ঢাকা, ২৯ নভেম্বর শুক্রবার, ২০২৪ || ১৫ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৭৯০

সুচির উত্থান-পতন

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২১:৫১ ১ ফেব্রুয়ারি ২০২১  

পরিকল্পিত এক অভ্যুত্থানে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করেছে সামরিক বাহিনী। এনএলডি সরকার দলীয় একাধিক নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে তারা। এর মধ্যে অন্যতম অং সান সুচি। স্বভাবতই বিশ্বজুড়ে আলোচনায় তিনি। রাজনৈতিক জীবনে বহু ঘাত-প্রতিঘাত, চড়াই-উতরাই, কাঠখড় পুড়িয়ে উত্থান-পতনের মধ্য এ পরিস্থিতির শিকার সুচি। এ ‘রাজবন্দির’ জবানবন্দি তুলে ধরা হলো- 

 

মিয়ানমারের স্বাধীনতার নায়ক জেনারেল অং সান। তার নেতৃত্বে ব্রিটিশ ওপনিবেশিক থেকে পরাধীনতার শৃঙ্খল মুক্তি হয় দেশটি। এ নেতারই মেয়ে সুচি। ১৯৪৫ সালের ১৯ জুন জন্মগ্রহণ তিনি। তার দুই বছর বয়সে আততায়ীর হাতে বাবা খুন হন।

 

১৯৬৪ সালে পড়াশোনা করতে ভারতে চলে যান সুচি। তা শেষে ১৯৬৮ সালে ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকের জন্য পাড়ি জমান। এরপর জাতিসংঘে তিন বছর কাজ করেন। ১৯৭২ সালে যুক্তরাজ্যের নাগরিক মাইকেল অ্যারিসকে বিয়ে করেন তিনি। তাদের সংসারে হয় দুই ছেলে।

 

’৮০ এর দশকে মায়ের দেখাশোনার জন্য মিয়ানমারে ফেরত আসেন সূচি। ততদিনে দেশটিতে সামরিক শাসনের রমরমা অবস্থা। ১৯৮৮ সালে স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে গণআন্দোলন গড়ে তোলেন তিনি। যা জান্তাদের ক্ষমতার ভিত কাঁপিয়ে দেয়। এর মাধ্যমেই লাইমলাইটে আসেন। 

 

তবে ১৯৮৯ সালে সুচির আন্দোলন গুঁড়িয়ে দেয় সেনাবাহিনী। দেশজুড়ে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালায় তারা। তাতে কয়েক হাজার বেসামরিক মানুষ নিহত হন। সেই সঙ্গে গৃহবন্দি হন তিনি। কিন্তু তার বিদ্রোহ থামেনি। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে জোর প্রচেষ্টা চালান। তাতে সাধারণ জনগণের আকুণ্ঠ সমর্থন পান। ফলে  ১৯৯১ সালে ইয়াঙ্গুনে নিজ বাড়িতে বন্দি থাকা অবস্থাতেই শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জয় করেন এ নেত্রী।

 

পরিপ্রেক্ষিতে সুচিকে চার দেয়ালের মধ্যে আটকে রাখতে পারেনি সেনারা। ১৯৯৫ সালে বন্দিজীবন থেকে মুক্তি পান তিনি। এরপর সভা-সমাবেশে জোর দেন। ঘটনাক্রমে ১৯৯৯ সালে তার জীবনে আরেক দুঃসংবাদ ধেয়ে আসে। স্বামী অ্যারিস ক্যানসারে মারা যান। 

 

তবে জান্তা সরকার দেশে ফেরা আটকে দিতে পারে-ভেবে তাকে দেখতে দেশ ছেড়ে যাননি সুচি। বরং তাদের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলনের দূর্গ গড়ে তোলেন। পরিপ্রেক্ষিতে ২০০০ সালে ফের গ্রেপ্তার হন তিনি। কিন্তু দেড় বছর পরই ছাড়া পান। তবে দমন-পীড়ন চলেছেই। ২০০৩ সালে তিনি ও তার সমর্থকদের ওপর হামলা করে সামরিক সরকার সমর্থকরা। এ ঘটনায় কয়েকজন নিহত হন।

 

২০০৭ সালে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিতে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের নেতৃত্বে জান্তা সরকার বিরোধী প্রতিবাদে সমর্থন দেন সুচি। বিক্ষোভ দানা বাঁধলে ত্বরিত পদক্ষেপে তা পণ্ড করে সেনাবাহিনী। আবার গ্রেপ্তার হন তিনি। ২০১০ সালে মুক্তি পান। ঠিক সেই বছর সাধারণ নির্বাচনে সামরিক বাহিনীর তৈরি রাজনৈতিক দল বিপুল ভোটে বিজয় পায়। সেই নির্বাচন বর্জন করে এনএলডি। এরপর এগোতে থাকে তারা।

 

২০১২ সালে সুচি ও তার সমর্থকদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় থেইন সেইন সরকার। ফলে মুক্তভাবে চলাচল করতে পারেন তিনি। মুক্ত হন শত শত রাজনৈতিক বন্দি। ওই বছরই মিয়ানমারের ওপর থেকে নানা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে পশ্চিমা বিশ্ব। 

 

এরপর সাফল্য পেতে শুরু করে সুচির দল। একই বছর উপনির্বাচনে জয় পায় এনএলডি। সংসদীয় আসনের ৪৪টির ৪৩টিই লাভ করে তারা। পরে বহির্বিশ্বের সমর্থন আদায়ে জোর দেন তিনি। মাঝে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষও হয়।

 

তাতে পরোক্ষভাবে ফায়দা লুটেন সুচি। যার জেরে ২০১৫ সালে সাধারণ নির্বাচনে ভূমিধস জয় পায় এনএলডি। ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন তিনি। এরপর থেকেই রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর অকথ্য নির্যাতন শুরু করে সেনাবাহিনী। ফলশ্রুতিতে ২০১৭ সালে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে ১১ লাখ রোহিঙ্গা।   

 

শুরু থেকে সেই নির্যাতনে সমর্থন দেন সুচি। ফলে আন্তর্জাতিক মহলের সমালোচনায় পড়েন তিনি। তবে গুঞ্জন ছড়িয়েছে, সম্প্রতি ওই অবস্থান থেকে সরে এসেছেন।

 

২০০৮ সালে মিয়ানমারের সংবিধানে সেনাবাহিনীকে ব্যাপক রাজনৈতিক ক্ষমতা দেওয়া হয়। তবে ২০১৯ সালে তা সংশোধনের চেষ্টা করেন সুচি। ফলে সেনা প্রতিনিধিদের সঙ্গে সরকার দলীয় আইনপ্রণেতাদের দ্বন্দ্ব শুরু হয়।

 

২০২০ সালের নির্বাচনে ব্যাপক ব্যবধানে জয়লাভ করে এনএলডি। এতে অনিয়মের অভিযোগ তোলে সেনাবাহিনী। স্বভাবতই নতুন সরকার ও সামরিক বাহিনীর মধ্যে মতবিরোধ বেগবান হয়। সেই সূত্রে ২০২১ সালে ক্যু ঘটলো।

বিশ্ব বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর