ঢাকা, ২৫ নভেম্বর সোমবার, ২০২৪ || ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
১৪১১

৬ বছরেও খনন শুরু হয়নি সুরমা নদীর

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১০:৩৭ ২৬ জানুয়ারি ২০১৯  

নদীর বুকজুড়ে চর। এক পাশে সরু খালের মতো পানির প্রবাহ থাকলেও সেখানেও হাঁটুপানি। হেঁটেই সেই পানি পাড়ি দিচ্ছে মানুষজন। বড় যান দূরে থাক, ডিঙি নৌকাও আটকে যাচ্ছে। নগরীর কুশিঘাট এলাকায় সুরমার এখন এ দশা।

যদিও নদীটি খননে ২০১২ সালেই পানি উন্নয়ন বোর্ড, সিলেট থেকে একটি প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এরপর নদী খননে সমীক্ষা চালানো হয়। সমীক্ষার পর নদী খননে উদ্যোগ নেয়ার কথা সে সময় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। এরপর এ ব্যাপারে আর উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

২০১৭ সালে ফের সুরমা নদী খননের জন্য সমীক্ষা চালানো হয়। তবে এখন পর্যন্ত এ সমীক্ষা প্রতিবেদনও আলোর মুখ দেখেনি। ফলে আটকে আছে খননকাজ। খনন না হওয়ায় ভরাট হয়ে পড়েছে সুরমার উৎসমুখও। নদীর উৎসমুখের ৩২ কিলোমিটারে জেগেছে ৩৫টি চর।

পলি জমে ভরাট হয়ে পড়েছে নদীর তলদেশ। এ নদীর বেশির ভাগ স্থান এখন শুকিয়ে খেলার মাঠে পরিণত হয়েছে। জকিগঞ্জ থেকে সিলেট পর্যন্ত নদীতে শতাধিক স্থানে জেগে উঠেছে দুই তীর বিস্তৃত চর। দক্ষিণ সুরমা, গোলাপগঞ্জ, কানাইঘাট, টুকেরবাজারসহ কয়েকটি স্থানে নদীর জেগে ওঠা চরে সবজি চাষও করেছে স্থানীয় বাসিন্দারা।

সুরমা নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় একদিকে যেমন শুষ্ক মৌসুমে শুকিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, অন্যদিকে অল্প বৃষ্টিতেই নদী উপচে  তীরবর্তী এলাকায় দেখা দেয় বন্যা। বৃষ্টিতে নদীর পানি উপচে তলিয়ে যায় হাওড়ের ফসল।

২০১৭ সালে হাওড়ে অকালবন্যায় বিস্তীর্ণ বোরো ফসল তলিয়ে যাওয়ার পর ২০১৮ সালে ৯ কোটি ২৭ লাখ ৬৬ হাজার টাকা ব্যয়ে সুরমা নদীর সুনামগঞ্জ অংশের কিছু এলাকা খননের উদ্যোগ নেয়া হয়। সে সময় সিলেটের শরীফাবাদ, খাদিমনগর, রুস্তমপুর, নলুয়া ও কানাইঘাটের কিছু এলাকায় নদী খননের জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিলেট কার্যালয়। সে প্রস্তাবও ফাইলবন্দি অবস্থায় রয়েছে।

পাউবো কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে সুরমা নদীতে পানির প্রবাহ আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। এতে এখানকার কৃষির ওপরও বিরূপ প্রভাব পড়ছে। নদী পানিশূন্য থাকায় শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে ভোগেন নদীপারের কৃষকরা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিলেট কার্যালয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, নদী খননে সমীক্ষা হলেও এখনো সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়নি। এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো প্রকল্পও নেয়া হয়নি। তবে দ্রুতই সুরমা নদী খননের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

আগে নদীর উৎসমুখ খনন করা দরকার জানিয়ে তিনি বলেন, উৎসমুখ ভরাট হয়ে যাওয়ায় বর্ষাকালে বরাক থেকে আসা পানির ৫ থেকে ১০ শতাংশ সুরমায় প্রবেশ করে। অন্যান্য মৌসুমে কোনো পানিই প্রবেশ করে না। সব পানি চলে যায় কুশিয়ারায়। ফলে বছরের প্রায় আট মাসই পানিশূন্য থাকে সুরমা। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা করছি। কিন্তু এ নদী ভারত থেকে এসেছে এবং প্রথম ২৫ কিলোমিটার সীমান্ত লাইন দিয়ে গেছে। ফলে উৎসমুখ খননের জন্য যৌথ নদী কমিশন থেকে উদ্যোগ নিতে হবে।

প্রায় ২৪৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সুরমা দেশের দীর্ঘতম নদী। ভারতের বরাক নদী থেকে সিলেটের জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মেঘনায় মিলিত হয়েছে এ নদী। দীর্ঘতম এ নদীই এখন পানিহীন, মৃতপ্রায়।

সুরমাকে প্রবহমান রাখতে নিয়মিত খনন প্রয়োজন বলে জানান বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম কীম। তিনি বলেন, সুরমার সঙ্গে এখানকার প্রাণপ্রকৃতি ও বহু মানুষের জীবিকা জড়িত। নদীটি মরে গেলে এ অঞ্চলের মানুষ ও প্রকৃতির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। তাই দ্রুত এ খননের মাধ্যমে সুরমার নাব্যতা ফিরিয়ে আনা জরুরি।