেশা নয়। পছন্দের চাকরির তালিকায় এর অবস্থান একেবারে তলায়। কেউ শিক্ষক হবার স্বপ্ন দেখেনা - সাধারণত যার কোন গতি হয় না সেই শিক্ষকতা করে। অনিচ্ছা ও অগত্যার এই শিক্ষাদানের কারণেই আজ দেশে কোচিং ব্যবসার এত রমরমা। 

 

এরপর আসে শিক্ষকদের শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের প্রসঙ্গ। এদেশে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষকদের জন্য প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট এবং মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের জন্য টিচার্স ট্রেনিং কলেজ কিন্তু আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার কাঠামোর মধ্যেই আছে। 

 

আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে share করছি - ষাটের দশকে আমার পিতৃদেব প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের প্রধান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এর অধীনে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল, যাকে বলা হতো Experimental School. আমি নিজে সেই স্কুলে দুই বছর পড়াশোনা করেছি এবং বলতে পারি এই দুই বছর আমার শৈশবের স্মরণীয় এবং আনন্দময় সময় ছিল।

 

হাতের কাজ (চারু ও কারুকলা), সংস্কৃতি চর্চা (নাচ গান আবৃত্তি),  প্রকৃতি পাঠ, ছোট আকারে কৃষি কাজ- এর সবই কিন্তু আমাদের শিক্ষাক্রমে অন্তর্ভুক্ত ছিল। শিক্ষকরা আমাদের সাথে মজা করেছেন, ছড়া কেটে অংক শিখিয়েছেন, পাঠ্য বইয়ের গল্প কবিতা আমাদের দিয়ে অভিনয় করিয়েছেন।

 

বাগানে নিয়ে দেখিয়েছেন ফুলের কয়টি অংশ, কিভাবে মৌমাছি প্রজাপতি দিয়ে পরাগায়ণ হয়, পুকুর পাড়ে নিয়ে বুঝিয়েছেন হাঁসেরা কিভাবে তাদের খাবার সংগ্রহ করে। আমাদের স্কুলের আশেপাশের গাছের নাম শিখিয়েছেন, পাখি এবং পাখির ডাক চিনতে শিখিয়েছেন।

 

তাদের তত্ত্বাবধানে আমরা ক্লাস রুম ভরে ছবি এঁকেছি, কাদামাটি কাদামাটি নিয়ে খেলেছি , ছোট ছোট খন্ড জমিতে ক্লাসভিত্তিক সবজি বাগান করেছি।আমার মনে প্রশ্ন জাগে সেই সব ট্রেনিংপ্রাপ্ত শিক্ষক আজ কোথায়? আমি জানি প্রশিক্ষণ ছাড়া কেউ শিক্ষক হতে পারেন না। তাহলে তারা তাদের সেই প্রশিক্ষণ কাজে লাগাচ্ছেন না কেন?  এই প্রশ্নটার উত্তর আগে খোঁজা প্রয়োজন। 

 

আসলে শিক্ষক নিয়োগে প্রাথমিক বিবেচনা হওয়া উচিত aptitude and dedication.   এরপর আসে প্রশিক্ষণের প্রশ্ন। এই প্রশিক্ষণ যেন আবার শিক্ষকদের মুখস্ত করানো না হয়। তাদেরপড়াতে হবে শিশু মনোবিজ্ঞান,  বোঝাতে হবে শিশু মনস্তত্ত্ব । তাহলে শিশুদের  আনন্দদায়ক পাঠদানের কলাকৌশল তারা নিজেরাই উদ্ভাবন করে নিতে পারবেন। তা নাহলে এই গুড়েও বালি।

 

লেখক: আনহারুল হক

সাবেক মেরিন ইন্জিনিয়ার, বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি

মুক্তমত বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর