ঢাকা, ১২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার, ২০২৪ || ২৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
১৭৪৫

স্মৃতির পাতা থেকে

আম-ছাতু খাওয়ার মজা

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২২:০০ ২৮ মে ২০২১  

উপাদেয় পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ খাবারটির সঙ্গে যাদের সখ্যতা রয়েছে, একমাত্র তারাই জানেন রসালো আম দিয়ে ছাতু খাওয়ার মজাটা। ছাতু বলতে অবশ্যই চাল-বুট-যবের মিশ্রিত হতে হবে। স্মৃতিকাতর ব্যক্তিমাত্রই জানেন এটা কতটা রসনা তৃপ্তিদায়ক ও স্মৃতিজাগরুক।


মধুমাস জৈষ্ঠ্যের আগমনের আগে থেকেই বিশেষত বৈশাখের শেষদিকে যখন অখ্যাত গুটি গাছগুলো হতে ভুট-ভাট শব্দে আম পড়ার দৃশ্যের অবতারণা হয়, তখনই এই দিয়ে ছাতু খাওয়ার কথা ভেবে জিভে জল চলে আসে। 


বিগত শতাব্দীর সাত বা আটের দশকের (১৯৭১-৯০) কৈশোর পেরোনো আমরা তখন এই ধরনের আমকে ভুটভুটি নামে অভিহিত করেছি। আবার আরেকটি আম মধুচুষকী নামে পরিচিত ছিল। আহ্ কী তার স্বাদ, মধুর মতো রস। অথচ আকারে লিচুর মতো।


এর কয়েক দিন পরই যখন গোপালভোগ, খিরশা, ল্যাংড়াসহ আরও অন্যান্য রসালো, টসটসে, সুস্বাদু আম পাকার মধ্য দিয়ে ছাতুর স্বাদটা অনন্য মাত্রায় উপনীত হতো, যার রেশ ফজলী-বোগলা গুঁঠি (খিরশার কাছাকাছি স্বাদের ও নাবী জাতের) আম আসা পর্যন্ত থাকত। 


অনেকে আবার আম দিয়ে পান্তা ভাত খাওয়াকে রসনাবিলাসের অন্যতম অনুসঙ্গ মনে করতেন। আম দিয়ে এরকম অনেক খাবারই তো আমাদের রসনা তৃপ্তির সঙ্গে জড়িত। 


এই আমের মৌসুমে গরমকালে যখন মর্ণিং স্কুল হতো, তখন নাস্তা বা সকালের খাবার বলতে এই আম-ছাতুকেই বোঝাত। এটা ধনী-গরীব নির্বিশেষে সবার আবশ্যিক খাবার হিসেবেই পরিচিত ছিল। 


সেকালে ছোট্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহকুমা শহর থেকে বের হয়ে শহরতলী পেরুলেই পাওয়া যেত শুধুই অখণ্ড আমবাগান। আমের মৌসুমে আমাদের সহপাঠী কিংবা সমবয়সীদের নৈমিত্তিক নেশা ছিল সকাল-বিকাল আম কুড়াতে যাওয়া। একবার ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে, আর একবার বিকালবেলা স্কুল থেকে ফিরেই।


বাগানে গিয়ে কুড়ানো আমে ব্যাগ ভর্তি হতে খুব একটা সময় লাগত না। আর ঝড় হলে তো কথাই নেই। এক গাছের আম দিয়েই ব্যাগ-খুতি-বস্তা ভরে যেত। আবার কিছু অখ্যাত আম ছিল, যেগুলো গাছের নিচে পড়ে থেকে মাটির সঙ্গে পচে যেত। সেগুলো কেউ কুড়াতেও যেত না।


সেকালে বেশুমার ঝড়-বৃষ্টিও হতো। বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য-আষাঢ় মাসসমুহে ঝড়-বৃষ্টিহীন দিন ছিল না বললেই চলে। বিকাল হলেই উত্তর-পশ্চিম কোণে আঁধার-কালো মেঘের ঘনঘটা দেখা যেত। এসব ঝড়-বৃষ্টিতে অনেককেই আহত বা বজ্রপাতে মারা যেতেও দেখেছি।


আমের মান সম্পর্কেও একটা সর্বগ্রহণযোগ্য পর্যবেক্ষণ, অভিজ্ঞতা ও অভিমত রয়েছে। যেমন, মহানন্দা নদীর দুই পারের আমের মধ্যে বিস্তর ফারাক। নদীর এপারের অর্থাৎ শহরের মধ্যের গাছের ফজলী আমের স্বাদ ওপারের চেয়ে ঢের বেশী।


ওই সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের আমবাজার বলতে 'সাধুর ঘাট'-কেই বোঝাত। বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি। সেখান থেকে আমের বাজার দাউদপুর রোড, সদরঘাট, পুরাতন বাজার পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে যেত। 


তখনকার সময় মণ বা কেজি দরে নয়, আম বিক্রি হতো শতক হিসেবে। লিচু বিক্রি হতো হাজার হিসেবে। এখনকার মতো প্লাস্টিকের ক্যারেটে নয়, আম চালান হতো বাঁশ বা নলখাগড়ার ঝুড়িতে। 


এসব স্মৃতিকথন এখনকার প্রজন্মের কাছে অতিকথন। এমনকি অবিশ্বাস্য ঠেকতে পারে। তবে সেকালের কৈশোর পেরোনো সবাইকে নিশ্চিতভাবেই কৈশোরক স্মৃতিতে আচ্ছন্ন করবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।


লেখক: আবুল বাশার বাদল
ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক
 

মুক্তমত বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর