ঢাকা, ২৬ নভেম্বর মঙ্গলবার, ২০২৪ || ১২ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৭৬০

আইসিইউতে ত্রাস সুপারবাগ

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৮:৫৫ ২৪ এপ্রিল ২০১৯  

বাংলাদেশে হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ৮০ শতাংশ মৃত্যুর কারণ হতে পারে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে ওঠা অনুজীব। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হচ্ছে সুপারবাগ।

ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সায়েদুর রহমানের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ এমন শঙ্কার খবর দিয়েছে।

সায়েদুর রহমান বলেন, ২০১৮ সালে বিএসএমএমইউর আইসিইউতে ভর্তি হন ৯০০ রোগী। এর ৪০০ জনই পরে মারা গেছেন।যারা মারা গেছেন তাদের ৮০ শতাংশেরই ব্যাকেটেরিয়া বা ছত্রাকজনিত সংক্রমণ ছিল। আর এসব ছিল অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী।

টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত ও পাকিস্তানে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের চিত্র ভয়াবহ। এসব দেশে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই মানুষের চিকিৎসায় ও গবাদী পশু মোটাতাজাকরণে অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছা ব্যবহার হচ্ছে। ডিসপেনসারি থেকে কেনার সুযোগ থাকায় মানুষের মধ্যে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিসটেন্স (এএমআর) তৈরি হচ্ছে।     

অধ্যাপক সায়েদুর বলেন, বেসরকারি ব্যবস্থায় পরিচালিত আইসিইউর রোগীরাই বেশি  মারা যান। এতে এএমআরের বিষয়টি কড়াকড়িভাবে দেখা হয় না। মূলত এটিই ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধের ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা রাখে।  

তিনি বলেন, এক্ষেত্রে আরো নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেয়া দরকার। যেখানে-সেখানে অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি হওয়া উচিত নয়। এসব ওষুধ হাসপাতাল থেকে দেয়া উচিত।

২০১৫ সালে ইউরোপিয়ান জার্নাল অব সায়েন্টিফিক রিসার্চে প্রকাশিত সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের এক তৃতীয়াংশের বেশি রোগীকে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হয়। 

বিএসএমএমইউর মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমেদ আবু সালেহ বলেন, বাংলাদেশের আইসিইউগুলোতে ৭০ ভাগ মৃত্যুর কারণ হতে পারে এই সুপারবাগ। মূলত ভবিষ্যতে ব্যবহার উপযোগী নতুন কোনো অ্যান্টিবায়োটিক এই মুহূর্তে পাইপলাইনে নেই। আর যেসব এখন বাজারে আছে সেগুলো কার্যকারিতা হারাচ্ছে। সবমিলিয়ে চিত্রটা ভয়াবহ। 

সুপারবাগের কারণে বিশ্বজুড়ে মৃত্যুহার বাড়ার বিষয়ে সতর্ক করা হয় তিন বছর আগেই। ২০১৬ সালে এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সামনের দশকগুলোতে সুপারবাগের হুমকি রকেটের গতিতে বাড়বে। কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হলে ২০৫০ সালের মধ্যে এতে এক কোটি মানুষের মৃত্যু হবে। ২০১৮ সালে সারাবিশ্বে ক্যান্সার, ডায়াবেটিস ও ডায়রিয়ায় যত মানুষ মারা গেছে, এর চেয়ে অনেক বেশি।

মাইক্রোঅর্গানিজমের জিনগত পরিবর্তনের কারণে এ অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিসটেন্স (এএমআর) সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রাকৃতিকভাবেই তৈরি হয়। এএমআর বাড়লে যেকোনো ধরনের সংক্রমণের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা কমে আসবে।

দক্ষিণ এশিয়ায় অযোগ্য চিকিৎসকরা ভুল ব্যবস্থাপত্র অথবা নিম্নমানের ওষুধ দেয়ায় রোগীদের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সক্ষমতা বাড়ছে। অনেক দেশে পশু চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র দেয়ার ক্ষেত্রেও কঠোর নিয়ন্ত্রণ নেই। বেশি মুনাফার আশায় মানবদেহে ব্যবহার উপযোগী অ্যান্টিবায়োটিকই গবাদিপশু দ্রুত মোটাতাজা করতে ব্যবহার করা হচ্ছে।

সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর চট্টগ্রামের অর্ধেকের বেশি খামারের মুরগি মাল্টি-ড্রাগ রেজিসটেন্ট ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত।