ঢাকা, ২২ এপ্রিল মঙ্গলবার, ২০২৫ || ৮ বৈশাখ ১৪৩২
good-food
১২

বন্ধুত্বে বিষাক্ততা চিহ্নিত করার উপায়

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২৩:৫৩ ২১ এপ্রিল ২০২৫  

বন্ধুত্ব অনেক সময় আনন্দের, আবার অনেক সময় হয়ে উঠতে পারে বিভ্রান্তিকর ও বিষাক্ত। কারও অতিরিক্ত আধিপত্য, কারও লুকোনো হিংসা, আবার কারও কৌশলী ‘গসিপ’ বা পরচর্চাকারী — সব মিলিয়ে একটি সুস্থ সম্পর্কও বিষিয়ে উঠতে পারে। সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন বন্ধুত্ব দীর্ঘস্থায়ী হলে ব্যক্তিত্বের ক্ষয় ও মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে পারে।

 

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্নায়ুমনোবিজ্ঞান ও ‘ওয়েলনেস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল হেল্থ’–এর মনোবিদ ড. সানাম হাফিজ এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানসিক স্বাস্থ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘নিউপোর্ট হেলথকেয়ার’-এর প্রধান কর্মকর্তা ক্রিস্টিন উইলসন-সহ একাধিক বিশেষজ্ঞ এ বিষয়ে তাদের মতামত দিয়েছেন।

 

বিষাক্ত বন্ধুর বৈশিষ্ট্য কী?

প্রকৃত বন্ধুত্বে পরস্পরের প্রতি সম্মান, সহযোগিতা, উন্মুক্ত যোগাযোগ ও আনন্দ থাকে। ড. সানাম হাফিজ ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, একটি সুস্থ বন্ধুত্বে সবাই নিজেকে প্রকাশ করতে পারে বিচার বা প্রত্যাখ্যানের ভয় ছাড়াই।

 

তবে বিষাক্ত বন্ধুত্ব ঠিক এর উল্টা। সেখানে একজন বারবার হেরে যান, নিজস্ব অনুভূতি অগ্রাহ্য করা হয়, কিংবা অস্তিত্ব হারিয়ে যায়। ক্রিস্টিন উইলসনের মতে, যদি কোনো বন্ধু নিয়মিতভাবে শক্তি নিঃশেষ করে দেয় বা আপনাকে নিজের সম্পর্কে খারাপ অনুভব করায়, তবে সে সম্ভবত বিষাক্ত বন্ধু।

 

বারবার ঝগড়া হওয়া

সুস্থ বন্ধুত্বে মতবিরোধ থাকা স্বাভাবিক। তবে প্রায়ই ঝগড়া হলে আর সেই ঝগড়াগুলো ব্যক্তিগত আঘাতে পরিণত হলে, সেটা বিষাক্ত সম্পর্কের লক্ষণ। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মনোচিকিৎসক এমি বার বলেন, যদি কাউকে কিছু বলার আগে ভাবতে হয়, সে রেগে যাবে কি-না, তাহলে সেই সম্পর্ক নিরাপদ নয়।

 

সমর্থনের অভাব

যদি বন্ধু সব সময় নিজেকে গুরুত্ব দেয়, তবে অন্য বন্ধুর প্রয়োজন বা অনুভূতির প্রতি উদাসীন থাকে, তাহলে বুঝতে হবে সম্পর্কটা একপক্ষীয়। মার্কিন মনোবিদ ডা. ভেনেসা কেনেডি বলেন, কিছু বন্ধু নিজেদের প্রয়োজন পূরণে আপনাকে ব্যবহার করতে পারে, কিন্তু আপনার দুঃসময়ে পাশে থাকবে না।

 

নিয়মিত পরচর্চা করা

যে বন্ধু সবসময় অন্যদের পেছনে কথা বলে, সে আপনার পেছনেও একই কাজ করতে পারে। এই মন্তব্য করে ডা. ক্রিস্টিন উইলসন বলেন, গসিপে মেতে থাকা মানে বিশ্বাসযোগ্যতা হারানো।

 

মানসিক ক্লান্তি

কিছু বন্ধুর সঙ্গে সময় কাটানোর পর নিজেকে ক্লান্ত ও নিঃশেষ মনে হয়। ড. কেনেডি একে বলেন, এমন বন্ধু ‘এনার্জি ভ্যাম্পায়ার’— যে নিজের মানসিক বোঝা আপনার ওপর চাপিয়ে দেয়।

 

সীমানা না মানা

যদি বারবার বোঝাতে বাধ্য হন যে আপনি ব্যস্ত, তবুও তারা নিজের প্রয়োজন পূরণে চাপ দেয়, তবে সেটাও অসুস্থ বন্ধুত্বের লক্ষণ।

 

নিজেকে বদলে ফেলতে বাধ্য হওয়া

বন্ধুর সঙ্গে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে হয়? মনের কথা বলতে ভয় হয়? তাহলে বুঝতে হবে সম্পর্কটি আপনাকে বদলে ফেলছে। একজন সত্যিকারের বন্ধু চাইবে আপনি নিজের সেরা রূপে থাকুন, অন্য কাউকে অনুকরণ না করুন, বলেন নিউইয়র্কভিত্তিক থেরাপিস্ট কোর্টনি গ্লাশো।

 

মানসিক নিপীড়ন

শুধু প্রেমে নয়, বন্ধুত্বেও মানসিক বা শারীরিক নিপীড়ন হতে পারে। অতিরিক্ত সমালোচনা, হিংসা, নিয়ন্ত্রণ— সবই এক ধরনের নির্যাতন। গ্লাশো বলেন, এমন বন্ধুত্ব থেকে বেরিয়ে আসতে মানসিক চিকিৎসকের সহায়তা নেওয়া জরুরি।

 

সবসময় নিজের কথাই বলা

যখন বন্ধুত্বে আপনি শুধু শ্রোতা, আর সব আলো বন্ধুর ওপর— তখন সেটি আত্মকেন্দ্রিক সম্পর্ক। ড. সানাম হাফিজ বলেন, এ ধরনের বন্ধু আনন্দে খুশি নয়, বরং প্রতিযোগিতায় মত্ত থাকে।

 

সবকিছুতে নাটক তৈরি

কিছু বন্ধু আছে যারা অন্যদের নিয়ে `গসিপ’ করে, ঝগড়া বাধায় আর নিজের প্রভাব বিস্তার করতে চায়।

 

অন্যের অর্জনকে হালকা করে দেখা

যখন অন্য বন্ধু ভালো কিছু করছে, তখন তারা প্রশংসা না করে বিদ্রুপ করে। এটি হিংসা ও অসহিষ্ণুতা প্রকাশ করে।

 

অন্য বন্ধু সবসময় দোষী

নিজের কোনো ভুল হলে সেটির দায়ও যদি অন্য বন্ধুর ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হয় এবং সব সময়ে যদি নিজেকে ব্যাখ্যা করতে বাধ্য হতে হয়- এর মানে বন্ধুত্বে বিষাক্ততা তৈরি হয়ে হয়েছে।

 

অন্যদের সঙ্গে তুলনা

এ ধরনের তুলনা আত্মবিশ্বাস ভাঙায়। আর সম্পর্কের মধ্যে অবিশ্বাস ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা সৃষ্টি করে। স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কর্মক্ষেত্রে এমন অনেক বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে, যা প্রথমে খুব প্রাণবন্ত মনে হয়। তবে যখন দুই বন্ধু ঘনিষ্ঠ হয়ে যায় এবং তৃতীয় জনকে উপেক্ষা করতে শুরু করে, তখনই শুরু হয় নানান ধরনের মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েন।