ঢাকা, ২৫ নভেম্বর সোমবার, ২০২৪ || ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
১৪৪১

লোকপণ্য মেলায় ভিড়

সময়ের সঙ্গে শিল্পের ধরন বদলায়, ঐতিহ্য হারায় না

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৩:১২ ২৪ আগস্ট ২০১৯  

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শিল্পের ধরন বদলায়। কিন্তু ঐতিহ্য হারায় না। যেমন মসলিন। কিংবা জামদানি অথবা শিল্ক। অথবা রিক্সা পেইন্ট। বেত-হোগলা-কাঁসা-পিতল-মাটির তৈরী তৈজসপত্র। আবহমান বাংলার চিরায়ত যে শিল্প, মাটির সঙ্গে পরম মমতায় জড়িয়ে আছে বাংলার জমিনজুড়ে, সেই ঐতিহ্যকে ধরে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেয়ার মহতি লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে কারুশিল্পী-উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠান - বাংলাদেশ হেরিটেজ ফাউন্ডেশন।  

বাংলাদেশ ঐতিহ্য কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের আয়োজনে রাজধানীতে চলছে চিরায়ত বাংলার ঐতিহ্যবাহী পণ্যের প্রদর্শনী। শুক্রবার সকালে রেডিসন হোটেলের উৎসব হলে ‘দ্বিতীয় হেরিটেজ গালা ইভেন্ট - আগস্ট ২০১৯ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়। দু’দিনের ব্যতিক্রমী এ প্রদর্শনীতে তুলে ধরা হয়েছে আবহমান বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্যের নানা অনুষঙ্গ।

দেশলাইয়ের বাক্সে লুকিয়ে রাখা যাবে, এত সূক্ষ্ম শাড়ি ঢাকাই মসলিন। বানাতে নিষেধ করে কারিগরদের আঙুল কেটে দিয়েছিল ব্রিটিশরা। সে কারণেই এটা হারিয়ে যেতে বসেছিল। কিংবদন্তি এ মসলিন আবার ফিরেছে, সে কথা অনেকেরই জানা। সেই ঢাকাই মসলিনের শাড়ি, ওড়না, কামিজ দেখা যাচ্ছে এখন। ঢাকার মসলিন, রাজশাহীর সিল্ক, যশোরের নকশিকাঁথা, টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি। এ রকম প্রায় ২৫টি ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প পণ্য নিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের হস্তশিল্পীরা পসরা সাজিয়েছেন রাজধানীর রেডিসন ব্লু-তে। 
বাংলার ঐতিহ্যবাহী এবং চিরায়ত বাংলার প্রতিনিধিত্বকারী সব লোকজ উপকরণ স্থান পেয়েছে এ প্রদর্শনীতে। বিভিন্ন স্টলে ভিন্ন ভিন্ন পণ্য নিয়ে বসেছেন দোকানিরা। রয়েছে জামদানি, মসলিন, রাজশাহী সিল্কের শাড়ি, হাতে নকশা করা শাড়ি ও সালোয়ার কামিজ, তসর, সুতি, হ্যান্ডি সিল্ক ও মসলিনের ওপর নকশা করা শাড়ি, চাদর, কাঁথা, শখের হাড়ি, মাটির টেপা পুতুল, পাট-হোগলা দিয়ে বানানো লোকজ পণ্য, পুঁতি ও মুক্তার মালা, রিকশাচিত্রের তৈজসপত্র, মণিপুরি গামছা। এ ছাড়া রয়েছে হারবাল কসমেটিকস, বিভিন্ন রকম পিঠা, হাতপাখা, আচার, মধু, চা। হোটেল র্যাডিসন ব্লু’র উত্সব হলে প্রদর্শনী সবার জন্য উন্মুক্ত সকাল এগারটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত ।

উদ্বোধনীতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ ও ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূত ত্রাণ ভান খোয়া। 
বৈচিত্রে ভরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঐতিহ্য কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট, বিশিষ্ট ফ্যাশন ডিজাইনার, উদ্যোক্তা তুতলী রহমান। 
আলোচনায় অংশ নেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট রোকেয়া আফজাল রহমান, বাংলাদেশ হেরিটেজ ক্রাফটস ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) মো. মনজুর কাদের, গুলশান সোসাইটির প্রেসিডেন্ট সাখাওয়াত আবুল খায়ের মোহাম্মদ, নারী উদ্যোক্তা দিলরুবা আহমেদ, ডলি ইকবাল।

বাংলার চিরায়ত ইতিহাস-ঐতিহ্যের কথা তুলে ধরে এইচ টি ইমাম বলেন, বাংলার ঐতিহ্য টিকে রয়েছে গৌরবের সঙ্গে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শিল্পের ধরন বদলায়। কিন্তু ঐতিহ্য হারিয়ে যায় না। ঐতিহ্যকে আধুনিকতার স্পর্শে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া আধুনিক শিল্পী ও উদ্যোক্তাদের দায়িত্ব। ঐতিহ্য কারুশিল্প ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের ঐতিহ্যকে তুলে ধরবার জন্য অনন্য আয়োজন করেছে।
তিনি বলেন, শৈশবে কামারদের মাটির হাঁড়ি তৈরি করতে দেখেছি। ঘানিতে তেল তৈরি করতে দেখেছি। ঘরে তৈরি করতে দেখেছি চিড়া-মুড়ি। আমার এলাকা সিরাজগঞ্জে এ রকম অনেক ঐতিহ্যবাহী জিনিস আছে। এগুলো এখন আরও উন্নত হয়েছে। আমরা তথ্যপ্রযুক্তিতে যতই অগ্রসর হই না কেন, ঐতিহ্যকে আমরা অস্বীকার করতে পারি না। আমাদের এই ঐতিহ্যকে সঙ্গে নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। 

কাজী নাবিল আহমেদ বলেন, ঐতিহ্য আমাদের জাতিগত পরিচয়কে তুলে ধরে। আধুনিক বিশ্বে আমরা বিশ্ব নাগরিক হয়ে উঠছি ঠিকই। কিন্তু আমাদের পরিচয় আমরা বাঙালি, আর তা মিশে রয়েছে আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্যের মাঝে।
রোকেয়া আফজাল রহমান বলেন, তুতলী স্বপ্ন দেখার সুযোগ করে দেয়। এই যে আয়োজন নিয়ে সে হাজির হয়েছে তা অনেক প্রান্তিক সাধারণ মানুষকে নতুন করে স্বপ্ন দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। তাদের কাজ করার ক্ষেত্র সৃষ্টি করেছে। আমি আশা করবো এভাবেই সে নতুন নতুন চমক নিয়ে বার বার হাজির হবে।

তুতলী রহমান বলেন, স্বপ্ন দেখতে হবে। যদি আমরা স্বপ্নই না দেখি তাহলে তা বাস্তব রূপ পাবে কীভাবে! ঐতিহ্য কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের সম্মিলিত স্বপ্নই আজ এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাস্তব হয়ে ধরা দিয়েছে। আমাদের এ অগ্রযাত্রা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। 
উদ্বোধনী পর্বের পর ছিল আকর্ষণীয় ফ্যাশন শো। দেশের স্বনামধন্য তরুণ মডেলরা তুলে ধরেন ঐতিহ্যের বাহারি পোশাক। উপস্থিত দর্শকদের সামনে বাংলার ঐতিহ্যবাহী মসলিন, জামদানি, সিল্ক ও খাদি কাপড়ে তৈরি আধুনিক ডিজাইনের আকর্ষণীয় শাড়ি ও পোশাক তুলে ধরেন তারা।

তুতলি রহমান লাইফটিভি’কে জানান, দেশের মুমূর্ষুপ্রায় ঐতিহ্যকে পুনরুদ্ধারের প্রত্যাশা নিয়ে গেল বছরের মে মাসে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ হেরিটেজ ক্র্যাফটস ফাউন্ডেশন। সারাবাংলার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ঐতিহ্যগুলোকে একত্রিত করে আগামীতে আরও বড় আয়োজনে কার্যক্রম চালিয়ে যাবে এ সংগঠন। পাশাপাশি বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের গর্ব করার মতো ঐতিহ্য উপকরণগুলো পৌঁছে দেয়ার প্রয়াস নেয়া হবে। দারিদ্র বিমোচন, কর্মীদের ন্যায্য পারিশ্রমিক প্রাপ্তি, নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি এবং অবহেলিত-বঞ্চিতদের স্বাবলম্বী এবং কর্মপ্রেরণা যোগাতে উৎসাহ দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করার কথাও জানালেন উদ্যমী উদ্যোক্তা, প্রখ্যাত ডিজাইনার তুতলি রহমান।