ঢাকা, ২৫ নভেম্বর সোমবার, ২০২৪ || ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৮৮৬

হঠাৎ জ্বর হলে যা করবেন

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২২:০৬ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০  

সন্ধ্যা হলে ছাতিম ফুলের গন্ধ আর শিরশিরে বাতাস মন ভালো করে দেয়। হেমন্তের এ আবহাওয়া আবার রোগ জীবাণুদের জন্য আদর্শ। তাই ঋতু পরিবর্তনের সময় জ্বরের প্রকোপ বাড়ে। তবে এবার করোনাভাইরাস আতঙ্কে তা হলেই ভয়। তবে এটি কোনও অসুখ নয়, উপসর্গ মাত্র।

 

রোগ জীবাণু প্রবেশ করলে কিংবা দেহের অভ্যন্তরে কোনও অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটলে শরীরের রোগ-প্রতিরোধী সিস্টেম সেটার বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে। শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয় যাতে উত্তাপ সহ্য করতে না পেরে জীবাণুরা দেহ ছেড়ে পালায়। বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণের পাশাপাশি অনেক সময় জটিল কোনও রোগের প্রাথমিক উপসর্গ হিসেবেও হাড়কাঁপুনি জ্বর আসে।

 

ভারতীয় ইন্টারনাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অর্পণ চৌধুরী জানান, কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে জ্বর হলেই কোনও ঝুঁকি না নিয়ে রক্ত পরীক্ষা করান। করোনা, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু ছাড়া টাইফয়েডের কারণেও জ্বর হতে পারে। তাই এসব টেস্ট করাতে হয়। মূত্রনালী সংক্রমণ, টনসিলাইটিস, শ্বাসনালীর উপরিভাগে সংক্রমণ, ফুসফুসের প্রদাহ বা নিউমোনিয়া অথবা মেনিনজাইটিসের প্রাথমিক উপসর্গ হিসেবেও জ্বর হতে পারে।

 

তিনি বলেন, আবার টিউবারকুলোসিস, গাউট, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, কোনও ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, লিম্ফ গ্ল্যান্ড ও রক্তেরসহ অন্যান্য ক্যানসারের ক্ষেত্রে প্রাথমিক উপসর্গ হিসেবে একাধিকবার জ্বর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

 

ইন্ডিয়ান ক্রিটিক্যাল কেয়ারের চিকিৎসক পুষ্পিতা মণ্ডল জানান, জ্বর হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চোখ মুখ লাল হয়ে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। অনেকের তা আসার আগে হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যায়, মাথাব্যথা করে আর গরমেও শীত করে।

 

অর্পণ চৌধুরী বলেন, ভাইরাল জ্বরের অন্যতম উপসর্গ গা, হাত, পা ব্যথা, মাথার যন্ত্রণাসহ শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া। অনেকের আবার খুব শীত করে কাঁপুনি আসে। সবরকম জ্বরেই গলা ও কানে ব্যথা হতে পারে। আবার পেটে ব্যথা ও হজমের সমস্যা হয়। খেতে ইচ্ছে করে না, বমি বমি ভাব থাকতে পারে। তবে বমি হলে কোনও ঝুঁকি না নিয়ে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা দরকার। 

 

তিনি বলেন, শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে ডি-হাইড্রেশন হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই এসময় বারবার পানি পান করতে হয়। বমি হয়ে গেলে পানি বা ওআরএস খেলেও বিশেষ লাভ হয় না। তখন স্যালাইন দিয়ে পরিস্থিতি সামলাতে হবে।

 

ভারতের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ শান্তনু রায় জানান, বাচ্চাদের জ্বর বাড়লে খিঁচুনি দিয়ে তড়কা অর্থাৎ কনভালশন হতে পারে। তাই ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি তাপমাত্রা হলেই বয়স ও ওজন অনুযায়ী ঈষদুষ্ণ পানিতে স্পঞ্জ করতে হবে। পাশাপাশি প্যারাসিটামল খাওয়ানো উচিত। বড়দেরও জ্বর বাড়তে দেয়া চলবে না। জ্বর বাড়লে মাথায় জলপট্টি দেয়ার রীতি আছে তা মেনে চললে ভালো হয়।

 

তিনি বলেন, জ্বর ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের উপরে গেলে অবশ্যই মাথা ধুইয়ে সমস্ত শরীর স্পঞ্জ করিয়ে দেয়া দরকার। বাচ্চাদের জন্যও একই নিয়ম। সব চিকিৎসকই একটা বিষয়ে একমত ভাইরাল জ্বরের একমাত্র ওষুধ বিশ্রাম আর পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ও পানীয় খাবার।

 

তারা বলছেন, অনেকে জ্বর হলেই দোকান থেকে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খেয়ে কমানোর চেষ্টা করেন। এ অভ্যাস অত্যন্ত বিপজ্জনক। জ্বরে প্যারাসিটামল জাতীয় ছাড়া আর কোনও ওষুধ খাওয়ার দরকার নেই। জ্বর হলে বারবার পানি, ডাবের পানি, স্যুপ, গোটা ফল বা বাড়িতে তৈরি ফলের রস খেলে দুর্বলতা কমে। 

 

বিশেষজ্ঞরা বলেন,ভাইরাল জ্বর হলে বাড়িতে রান্না করা সব খাবারই খাওয়া যায়। জ্বরের সঙ্গে পেট খারাপ হলে দুধ বা দুধ জাতীয় খাবার না দেয়াই ভালো। রোদে ঘোরাঘুরি করলে  বা বেশি ধকল নিলে জ্বর বাড়ে। তাই এ অসুখ হলে দিন-দুয়েক বিশ্রাম নিতে হবে। ভিড়ের মধ্যে বাজার করতে গেলে নোভেল করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। 

 

সবশেষে তাদের পরামর্শ, জ্বর জব্দ করতে দূরত্ব বজায় রাখুন, মাস্ক পরতেও ভুলবেন না।