ঢাকা, ২৪ নভেম্বর রোববার, ২০২৪ || ১০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
২০৬

সোমালিয়ার স্টক এক্সচেঞ্জ: বিনিয়োগ হয় জলদস্যুদের লুটের অর্থ-অস্ত্র

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২১:১৪ ১৩ মার্চ ২০২৪  

সোমালিয়ার জলদস্যুরা দীর্ঘদিন ধরে জাহাজ লুট, নাবিকদের অপহরণের সঙ্গে জড়িত। মোটা অংকের মুক্তিপণ আদায়, হত্যার পাশাপাশি দুর্ধর্ষ সব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে তারা। আর এই কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তাদের আছে নিজস্ব স্টক এক্সচেঞ্জও। অর্থ বা অস্ত্র দিয়ে এই স্টক এক্সচেঞ্জে বিনিয়োগ করা যায়, অভিযান সফল হলে পাওয়া যায় লভ্যাংশ!

 

সোমালি সরকার যখন ইসলামপন্থি চরমপন্থা মোকাবিলায় ব্যস্ত ছিল, তখন সংগঠিত হতে থাকে জলদস্যুরা। মাছ ধরে পর্যাপ্ত আয় করতে পারছিল না জেলেরা। দারিদ্রতা থেকে বাঁচতে ২০০৯ সালে জলদস্যুদের দলে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন অনেক জেলে। 

 

জেলেদের এই প্রবণতা প্রথম জলদস্যু স্টক এক্সচেঞ্জের জন্মের কারণ। জলদস্যুরা বিভিন্ন কোম্পানিতে একত্রিত হয়। প্রথমে মাত্র ১৫ জন ছিল, পরে সেই সংখ্যা বাড়তে থাকে। 

 

স্টক এক্সচেঞ্জে বিনিময়ের মূল নীতি হলো, প্রতিবার জলদস্যু অভিযান সফল হলে বিনিয়োগকারীরা লাভের একটি অংশ পান। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এক বিনিয়োগকারী এক মাসে ৭৫ হাজার ডলারও উপার্জন করেছেন, যা তার কাছে অকল্পনীয় বিষয় ছিল। এমন লাভবান হওয়ায় আরও বেশি মানুষ জলদস্যু স্টক এক্সচেঞ্জে বিনিয়োগে আগ্রহী হন। 

 

এরইমধ্যে এই চর্চা মূলধারার হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। কিছু ওয়েবসাইট দাবি করছে, সোমালিয়ার অনেক সরকারি কর্মকর্তাও দেশটির অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য মুক্তিপণ থেকে একটি অংশ পান। 


সোমালিয়া পাইরেসি স্টক এক্সচেঞ্জ কীভাবে কাজ করে? জানা গেছে, লাভজনক বাণিজ্য রুট ঠিক করার জন্য সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে পরামর্শ করে জলদস্যুরা। লাভজনক মিশন থাকলে তারা জলদস্যু স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে যোগাযোগ করে। যে কেউ খাদ্য, অস্ত্র বা নগদ অর্থ দিয়ে মিশনে অংশগ্রহণ করতে পারে। রয়টার্স বলছে, শেয়ারগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত। 

 

জলদস্যুরা তাদের টার্গেট করা বাণিজ্যিক রুটে কন্টেইনার জাহাজ আক্রমণ করে। তাদের টার্গেট সাধারণত জাহাজে থাকা মানুষদের জিম্মি করে মুক্তিপণ চাওয়া। অর্থ পেয়ে গেলে কোনো ক্ষতি ছাড়াই জিম্মিদের মুক্তি দেয় তারা। তবে অনেক সময় হত্যাকাণ্ডের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ে জলদস্যুরা। এজন্যই এদেরকে বিপজ্জনক বলে মনে করা হয়। 

 

বিশ্লেষকরা বলছেন, পণ্যবোঝাই থাকায় আর্ন্তজাতিক নৌ রুটে জাহাজগুলো সাধারণত ধীরে চলে। জলদস্যুরা যখন কোনো জাহাজকে টার্গেট করে তখন তারা ছোট ছোট নৌকায় অস্ত্র নিয়ে চারদিক থেকে আক্রমণ করে। জাহাজে উঠে সব দখলে নেয়ার পর পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হয়ে যায় জাহাজের নাবিক ও ক্রুদের জন্য। 


জানা যায়, ১৯৯৫ সালে স্থানীয় জেলেদেরই কয়েকটি দল একটি জাহাজ ভেসে থাকতে দেখে। ঝটপট জাহাজটিকে ঘিরে ফেলে তারা। জেলেদের বিবর্ণ চোখ আর শুকনো চোয়ালের মুখাবয়ব দেখে ঘাবড়ে যান নাবিকরা। পরে মূল্যবান অর্থসামগ্রীর বিনিময়ে প্রাণে রক্ষা পান তারা। সেদিনের সেই ঘটনাই মোড় নেয় আধুনিক জলদস্যুতায়। 

 

২০১০ সালের ৮ মে এডেন উপসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়ে জার্মান অয়েল ট্যাংকার মারিডা মারগারিটা। জাহাজের ২২ ক্রুর মধ্যে দুজন ছিলেন বাংলাদেশি। প্রায় সাড়ে সাত মাস জিম্মি থাকার পর ওই বছরের ২৮ ডিসেম্বর সাড়ে ৩৮ কোটি টাকার বিনিময়ে তারা মুক্তি পান। 

 

২০১১ সালে সোমালিয়ার জলসীমায় জলদস্যুদের আক্রমণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। ১৬০টি জাহাজ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে সে বছর। ২০১০ এবং ২০১৫ সালের মধ্যে এ সংখ্যা বেড়ে হয় ৩৫৮। তবে ২০১৬ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে আক্রমণের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে কমে যায়। 


চলতি বছরের জানুয়ারিতে ইরানের পতাকাবাহী একটি মাছ ধরার জাহাজ অপহরণ করে সোমালিয়ার দস্যুরা। সেখানে ১৭ জন ইরানি নাগরিক ছিলেন। একই মাসে ইরানের আরেকটি পতাকাবাহী মাছ ধরার জাহাজ এফভি আল নাঈমিতে ১১ জন সশস্ত্র জলদস্যু আক্রমণ করে ১৯ জন ক্রু সদস্যকে জিম্মি করে। তারা সবাই পাকিস্তানের নাগরিক। পরবর্তীতে জিম্মিদের উদ্ধার করে ভারতীয় যুদ্ধজাহাজ আইএনএস সুমিত্র।

বিশ্ব বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর