ঢাকা, ২১ নভেম্বর বৃহস্পতিবার, ২০২৪ || ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৬১৪

একটি ঐতিহাসিক সাক্ষাৎকার

আহমদ সফিউদ্দিন

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২০:১৫ ৮ নভেম্বর ২০২৩  

জাহানারা কামারুজ্জামানের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন আহমদ সফিউদ্দিন ও সুলতানা শারমিন। 

জাহানারা কামারুজ্জামানের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন আহমদ সফিউদ্দিন ও সুলতানা শারমিন। 

জাতীয় নেতা এএইচএম কামারুজ্জামান জেলখানায় শেষ দিনগুলোতে ডায়েরি লিখতেন সারা রাত ধরে। স্ত্রী জাহানারা জামান জেলখানায় দিয়ে আসতেন গাদা গাদা নোট, খাতা আর কলম। কামারুজ্জামান বলতেন, আরো কাগজ কলম দাও। এত অল্প করে আনো কেন? কিন্তু সেসব লেখাসহ ডায়েরিগুলো রহস্যজনক কারণে জেলখানা থেকে আর ফেরত পাননি জাহানার জামান। জীবদ্দশায় দুঃখ ছিল তাঁর মনে। উনার মূল্যবান জিনিসটিই আজও আমি পাইনি, বলেছিলেন তিনি।

 

মৃত্যুর আগে জাহানারা জামান দেখে যেতে পারেননি নিহত স্বামীর শেষ স্মৃতিচিহ্ন। ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ দলিল। উদ্ধার করা যায়নি জেলখানায় লেখা জাতীয় নেতার সেসব ডায়েরি। কে বা কারা তা গায়েব করে তারও কোনও তদন্তও হয়নি। 

 

ডায়েরিগুলো উদ্ধারের জন্য তেমন কোনও সরকারি উদ্যোগও নেয়া হয়নি। বিশেষ তদন্ত কমিটি করে এটি উদ্ধারের চেষ্টা করা উচিত। কেননা ঘটনার সাক্ষী অনেকেই এখনও জীবিত। প্রচেষ্টা সফল হলে হয়তো অজানা অনেক তথ্য উন্মোচিত হবে, যা বাংলাদেশের ইতিহাস পুনঃনির্মানে সহায়ক হতে পারে।

 

এএইচএম কামারুজ্জামান অত্যন্ত মেধাবী ব্যক্তিত্ব ছিলেন। দখল ছিল সাতটি ভাষার ওপর। বাংলা, ইংরেজি, আরবি, উর্দু, হিন্দি, ফারসি ও সংস্কৃত। লিখতেন কবিতাও।  

 

আওয়ামী লীগ প্রথম দফায় ক্ষমতায় আসারও মাস ছয় আগে ১৯৯৫ সালের ৩১ অক্টোবর রাজশাহীর সাপ্তাহিক দুনিয়ায় প্রকাশিত সাক্ষাতকারে শহীদজায়া বলেন, (রাজশাহীতে লাশ দাফনের পর) ঢাকায় ফিরে জেলখানায় গেলাম উনার ডায়েরিগুলো আনতে। ফেরত দিলো কাপড়-চোপড় থালা-বাটিসহ সুটকেশ। ডায়েরি পেলাম না। বললাম এসব নিয়ে আমি কী করবো? এগুলো কেবল কষ্ট বাড়াবে। ডায়েরিগুলো দেন। নোটখাতা গুলো দেন।

 

জেলার বললেন, ডায়েরি আমরা পাইনি। অথচ যখন দেখা করতে যেতাম গাদা গাদা নোট, খাতা ও কলম দিয়ে আসতাম। লিখতে লিখতে ডায়েরি শেষ হয়ে গিয়েছিল। বলতেন আরো কাগজ কলম দাও। এত অল্প করে আনো কেন? 

 

উনার মূল্যবান জিনিসটি আজও আমি পাইনি। কি যে লিখেছিলেন ওতে জানতে পারিনি। এটা আমার অধিকারের জিনিস। তাও আমাকে দেয়া হয়নি। খোন্দকার আসাদুজ্জামান (সাবেক সচিব) একসঙ্গে ছিলেন। পরে উনার কাছে শুনতে গেছি জেলের কথা। বললেন, স্যার সারারাত ঘুমাতেন না।জায়নামাজে থাকতেন। আমাদের ইমামতি করতেন। আর লিখতেন সব সময়। 

 

২০১৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় জাহানারা জামান (৮৪) ইন্তেকাল করেন। (জাহানারা জামানের এই সাক্ষাৎকারটি তাঁর উপশহর বাসভবনে খায়রুজ্জামান লিটনের উপস্থিতিতে ১৯৯৫ সালে আমি এবং আমার স্ত্রী সাপ্তাহিক দুনিয়া সম্পাদক সুলতানা শারমিন গ্রহণ করি। দুজনের নোট থেকে রিপোর্টটি শারমিন তৈরি করেন এবং তাঁর নামে প্রকাশিত হয় ৩১ অক্টোবর ১৯৯৫ সাপ্তাহিক দুনিয়ায়। এটি পুনরায় ছাপা হয় জনকণ্ঠে ১১ জুন ১৯৯৬ সালে, জাতীয় নির্বাচনের আগের দিন যাতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হয়।) 

 

লেখক: আহমদ সফিউদ্দিন

সাংবাদিক ও সাবেক ডেপুটি রেজিস্ট্রার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

সাক্ষাৎকার বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর