ঢাকা, ২১ এপ্রিল সোমবার, ২০২৫ || ৭ বৈশাখ ১৪৩২
good-food
৫৭১

এইচএসসি পরীক্ষা বাতিল: বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে হতে পারে যেসব সমস্যা

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২১:২৯ ১০ অক্টোবর ২০২০  

করোনা মহামারির মধ্যে চলতি বছর জেএসসি ও এসএসসি ফলাফলের গড়ের মাধ্যমে এইচএসসি ফল নির্ধারণ করা হবে। যে কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

বাংলাদেশে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয় কোনো শিক্ষার্থীর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার যোগ্যতা আছে কি না। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার ফলও নির্ভর করে এ দুই পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলের ওপর। 

 

পাশাপাশি ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা মেডিকেলে পড়তে চাইলে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিতের মতো কয়েকটি নির্দিষ্ট বিষয়ে ন্যূনতম গ্রেড প্রয়োজন হয়। তাই পরীক্ষা না নিয়ে জেএসসি ও এসএসসি ফলের ওপর ভিত্তি করে এইচএসসি ফলাফল দেয়া হলে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে জটিলতা তৈরির সম্ভাবনা থাকে।

 

যে ধরনের জটিলতা তৈরি হতে পারে

 

বর্তমান নিয়মে বাংলাদেশে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় পাওয়া মোট নম্বরের ৪০ ভাগ এসএসসি ও এইচএসসি ফলাফলের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। তাই এ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা হলে শিক্ষার্থীদের যথাযথ মূল্যায়ন হবে না বলে মন্তব্য করেন শিক্ষা গবেষক সিদ্দিকুর রহমান।

 

তিনি বলেন, এসএসসির ১০%, এইচএসসির ৩০% এবং ভর্তি পরীক্ষার ৬০% নিয়ে পরীক্ষার ফলাফল নির্ধারণ করা হতো। কিন্তু এবার এইচএসসি পরীক্ষা না হওয়ায় ওই ৩০% আর থাকছে না। কাজেই ভর্তি পরীক্ষার ওপর জোর বেশি দিতে হবে।

 

এসএসসি ও জেএসসি ফলের গড়ের মাধ্যমে হওয়ায় ভর্তি পরীক্ষায় এইচএসসি ফল গণনা করা যুক্তিযুক্ত হবে না বলে মনে করেন সিদ্দিকুর রহমান।

 

জেএসসি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীদের একই বিষয় পড়তে হয়। এসএসসিতে বিভাগ আলাদা হওয়ার পাশাপাশি পৃথক বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হয়। ফলে এইচএসসির সব বিষয়ের ফল এ দুই পরীক্ষার গড়ের মাধ্যমে নির্ধারণ করা সম্ভব নয়।

 

তিনি বলেন, যে বয়সে শিক্ষার্থীরা জেএসসি পরীক্ষা দেয়, সেসময় তাদের মানসিক পরিপক্কতা আসে না। ওই পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে এইচএসসির ফল নির্ধারণ করা যুক্তিসঙ্গত বা বিজ্ঞানসম্মত নয়।

 

বিশেষ করে যেসব শিক্ষার্থী এসএসসি থেকে এইচএসসিতে বিভাগ পরিবর্তন করেছে, তাদের ফল নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি জটিলতা তৈরি হবে বলে মনে করেন এ শিক্ষা গবেষক। তিনি বলেন, কেউ হয়তো এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে ছিল। কিন্তু এইচএসসিতে পরিবর্তন করে মানবিক বিভাগ নিয়েছে। ওই বিভাগের নম্বরের ভিত্তিতে বর্তমান বিভাগে ফলাফল দেয়া হলে তা একেবারেই যুক্তিযুক্ত হবে না। এ জটিলতার ফলে সরকারি প্রকৌশল এবং মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় যোগ্যতা নির্ধারণের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হতে পারে। 

 

এইচএসসি পরীক্ষার পর যেসব শিক্ষার্থী দেশের বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চান, তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন সিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেন, পরীক্ষা না নিয়েই মূল্যায়ন করার ফলে বিদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই হয়তো এ শিক্ষার্থীদের নিতে চাইবে না। তবে এটি তাদের নীতির উপর নির্ভর করে।

 

পরামর্শক কমিটি যা বলছে

 

গত ৭ অক্টোবর শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি জানান, জেএসসি ও এসএসসি ফলের ভিত্তিতে কীভাবে এইচএসসি ফল ঠিক করা হবে, তা নির্ধারণ করবে এ বিষয় সংক্রান্ত পরামর্শক কমিটি। এর সদস্য ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিয়াউল হক জানান, ঠিক কোন নীতি অনুসরণ করে ফলাফল নির্ধারিত হবে, সেই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া না হলেও তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের কাজ করা হচ্ছে।

 

তিনি বলেন, কীভাবে জেএসসি পরীক্ষা ও এসএসসি পরীক্ষার বিষয়গুলো যুক্ত করে এইচএসসির বিষয়গুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত করা যায়, তা নিয়ে পরামর্শক কমিটি কাজ করছে। পাশাপাশি আমাদের নিজস্ব টেকনিক্যাল কমিটিও কাজ করছে। এসএসসি থেকে এইচএসসিতে যেসব শিক্ষার্থী বিভাগ পরিবর্তন করেছে, তাদের বিষয়টিও পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

 

জিয়াউল হক বলেন, শুধু বিজ্ঞান থেকে মানবিক বা ব্যবসা শিক্ষায় নয়, কারিগরি শিক্ষা অথবা মাদ্রাসা থেকে সাধারণ শিক্ষায় যোগ দেয় শিক্ষার্থীরা। আবার প্রাইভেট, মান উন্নয়ন শিক্ষার্থীও আছে। প্রতিটি ক্ষেত্রই আমরা শনাক্ত করেছি এবং একটার সঙ্গে আরেকটাকে সম্পৃক্ত করতে যা করা দরকার তা নিয়ে কাজ করছি।

 

তবে এইচএসসি পরীক্ষা না নেয়া হলেও বিদেশে পড়ালেখা করতে যাওয়ার ক্ষেত্রে এ শিক্ষার্থীরা সমস্যার মধ্যে পড়বে না বলে মনে করেন তিনি। বলেন, আমাদের দেশ থেকে বিদেশে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির সময় তারা শুধু দেখে শিক্ষার্থী টুয়েলভ গ্রেড পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে কি না। এরপর শিক্ষার্থীর মেধা যাচাইয়ে প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব পদ্ধতি অবলম্বন করে।

 

পরামর্শক কমিটির এ সদস্য বলেন, সারা পৃথিবীতে অনেক জায়গাই করোনার কারণে পাবলিক পরীক্ষা বা এক্সিট এক্সামগুলো নেয়া সম্ভব হয়নি। কাজেই আমাদের শিক্ষার্থীদের ভিন্নভাবে যাচাই করা হবে বলে আমার মনে হয় না।