ঢাকা, ৩১ মার্চ সোমবার, ২০২৫ || ১৭ চৈত্র ১৪৩১
good-food
৩৮

ঈদের ছুটি: বাড়ির নিরাপত্তা জোরদার করার যত উপায়

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ০১:৪৫ ২৮ মার্চ ২০২৫  

ঈদের সময়ে মানুষে ভরা ঢাকা শহর হয়ে যায় খালি। অনেকে গ্রামের বাড়ি, দেশের বাইরে বা বিভিন্ন রিসোর্টে পরিবার নিয়ে ঘুরতে যান। তাই বাড়ি ফাঁকা থাকায় দুর্ঘটনা, চুরি-ডাকাতির প্রবণতা বাড়ে। যে কারণে ঈদের ছুটিতে বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার আগে কিছু প্রাথমিক প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি।

 

দরজা-জানালা ভালোভাবে বন্ধ ও নিরাপদ রাখা

“ঘরের প্রধান নিরাপত্তা ব্যবস্থা হল দরজা এবং জানালা। বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার আগে এগুলো ভালোভাবে বন্ধ করা নিশ্চিত করতে হবে। যেসব জানালা বা দরজা সহজেই খোলা যেতে পারে, সেখানে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা যেমন শক্তিশালী লক, সিকিউরিটি গ্রিল বা চেইন লক ব্যবহার করা উচিত।” পরামর্শ দেন সরকারি গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের গৃহায়ণ ও গৃহব্যবস্থাপনা বিষয়ের অধ্যাপক রিনাত ফৌজিয়া।

 

তিনি আরও বলেন, “বিশেষ করে নিচতলা বা সহজলভ্য জানালাগুলো আরও বেশি নিরাপদ রাখতে হবে। কারণ এগুলোই সাধারণত চোরদের লক্ষ্য হয়ে থাকে। দরজা বা জানালা সঠিক ও নিরাপদ ভাবে বন্ধ না থাকলে চুরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।”

 

সিসিটিভি বা সিকিউরিটি ক্যামেরার ব্যবস্থা করা

আজকাল প্রযুক্তির সাহায্যে বাড়ির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অনেক সহজ। সিসিটিভি ক্যামেরা এমন একটি আধুনিক পদ্ধতি যা বাড়ির প্রতিটি কোনায় নজর রাখতে সাহায্য করে। সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হলে দূর থেকেও বাড়ির কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা যায় এবং সন্দেহজনক কোনো ঘটনা ঘটলে তা সনাক্ত করা ও ব্যবস্থা নেওয়া যায়। বিশেষ করে যারা শহরের বাইরে বা গ্রামে ছুটিতে যাচ্ছেন, তাদের জন্য সিসিটিভি ক্যামেরা খুবই কার্যকর একটি ব্যবস্থা হতে পারে।

 

সিসিটিভি ক্যামেরা ছাড়াও কিছু ‘অ্যাডভান্সড সিকিউরিটি ক্যামেরা’ আছে, যেগুলোর মাধ্যমে মোবাইল ফোনে নোটিফিকেশন পাওয়া যায়, যা সাথে সাথে সতর্ক করে দেয়। “বাজারে বিভিন্ন দামের ও প্রতিষ্ঠ সিসিটিভি ক্যামেরা পাওয়া যায়। তাই ঈদে বাড়ি যাওয়ার কয়েকদিন আগেই বাসায় ক্যামেরা বসিয়ে নিন। এতে ক্যামেরা সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা তা দেখারও সুযোগ পাবেন” বলেন রিনাত ফৌজিয়া।

 

নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের সেবা গ্রহণ

চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি বেড়ে যাওয়ার কারণে এবার ঈদের ছুটিতে খালি বাড়ি নিয়ে অনেকেই চিন্তায় পড়েছেন। ফাঁকা বাড়ির নিরাপত্তার জন্য অনেকেই বেসরকারি সিকিউরিটি কোম্পানি বা নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠনের সেবা নিচ্ছেন। কোন দুর্ঘটনা এড়াতে যা কার্যকর ব্যবস্থা হতে পারে।

 

ইগল সিকিউরিটি সার্ভিস প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক নাসিরুল আলম খান বলেন, “এ বছরে সিকিউরিটি সেবা নেওয়ার সংখ্যা অনেক বেশি।“ তার কথায়, “বাড়ির নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য দুটি পদ্ধতিতে সেবা নেওয়া যায়। প্রথম পদ্ধতিতে কর্মীরা নিয়মিত পেট্রোলিং করবে এবং কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে তা তৎক্ষণাৎ জানিয়ে দেবে। এই সেবা সাধারণত ২৪ ঘণ্টা থাকে এবং কোম্পানির কর্মীরা নিয়মিত বাড়ির আশপাশে নজর রাখেন। এতে বাড়ির মালিকদের মাঝে নিরাপত্তার ব্যাপারে সুনিশ্চয়তা আসে।”

 

