ঢাকা, ২৫ নভেম্বর সোমবার, ২০২৪ || ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৩৮১

৩০ মিনিট অক্সিজেনের বিল ৮৬ হাজার টাকা !

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৭:০০ ২৩ জুন ২০২০  

৩০ মিনিট অক্সিজেন দিয়ে বিল দিতে হলো ৮৬ হাজার টাকা! অবিশ্বাস্য হলেও ঘটনাটি খোদ ঢাকার আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এ হাসপাতালের বিরুদ্ধে অক্সিজেন ব্যবহারে অতিরিক্ত বিল রাখার অভিযোগ তুলেছেন এক কোভিড-১৯ রোগী।

 

মোজাম্মেল হক নামে ওই রোগী ১৬ দিন ওই হাসপাতালে থেকে সুস্থ হয়ে ফেরার সময় তাকে মোট ৩ লাখ ৫৮ হাজার টাকা বিল পরিশোধ করতে হয়েছে। এর মধ্যে অক্সিজেন সরবরাহের বিল দিতে হয়েছে ৮৬ হাজার টাকা।

 

সাবেক সরকারি কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক বলছেন, তিনি মোট তিন দিন অক্সিজেন নিয়েছিলেন, ১০ মিনিট করে ৩০ মিনিট।

 

তার ছেলে ফয়সাল হক বলেন, অসুস্থ হওয়ার পঞ্চম দিন তার বাবার সামান্য শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে কর্তব্যরত চিকিৎসককে তা জানিয়েছিলেন। তখন চিকিৎসক তাকে দিনে ১০ মিনিট করে অক্সিজেন নিতে বলেন।

 

“কিন্তু ডিসচার্জের দিন দেখি, অক্সিজেন বাবদ বিল করেছে ৮৬ হাজার ৪০০ টাকা। আমরা জানতে চাইলাম এত টাকা কীভাবে বিল এল? তখন তারা আমাকে বলল, ঘণ্টায় ৪০০ টাকা করে। আমি হিসাব করে দেখলাম, আব্বাকে তাতে ২১৬ ঘণ্টা অক্সিজেন দিতে হয়েছে। একটা মানুষকে ৯ দিন একটানা অক্সিজেন দিয়ে রেখেছে! এটা সম্ভব? এটা ভূতুড়ে বিল।”


মোজাম্মেল চট্টগ্রামে থাকেন। কোভিড-১৯ এর লক্ষণ-উপসর্গ দেখা দিলে ২৭ মে চট্টগ্রামে তিনি নমুনা পরীক্ষা করান। ২৮ মে ফলাফল ‘পজিটিভ’ আসে।

 

ফয়সাল বলেন, তার বাবা চট্টগ্রামের বাসায় একা থাকেন বলে চিকিৎসার সুবিধার জন্য তাকে ঢাকায় এনে ৩০ মে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে ভর্তি করেন। ১৪ জুন পর্যন্ত ওই হাসপাতালে চিকিৎসা নেন তিনি।

 

ফয়সাল বলেন, “আব্বার এমনিতে খুব বেশি সমস্যা ছিল না। চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকবেন এই চিন্তা করেই হাসপাতালে ভর্তি করেছিলাম।”

 

মোজাম্মেল হক বলেন, তার অক্সিজেন স্যাচুরেশন ভালো ছিল। মাঝে একদিন তা ৯২-৯৩ থাকায় চিকিৎসককে গিয়ে বিষয়টি জানিয়েছিলেন।

 

“ডাক্তার বলল, বেশি খারাপ লাগলে ১০ মিনিট অক্সিজেন নিবেন। আমি বয়স্ক মানুষ, হলফ করে বলতে পারি, তিন দিনে ১০ মিনিট করে অক্সিজেন নিয়েছি।”

 

“এই দুর্দিনে সবাই মানুষের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে। কিন্তু তারা সবার গলা কাটছে,” ক্ষোভ জানান তিনি।


ফয়সাল অভিযোগ করেন, হাসপাতালে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বাইরে থেকে কিনে দিতে হয়েছে। কেবিন হিসেবে যে রুম দেওয়া হয়েছে, তাও অনেক ছোট।

 

মোজাম্মেল হক জানান, যত দিন তিনি ছিলেন কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তাকে দেখতে যায়নি।

 

“যতদিন ছিলাম ডাক্তার চোখেও দেখিনি, কেউ আসেনি দেখতে। নার্সরা মাঝেমধ্যে গিয়েছে। কিন্তু তারা ডিউটি ডাক্তার আর কনসালটেন্ট ফি ধরেছে ৪৯ হাজার টাকা।”

 

মোজাম্মেল হকের বিলের কাগজ দেখা গেছে, বেড ও কেবিনের ভাড়া ১ লাখ ১৯ হাজার টাকা, হাসপাতালের সার্ভিস ৪৫ হাজার ৪০০ টাকা, নার্সিং ফ্যাসিলিটিজ ১১ হাজার ২০০ টাকা, অক্সিজেন বিল ৮৬ হাজার ৪০০ টাকা, ডাক্তার ও কনসালটেন্ট ফি ৪৯ হাজার টাকা।


এছাড়া অন্যান্য খরচ ও সার্ভিস চার্জ মিলিয়ে মোট বিল দেখানো হয়েছে ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৭৫৯ টাকা। মোজাম্মেল হকের কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে ৩ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। বাকি টাকা ডিসকাউন্ট হিসেবে দেখানো হয়েছে।

 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. এহতেশামুল হক বলেন, “আমি এ ব্যাপারে কিছু বলতে চাচ্ছি না। আমাদের এখানে একটা মিডিয়া সেল করা হচ্ছে, আপনি তার সঙ্গে কথা বলেন। কার সঙ্গে কথা বলতে হবে একটু পর আপনাকে জানিয়ে দিব।”

 

মিডিয়া সেলের কার সঙ্গে কথা বলতে হবে, তা আর জানাননি ডা. এহতেশামুল হক।


আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন খান বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক। তিনি লক্ষ্মীপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য।

 

গত ২ জুন আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত বিল নেওয়ার অভিযোগ করেন আরেক রোগী।

 

এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর ওই রোগীর কাছ থেকে নেওয়া অতিরিক্ত টাকা ফেরত দেয় প্রতিষ্ঠানটি।

 

ওই সময় আরও কয়েকজন রোগীর কাছ থেকেও অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ ছিল আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের বিরুদ্ধে।