ঢাকা, ২৫ নভেম্বর সোমবার, ২০২৪ || ১০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
১৬০৯

৩০-৩৫ টি আসন পেতে পারে জাতীয় পার্টি

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১১:৩৫ ৮ ডিসেম্বর ২০১৮  

জাতীয় পার্টির পতাকা

জাতীয় পার্টির পতাকা

বাকি আছে আর কয়েক ঘন্টা। কিন্তু কয়টি আসনে জাতীয় পার্টি (জাপা) মহাজোটের মনোনয়ন পাচ্ছে তা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করতে পারেনি দল্টি। দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আছেন আড়ালে আবডালে। সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ চুপ। বাকি শীর্ষস্থানীয় নেতারা কেউ কিছু বলতে পারছেন না। একমাত্র দলের মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ আসন বণ্টনের বিষয়ে জানেন বলে শীর্ষস্থানীয় নেতারা জানিয়েছেন । বাকি সবাই অন্ধকারে। 

দলটির কেউ বলেছেন, তারা ৪০ থেকে ৪২টি আসনে মহাজোটের মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন। আবার কেউ বলেছেন, ৩৭টি আসন পাবে জাতীয় পার্টি। কিন্তু দলের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেছেন, জাতীয় পার্টি ২৮ থেকে ৩০টি আসন পেতে পারে। ৭টি আসন থাকবে উন্মুক্ত। তবে আওয়ামী লীগের বিপক্ষে নয়, মহাজোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদ যেখানে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়বে সেখানে তাদের বিরুদ্ধে লাঙল নিয়ে ভোটে থাকবে জাতীয় পার্টি। 

তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই আসন বণ্টন নিয়ে আলোচনা চলছে। জাতীয় পার্টির দাবি ছিল ৭৬ আসন। এ দাবিতে সাড়া দেয়নি আওয়ামী লীগ। চলতি মাসের শুরুতেই জাতীয় পার্টির নেতারা বলছিলেন, অন্তত ৪৫ আসন পাবেন তারা। 

তবে আওয়ামী লীগ এখন পর্যন্ত জাতীয় পার্টিকে ছেড়েছে ২৫টি আসন। সেখানে প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। এ ২৫টি আসনের ২২টিতে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন জাপা। দলটির দখলে থাকা বাকি ১৪ আসনে প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ আসনগুলো ছাড়াও ঢাকা-১৭ আসনে এরশাদের মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত। জাপার বাকি ১০ এমপি আসন্ন নির্বাচনে মহাজোটের মনোনয়ন পাচ্ছেন না তা প্রায় নিশ্চিত। 

সূত্রের দাবি, গাইবান্ধা-৩ ব্যারিস্টার দিলারা খন্দকার, বরিশাল-২ চিত্রনায়ক সোহেল রানা, সাতক্ষীরা-২ আজাহার হোসেন ও টাঙ্গাইল-৫ পীরজাদা শফিউল্লাহ আল মুনিরের জন্য মহাজোটের মনোনয়ন আদায়ে দরকষাকষি চলছে। জাপার সাবেক মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে খেলাপি ঋণের কারণে। আদালতের রায়ে প্রার্থিতা ফিরে পেলে মনোনয়ন পেতে পারেন। 


গত সোমবার নব নির্বাচিত মহাসচিব  মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ তার প্রথম সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, অন্তত ৫০ আসন চান তারা। তিনি জানিয়েছিলেন দলের ৯ সদস্যের প্রতিনিধি দল আসন বণ্টনের দরকষাকষি করছেন আওয়ামী লীগের সঙ্গে। দুই-একদিনের মধ্যেই আসন বণ্টন চূড়ান্ত হয়ে যাবে। 

এ বক্তব্যের চার দিন পরও বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, জাতীয় পার্টিকে ৪০ থেকে ৪২টি আসন ছাড়া হতে পারে। 

কিন্তু জাতীয় পার্টির কোনো নেতাই বলতে পারছেন না নিশ্চিত হওয়া ২৬ আসনের বাইরে কোনগুলো তাদের ছাড়া হচ্ছে। দলটির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, রওশন এরশাদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ফখরুল ইমামসহ অন্তত ১০ জন জ্যেষ্ঠ নেতার কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারেননি কয়টি আসন পাচ্ছে জাতীয় পার্টি। তাদের উত্তর ছিল, এ বিষয়ে একমাত্র মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ জানেন। জাতীয় পার্টির নেতারা জানিয়েছেন, তারাও যোগাযোগ করতে পারছেন না মসিউর রহমানের সঙ্গে। মহাজোটের মনোনয়নপ্রত্যাশী জাতীয় পার্টির একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেছেন, তিন দিন ধরে রাঙ্গাঁকে ফোন করে সাড়া পাননি তিনি। 

এরশাদের একজন উপদেষ্টা বলেছেন, মনোনয়নপ্রত্যাশীরা খুব চাপে রেখেছেন শীর্ষ নেতাদের। সবাই চেষ্টা করছেন মহাজোটের মনোনয়ন নিশ্চিত করতে। এ কারণেই এরশাদ হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরছেন না। বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ প্রকাশ্যে আসছেন না। 

জাপা সূত্র জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ। ৪২টি আসন জাতীয় পার্টিকে দেওয়ার দাবি জানান তিনি। এই সূত্রের দাবি, ৩৫টি আসনের আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাকি সাতটি নিয়ে আলোচনা চলছে। 

তবে দলের নির্বাচনী কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত জাতীয় পার্টির একজন শীর্ষ নেতা বলেন, ৩৫টি নয়, ৩০টি আসনের নিশ্চয়তা পেয়েছে জাতীয় পার্টি। বাকি আসনগুলো উন্মুক্ত রাখার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। এসব আসনে ভোট করতে হলে আওয়ামী লীগের বিপক্ষে লড়তে হবে জাতীয় পার্টিকে। 

তবে দলটির কোনো প্রার্থী আওয়ামী লীগের বিপক্ষে কোনো আসনে লড়তে চান না। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ৪৯ আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। এর মধ্যে ২০টি আসন ছিল উন্মুক্ত। সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন। এর ১৪টিতেই জামানত হারায় জাতীয় পার্টি। তবে মহাজোট শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদকে যেসব আসন ছাড়ছে আওয়ামী লীগ, সেখানে উন্মুক্ত নির্বাচনে থাকবে জাতীয় পার্টি। 

বরিশাল-৩ আসন ওয়ার্কার্স পার্টিকে ছেড়ে দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনেও এ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দেয়নি। জাতীয় পার্টির প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া টিপু হেরে যান ওয়ার্কার্স পার্টির টিপু সুলতানের কাছে। গোলাম কিবরিয়া টিপু  জানিয়েছেন, এবারও উন্মুক্ত থাকছে বরিশাল-৩। তিনি ওয়ার্কার্স পার্টির বিপক্ষে ভোট করবেন।