“অন্যটি হল ঘরে কর্মীরা থেকেই নিরাপত্তা দেন এবং মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। যেহেতু ঘরে একজন কর্মী থাকবেন তাই ঘরে কিছু হারানো গেলে পুরো দায়িত্ব কোম্পানি নেবে। বাড়িতে থাকতে হলে প্রতিদিন ১ হাজার টাকা ও ২৪ ঘন্টা পেট্রোলিংয়ের জন্য কর্মীকে প্রতিদিন ৫শ’ টাকা দিতে হবে।”

 

প্রতিবেশীদের কাছে দায়িত্ব অর্পণ করা

যদি বাড়ি থেকে বেশ দূরে যেতে হয়, তবে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে সহায়তা নেওয়া খুবই কার্যকর হতে পারে। একজন বিশ্বস্ত প্রতিবেশী বাড়ির দায়িত্ব নিতে পারে এবং তারা যদি কোনো অস্বাভাবিক বা সন্দেহজনক কিছু দেখলেই অবগত করতে পারেন।

 

এমন কি যাওয়ার আগে তাদের জানিয়ে রাখা যেতে পারে- কোথায় যাচ্ছে, কখন ফিরবেন ইত্যাদি। এছাড়া বাড়ির দরজা বা জানালা বন্ধ রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য তাদের সাহায্য চাওয়া যেতে পারে। প্রতিবেশীদের সাহায্য কখনও কখনও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে যেহেতু তারা নিয়মিত আশপাশেই থাকেন।

 

আলোকসজ্জা

বাড়ির বাইরে পর্যাপ্ত আলোকসজ্জা রাখার মাধ্যমে ঘরের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা যায়। বিশেষত যদি রাতে কেউ বাড়ির আশপাশে অস্বাভাবিক চলাফেরা করে, তবে আলোর উপস্থিতি চোরদের জন্য বাধা হতে পারে। এছাড়া, সিসিটিভি ক্যামেরাও রাতের বেলা কাজ করবে। তবে ক্যামেরার কাজের জন্য পর্যাপ্ত আলো থাকা প্রয়োজন। তাই বাড়ির সামনে বা বাগানে আলোকসজ্জা রাখতে হবে যাতে, দূর থেকেও নিরাপদ এবং পর্যবেক্ষণযোগ্য থাকে।

 

অস্থায়ী আলার্ম পদ্ধতি ব্যবহার

এই ধরনের পদ্ধতিগুলো খুবই কার্যকর যা বাড়ির নিরাপত্তা শক্তিশালী করে। বিশেষত ‘মুভমেন্ট সেন্সর’ বা ‘ডোর-উইন্ডো সেন্সর’ ব্যবহার করলে, কোনো সন্দেহজনক কিছু ঘটলেই তৎক্ষণাৎ ‘অ্যাক্টিভ’ বা চালু হয়ে যাবে এবং সতর্ক করে দেবে।ঈদে বাড়ি যাওয়ার আগে এসব পদ্ধতি বসানোর মাধ্যমে বাড়ির নিরাপত্তা অনেকটাই নিশ্চিত হবে এবং কেউ যদি বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করে, তবে সিস্টেমটি সতর্কতা সংকেত দেবে।

 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অবস্থান না জানানো

অনেকেই আনন্দের মুহূর্ত ‘শেয়ার’ করার জন্য ফেইসবুক ইন্সটাগ্রামে ছবি দেন। তবে এটি বাড়ির নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। যোগাযোগ মাধ্যমে দেখে অনেকেই জানতে পারবে বাড়িতে কেউ নেই এবং সদস্যদের অবস্থান এখন কোথায় আছে। তখন চুরির উদ্দেশ্যে সহজেই বাড়ির ফাঁকা থাকার সুযোগ নিতে পারে। তাই ঈদে বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার আগে বা ভ্রমণে বের হওয়ার সময় নিজের অবস্থান শেয়ার করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন- অধ্যাপক রিনাত ফৌজিয়া। নিজের ব্যক্তিগত তথ্য গোপন রাখা এবং তা অপরিচিতদের সঙ্গে ‘শেয়ার’ না করা নিরাপত্তার স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ।

 

নিরাপত্তা বাড়াতে লক, দরজা

বাড়ির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধান গেটের লক বা তালা, দরজার লক, জানালার লক, মজবুত দরজার ব্যবস্থা করতে হবে। বাজারে এখন অনেক ‘অটোমেটিক লক’ বা তালা পাওয়া যায়। এমন কি আঙ্গুলের ছাপ বা পাসওয়ার্ড দিয়ে খুলতে হয় এমন তালাও পাওয়া যায়।

 

তালার সাথে মোবাইল ফোনের সংযোগ করার সুযোগ থাকলে সেটা করে নেওয়া যায়। অনলাইনে বা অনেক প্রতিষ্ঠানের এমন তালা বাজারে পাওয়া যায়। বাড়ির নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় থাকলে ভারী ও মজবুত দরজা ঈদে ঘুরতে যাওয়ার আগে লাগানো যেতে পারে। এতে বাড়ির সুরক্ষা বাড়বে- মত দেন এই অধ্যাপক।

লাইফস্টাইল বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর