ঢাকা, ১২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার, ২০২৪ || ২৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
১০২৬

সম্পর্কের মন্ত্রবীজ

আজমেরিনা শাহানি

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৮:৩৬ ১ ফেব্রুয়ারি ২০২১  

‘সম্পর্ক’ শব্দটার অর্থ অনেক গভীর আর আবেগময়। তবে এই গভীরতা আর আবেগকে বাস্তবে স্থায়ী ও জীবন্ত করতে হলে সম্পর্কের পরিচর্যা অত্যন্ত জরুরি। রক্তের সম্পর্ক ছাড়াও জীবনে চলার পথে আমাদের বন্ধু-বান্ধব, প্রতিবেশী, সহপাঠী, সহকর্মী, শুভাকাঙ্খী এবং পারিবারিক ও সামাজিক পরিমন্ডলে অন্যান্য অনেক প্রিয় মানুষদের সংস্পর্শে আসতে হয় এবং মনের অজান্তেই আমরা এক মধুর সম্পর্কে জড়িয়ে যাই।

 

তবে সব সম্পর্কই স্থায়ী হয় না। কেননা, সস্পর্ক গড়ে তোলা যতটা সহজ, তা ধরে রাখা ততটাই কঠিন। 

 

সম্পর্ক জিনিসটা আসলে একটা চারা গাছের মতো। নিয়মিত জল, আলো আর হাওয়া দিয়ে যেমন আমরা একটা চারাগাছের যত্ন নিয়ে থাকি, তাকে একটু একটু করে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে থাকি, তেমনি যে কোন একটা সম্পর্কেরও নিয়মিত পরিচর্যা জরুরি।

 

প্রয়োজন এক নিবিড় যত্ন আর অকৃত্রিম ভালোবাসার। শুধু প্রয়োজন হয়ে নয়, প্রিয়জন হয়ে সুখে-দুখে, বিপদে-আপদে, প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে প্রিয় মানুষগুলোর নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখা, তাদের প্রয়োজনে নির্ভরতা হওয়া, চরম বিপর্যয়ের দিনে ছায়া হয়ে আগলে রাখাটা যেন সেই চারাগাছে জল, হাওয়া যোগান দেবার মতই।

 

তবে কোন সম্পর্ক থেকে যদি অভিমান-অভিযোগ, রাগ-ক্ষোভ, আবদার-অনুযোগ, আবেগ ও আকাঙ্খা বাদ দেয়া হয়, তবে সে সম্পর্কের মধ্যে আর যা-ই থাকুক না কেন, ভালোবাসা কতটুকু থাকে, তা নিয়ে সংশয় থেকিই যায়!

 

অভিমান, আবদার, আবেগ ও আকাঙ্খা ছাড়া কোন অকৃত্রিম ও হৃদয় নিঃসৃত ভালোবাসা কখনোই পূর্ণতা পায়না। যাপিত জীবনে আমরা অনেকেই এমন কিছু সম্পর্ক বহন করে চলি, যাতে কোন প্রাণ থাকে না, আবেগ থাকে না, থাকেনা কোন আবদার ও আকাঙ্খা … !  তবুও বয়ে চলে লেবাসধারী সম্পর্কের ধারাবাহিকতা।

 

যেন শুধু আদিম অভ্যাসের তাগিদেই দিনের পর দিন কিছু অস্তিত্বের সাথে মিথ্যে অভিনয় করে যাওয়া … ! হৃদযন্ত্রের সূক্ষ্ম সুতোয় ধুলো জমে জমে যেন অন্তরটাই হয়ে যায় একটা পুরনো আস্তিন! মস্তিষ্কের নিউরনগুলোতে লেগে থাকে উত্তরের হাওয়ার কিছুটা মায়া … !

 

তবুও যেন স্মৃতির কলেবরে সম্পর্কের লাগাম টেনে ধরে যন্ত্রণাময় একটা জীবন পার করে দেয়া! চলার পথে এমন অনেক মানুষ আছে যাদের কাছে সম্পর্কটা শুধুমাত্রই একটা পরিচয়। তাতে নেই কোন পারস্পরিক সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ, তাতে নেই কোন অধিকার, নেই কোন প্রেম বা মায়া।

 

পক্ষান্তরে এমন অনেক সম্পর্ক থাকে যা পরম যত্নে শুধু আগলে রাখতেই মন চায় আমৃত্যু …!  আর এমন কিছু সম্পর্কও থাকে, যার বোঝা বড্ড বেশি ভারী মনে হয়, আর সেটা কে লালন করা তো দূরের কথা, ধারণ করতেই আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়ি। তবুও জগতের নিয়মেই হোক আর জীবনের তাগিদেই হোক, সে সব সম্পর্ককে আমাদের স্বেচ্ছাহীনতায় বয়ে নিয়ে যেতে হয়!

 

অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, নিয়মিত যোগাযোগের অভাবে খুব কাছের প্রিয় মানুষটিও একসময় অনেক দূরে চলে যায়, বা অনেক দূরত্ব সৃষ্টি হয়। আন্তরিকতার অভাবে সম্পর্কের বিচ্ছেদও ঘটে অনেক সময়। আবার নিয়মিত যোগাযোগ আর সখ্যে অনেক দূরের মানুষও অনেক সময় হয়ে যায় বড্ড কাছের ও নির্ভরশীলতার।

 

প্রিয় মানুষগুলোর সাথে একসাথে চলতে গিয়ে অনেক সময় অনেক মতবিরোধ হতে পারে, অনেক অসামঞ্জস্যতা দেখা দিতে পারে বা রুচি-পছন্দে অনেক অমিল থাকতে পারে। সেটাই স্বাভাবিক, তবে সেটাকে অত্যন্ত নমনীয়তার সাথে মানিয়ে নিতে হবে, প্রত্যেকের রুচিবোধকে সন্মান দেখাতে হবে, কাউকে সামাজিকভাবে হেয় না করে প্রাপ্য সম্মান দিতে হবে। বাহ্যিক অবয়ব থেকে শুরু করে আচার-ব্যবহারে, রুচি-পছন্দে, মেধা-মননে প্রত্যেকটি মানুষই একে অন্যের চেয়ে ভিন্ন। এই ভিন্নতাকে শ্রদ্ধা করে, মানিয়ে নিয়ে, এগিয়ে চলাই জীবন।

 

সম্পর্ককে লালন করতে হয়, অন্তরে ধারণ করতে হয়, আর একটু একটু করে প্রতিনিয়ত তাকে প্রতিপালন করতে হয়।

 

কেননা, ভালোবাসা প্রতি মুহূর্তেই প্রতিপালিত হতে চায়! আর ভালোবাসা ছাড়া সকল সম্পর্কই যেন এক প্রাণহীন হৃৎপিণ্ডের মত … !

‘ভালোবাসার পরিচর্যা ও প্রতিপালন’ই যেন সকল সম্পর্কের ‘মূল মন্ত্রবীজ’l

 

# আজমেরিনা শাহানি
কবি, গল্পকার, উপস্থাপিকা 
সাবেক রানারআপ, খুলনা ডিভিশন, লাক্স আনন্দধারা মিস বাংলাদেশ ফটোজনিক
 

মুক্তমত বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর