ঢাকা, ১৬ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার, ২০২৫ || ৩ মাঘ ১৪৩১
good-food
৫৫৯

সাভারে কয়েক শ পরিবার ঘুষ দিয়েও ঘর পাচ্ছে না

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ০০:৩০ ২৬ জুলাই ২০২১  

ঢাকার সাভার উপজেলার বিরুলিয়া ইউনিয়নের বাগ্নিবাড়ি গ্রামের মঞ্জু আক্তার একটি পাকা ঘরের আশায় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নারী সদস্য সেলিনা আক্তারকে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা দেন। কিন্তু দেড় বছরেও তিনি ঘর পাননি। পরে টাকা ফেরত চেয়ে তিনি উল্টো মারধরের শিকার হন। কেবল মঞ্জু নন, সাভার উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কয়েক শ পরিবার পাকা ঘরের আশায় টাকা দিয়ে এখন ঘর-টাকা কিছুই ফেরত পাচ্ছে না।

 

অভিযোগ উঠেছে, ‘বঙ্গবন্ধু পক্ষাঘাত ও পেশাজীবী পরিষদ’ নাম দিয়ে একটি চক্র সাধারণ মানুষকে ঘরপ্রতি দেড় থেকে দুই লাখ টাকা করে নিয়ে নামমাত্র কিছু কাজ করে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেছে। অর্থ আত্মসাতের জন্য এখন তাঁরা একে অন্যকে দুষছেন। এই সংগঠনটির সভানেত্রী সাভার উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ঝুমা খান, মহাসচিব ধামরাই পৌর এলাকার দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা আল–আমিন।

 

অভিযোগ পাওয়া গেছে, এদের বেশির ভাগই স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় মহিলা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এঁদের মধ্যে রয়েছেন ধামরাইয়ের আল-আমিন, সাভার উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রণতি পালমা, সাংগঠনিক সম্পাদক ঝুমা খান, ঢাকা জেলার সাবেক আহ্বায়ক আলেয়া আক্তার, আশুলিয়া ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রীতা রহমান, বিরুলিয়া ইউপির নারী সদস্য সেলিনা আক্তার, আশুলিয়া ইউপির নারী সদস্য সালমা আক্তার প্রমুখ।

 

জানা গেছে, অভিযুক্তরা সাভারের বিভিন্ন এলাকায় এক থেকে দুই লাখ টাকার বিনিময়ে দুটি কক্ষ, ডাইনিং, টয়লেটসহ বাড়ির টোপ দেন। প্রথমে দু-একজনকে দেওয়া হলে অন্যরা তাতে প্রলুব্ধ হন। আর এতেই সুবিধা হয়ে যায় অভিযুক্তদের। এ পর্যন্ত কয়েক শ মানুষ বাড়ি পাওয়ার আশায় তাঁদের টাকা দিয়েছেন।

 

ভুক্তভোগী মঞ্জু আক্তারের বাবা শহর আলী অভিযোগ করেন, পাকা ঘর করে দেওয়ার কথা বলে সেলিনা আক্তার তাঁর মেয়ের কাছ থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা নেন। দীর্ঘদিন পরও ঘর করে না দেওয়ায় তাঁর কাছে টাকা ফেরত চেয়ে মারধরের শিকার হন তাঁর মেয়ে। এ ঘটনায় সাভার থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি।

 

সেলিনা দাবি করেন, মঞ্জুর কাছ থেকে তিনি নন, টাকা নিয়েছেন সংগঠনের মহাসচিব আল-আমিন।  তবে সাভার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মাইনুল ইসলাম বলেন, এ রকম কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

 

ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘরের জায়গা তাঁদের নিজেদের। ওই জায়গায় ঘর করে দেওয়ার কথা বলে বঙ্গবন্ধু পক্ষাঘাত ও পেশাজীবী পরিষদের নামে ঘরপ্রতি তাঁদের কাছ থেকে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা করে নেওয়া হয়। টাকা নিয়ে তাঁরা কোনো কোনো ঘরের আংশিক কাজ করেছেন। কোথাও ভিটা তৈরি করেছেন। 

 

আশুলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী আলেয়া আক্তার অভিযোগ করেন, তিনি নিজে দুটি ঘরের জন্য ঢাকা জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক আহ্বায়ক হেমায়েতপুরের বাসিন্দা আলেয়া আক্তারকে ৪ লাখ টাকা দেন। তাঁর সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে।

 

পূর্ব সদরপুরের শফিকুল ইসলামসহ দুজনের কাছ থেকে টাকা নেন আশুলিয়া ইউনিয়ন মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রীতা রহমান। যোগাযোগ করা হলে তিনি টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ঢাকা জেলার সাবেক আহ্বায়ক আলেয়াকে তিনি সেই টাকা দিয়েছেন।

 

ঝুমার অভিযোগ, সেলিনার মামলা
ঝুমা খান গত বছরের নভেম্বর সাভার উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ করে বলেন, পাকা ঘর দেওয়ার কথা বলে নারী ইউপি সদস্য সালমা আক্তার ১০০টি ঘর বাবদ ২ কোটি টাকা, ৩০টি ঘর বাবদ জনৈক রাহিমা ৬০ লাখ ও ৩০টি ঘর বাবদ প্রণতি পালমা ৬০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তিনি নিজে ৬০টি ঘরের জন্য আল-আমিনকে ৭০ লাখ টাকা দেন।

 

অন্যদিকে নারী ইউপি সদস্য সেলিনা আক্তার গত ১৬ মার্চ আল-আমিনের বিরুদ্ধে সাভার থানায় মামলা করেন। এতে অভিযোগ করা হয়, তিনি নিজে ৩৪টি ঘরের জন্য ১৪ লাখ টাকা, ঝুমা খান ৬০টি ঘরের জন্য ৬৮ লাখ, লিমা শেখ ৪টি ঘরের জন্য ৩ লাখ টাকা ও সালমা আক্তার ৬০টি ঘরের জন্য ৯২ লাখ টাকা আল-আমিনকে দেন। তিনি সব টাকা আত্মসাৎ করেন।

 

সেলিনার মামলায় পুলিশ আল-আমিনকে গ্রেপ্তার করে। সম্প্রতি জামিনে মুক্ত হয়ে আল-আমিন সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী ঝুমা খান, সেলিনা আক্তার, আলেয়া আক্তারসহ অন্যরা টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এখন পুরো দায় তাঁর ওপরে চাপানোর চেষ্টা চলছে।

 

এ বিষয়ে জানতে কয়েক দফায় ঢাকা জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক আহ্বায়ক আলেয়া আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। প্রণতি পালমা ৬টি ঘরের জন্য টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেন।

 

সেলিনার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাভার থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, তদন্তে আল-আমিনের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। শিগগিরই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে। অভিযোগে নাম না থাকায় তদন্তে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলেও অন্যদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই। 

অপরাধ বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর