ঢাকা, ২০ জানুয়ারি সোমবার, ২০২৫ || ৭ মাঘ ১৪৩১
good-food
১৬

অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা: সেই প্রতিবেদন প্রত্যাহার ব্রিটিশদের

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৩:৫৪ ২০ জানুয়ারি ২০২৫  

অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করা প্রতিবেদন প্রত্যাহার করেছেন ব্রিটিশ এমপিরা। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পক্ষ নিয়ে ওই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। সেই অভিযোগ ওঠার পর এ পদক্ষেপ নিলো তারা। রোববার (১৯ জানুয়ারি) প্রভাবশালী ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক রিপোর্টে এসব তথ্য জানা গেছে।

 

এতে বলা হয়, গত নভেম্বরে ওই প্রতিবেদন দেয় যুক্তরাজ্যের কমনওয়েলথবিষয়ক অল–পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ (এএপিজি)। এপিপিজির এক মুখপাত্র বলেন, গ্রুপটি এখন থেকে কোনো নির্দিষ্ট দেশ নিয়ে প্রতিবেদন দেবে না। পরিবর্তে প্রতিষ্ঠান হিসেবে কমনওয়েলভুক্ত দেশগুলোর দিকে মনোযোগ দেবে।

 

ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করা হয়। কিন্তু তাতে উল্লিখিত অনেক তথ্য সঠিক নয় বলে অভিযোগ ওঠে। বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, সাংবাদিক ও সাবেক কর্মকর্তাদের দমন করতে দেশের আইন ব্যবস্থাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। পাশাপাশি ইসলামি উগ্রপন্থীদের ক্রমবর্ধমান প্রভাবও তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে।

 

ব্রিটিশ কর্মকর্তারা জানান, লেবার পার্টির এক এমপি হাউস অব কমন্সে অভিযোগ জানানোর পর এটি ‘পর্যালোচনা’ করা হচ্ছে। তবে সেই প্রতিবেদন কবে প্রত্যাহার করা হয়েছে তা বলা হয়নি। এপিপিজির মুখপাত্র বলেন, এটি প্রশ্নবিদ্ধ প্রতিবেদন। বর্তমানে পর্যালোচনাধীন একটি অভ্যন্তরীণ নথি। বৃহৎ পরিসরে আলোচনার অংশ হিসেবে বিষয়টি পররাষ্ট্র দপ্তরকেও জানানো হয়েছে। এটি বাইরে প্রকাশ করা হবে না। এই বিষয়ে এপিপিজি কোনো ফলোআপও করবে না।

 

শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিক সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সম্পৃক্ততার অভিযোগে তীব্র সমালোচনার মুখে ব্রিটেনের আর্থিক সেবাবিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে অভিযোগ উঠেছে, ব্রিটিশ রাজনীতিতেও আওয়ামী লীগ হস্তক্ষেপ করছে।

 

‘বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি’ শিরোনামে এপিপিজির প্রতিবেদন সংবাদমাধ্যমে আসে গত নভেম্বরে। ক্ষমতায় থাকতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর সহিংসতা চালান শেখ হাসিনা। এতে প্রায় এক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।

 

প্রতিবেদনে মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের ‘একগুচ্ছ’ সমালোচনা করা হয়। ওই সময় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন এপিপিজির সভাপতি ও কনজারভেটিভ পার্টির নেতা অ্যান্ড্রু রোসিনডেল। সেখানে তিনি বলেন, শুধু বর্তমান সরকারের সমর্থনকারীকে নয়, বাংলাদেশের উচিত দেশের সবাইকে সমান সুযোগ দেয়া। শিগগিরই এই পরিস্থিতির পরিবর্তন না ঘটলে নতুন সরকারের আন্তর্জাতিক সমর্থন অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে।

 

অভিযোগ করা হয়, ইউনূস সরকার আইনকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে এবং কট্টর ইসলামপন্থীদের ক্ষমতায়ন করছে। গার্ডিয়ান জানায়, প্রতিবেদনটি তারা পেয়েছে দিল্লিভিত্তিক থিংক ট্যাঙ্ক ‘রাইটস অ্যান্ড রিস্ক অ্যানালাইসিস গ্রুপের’ মাধ্যমে। এতে ব্রিটিশ এমপিরা বলেন, আমরা তথ্যপ্রমাণ পাচ্ছি, বাংলাদেশের সাবেক মন্ত্রী, এমপি, আওয়ামী লীগের নেতা, সাবেক বিচারক, আইনজীবী, শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এত মামলা দেয়া হচ্ছে, যা বর্তমান সরকারের গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

 

এর সমালোচনা করে বিশেষজ্ঞরা বলেন, নিহত আন্দোলনকারীর সংখ্যা প্রতিবেদনে কম দেখানো হয়েছে এবং বেশির ভাগ মৃত্যু শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পরে ঘটেছে। গার্ডিয়ান জানায়, এই তথ্য জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদনের সাংঘর্ষিক। গত আগস্টে কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়—  হতাহতের বেশির ভাগ ঘটনাই ঘটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের হাতে।

 

এপিপিজির প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, বাংলাদেশের নতুন সরকার এক লাখ ৯৪ হাজার মানুষকে অভিযুক্ত করেছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুলিশের কাছে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানো হয়েছে, এই সংখ্যা সম্ভবত তাদের বোঝানো হয়েছে। এটা অভিযুক্তের সংখ্যা নয়।

 

গার্ডিয়ান বলছে, সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করে আসা লেবার পার্টির এমপি রুপা হক এপিপিজির প্রতিবেদনের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, এতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি অন্যায় করা হয়েছে। লন্ডনের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিসের অধ্যাপক নাওমি হোসাইন বলেন, প্রতিবেদনে বড় ধরনের ত্রুটি রয়েছে। বাংলাদেশ সম্পর্কে ন্যূনতম যাদের জ্ঞান আছে, তারা এসব ধরে ফেলবে। এটা হয় পক্ষপাতদুষ্ট, নয়তো খুবই দুর্বল একটি বিশ্লেষণ।

বিশ্ব বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর