ঢাকা, ২৪ নভেম্বর রোববার, ২০২৪ || ১০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৪৮৭

সবাই আমার বাসার দিকে, কেমন একটা চোখ নিয়ে তাকাতে থাকলো

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ০৯:৪৮ ২৬ এপ্রিল ২০২০  

আহাদ হোসেন টুটুল :  ১৪ দিন শেষে, আজ থেকে মহান আল্লাহ তায়ালা আমাকে মুক্তি দিয়েছেন। ১১ এপ্রিল প্রচণ্ড জ্বর আর মাথা ব্যথা নিয়ে যখন সন্দেহবশত টেস্ট করাতে যাই, তখন ঘুর্ণাক্ষরেও ভাবিনি এতো এতো সতর্ক থাকার পরেও আমার কোভিড-১৯ পজিটিভ আসবে। কিন্তু এসেছে  ...

 

১১ এপ্রিল সন্ধ্যা ৬:২৪ মিনিটে যখন ফোনে এসএমএস আসলো, এক মূহুর্তের জন্য আমি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। দ্রুত মেয়ে আর তার মাকে দূরে সরে যেতে বললাম। বন্দি হলাম একা একটা রুমে। মাগরিবের নামাজ পড়ে, অফিসে জানালাম। সবাই সাহস দিল‌। একটাই কথা, মনোবল হারানো যাবে না।

 

মূহুর্তেই খবরটা ছড়িয়ে গেল। পরিচিত অপরিচিত অনেক ফোন আসতে শুরু করল। স্তব্ধতাই এতোটাই ডুবে গিয়েছিলাম যে, কারো ফোন রিসিভ করতে পারছিলাম না। তথ্য জানাতে শুধু আমার প্রতিষ্ঠানের এমডি, সিইও, নিউজ হেড আর অ্যাসাইনমেন্ট এডিটরের সঙ্গে কিছু কথা শেয়ার করলাম। কারণ সিদ্ধান্ত, অফিসে কারা আমার সাথে মিশেছে, তাদের আলাদা করতে হবে।


এরপরই শুরু হলো, আমার এক কক্ষে ১৪ দিনের জীবন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আর দোয়ার পাশাপাশি, নিয়ম মেনে ১৫ দিনের ওষুধ চলতে থাকলো। অনেক শুভাকাঙ্ক্ষির পরামর্শ অনুযায়ী গরম পানি খাওয়া, গরম পানিতে লবণ লেবু দিয়ে গারগল করা, গরম পানির স্টিম নাক দিয়ে নিয়ে মুখ দিয়ে ছাড়া আর আদা-লেবু-গোলমরিচ-লবঙ্গ দিয়ে গরম পানি চায়ের মত করে খাওয়া চলতে থাকলো।

 

বিভীষিকার দিন ছিল, পরদিনই যখন থানা থেকে আমার এলাকা লকডাউন করতে এলো। সবাই আমার বাসার দিকে, কেমন একটা চোখ নিয়ে তাকাতে থাকলো। যেন কোনো মারাত্মক অপরাধ করে ফেলেছি। কৃতজ্ঞতা এসআই মেহেদীর প্রতি, তিনি হ্যান্ডমাইকে এলাকায় ঘোষণা দিলেন - কোনো ধরনের হ্যারাসমেন্ট করা হলে ব্যবস্থা নিবেন।

 

১৪ দিনের এই সময়ে অনেকেই ফোন দিয়ে সাহস দিয়েছেন। পরিবার, সহকর্মী, বাড়ির মালিক, প্রিয় সংগঠনের বড় ভাইয়েরাসহ অনেক শুভাকাঙ্ক্ষি খোঁজ নিয়েছেন। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আবার অনেকেই অনেক কাছে থেকেও খোঁজ নেননি, ভালবাসা তাদের প্রতিও। অন্তত আগামী দিনগুলোর জন্য দোয়া করবেন।

 

আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর অশেষ রহমত এবং আপনাদের সবার দোয়ায় ১৪ দিন শেষে আমার কোভিড-১৯ রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে।

 

আজ দ্বিতীয়বার স্যাম্পল নিয়ে গেছে আইইডিসিআর। ইনশাআল্লাহ, দ্বিতীয়বার রিপোর্ট পাওয়া শেষে অচিরেই কাজে যোগ দিতে পারবো।

 

আহাদ হোসেন টুটুল : সিনিয়র ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট, দীপ্ত টেলিভিশন। 

মিডিয়া বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর