ঢাকা, ০৮ সেপ্টেম্বর রোববার, ২০২৪ || ২৪ ভাদ্র ১৪৩১
good-food
১২৩

এবার আছাদুজ্জামানের ছেলে-স্ত্রীর আলিশান বাড়ি, দামি প্লটের সন্ধান!

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ০০:০৮ ২১ জুন ২০২৪  

সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে আসিফ মাহাদীনের ঢাকায় আলিশান বাড়ি, আফতাবনগরে দামি প্লট এবং ভাঙ্গায় এক একর জমি রয়েছে। সম্প্রতি আছাদুজ্জামানের অবৈধ সম্পদ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এরপরই তার ছোট ছেলের নামে এসব সম্পদের গুমর ফাঁস হলো। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত নথি ও উপাত্ত সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়েছে। স্বাভাবিকভাবেই তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

 

নথিতে দেখা যায়, আসিফের জন্ম ২০০০ সালের ২৭ নভেম্বর। মাত্র ২৩ বছর বয়সে রাজধানী নিকুঞ্জ-১ আবাসিক এলাকার ৮/এ রোডের ৬ নম্বর বাড়ির মালিক হয়েছেন তিনি। যার বাজারমূল্য ১০ কোটি টাকার বেশি। তার নামে আফতাবনগরে ৫ কাঠা প্লট আছে। যার বর্তমান বাজারমূল্য ৫ কোটি টাকার অধিক। এছাড়া ভাঙ্গা এলাকায় আসিফের নামে ১ একর জমি রয়েছে।

 

আছাদুজ্জামানের এই ছেলে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। দেশটিতে তার বাবা বিভিন্ন সম্পত্তি গড়েছেন। সম্প্রতি আছাদুজ্জামান ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা বিপুল সম্পদের তথ্য প্রকাশ হয়। উল্লেখিত সম্পদের তুলনায় সাবেক ডিএমপি কমিশনারের প্রকৃত সম্পদ কত বেশি হতে পারে, তা নিয়ে কৌতুহল তৈরি হয়েছে।গণমাধ্যমের প্রতিবেদন এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়ানো নথি অনুযায়ী, আছাদুজ্জামানের নামে পূর্বাচলের নিউ টাউনের ১ নম্বর সেক্টরের ৪০৬/বি রোডে ১০ কাঠা জমি রয়েছে। যার মূল্য ১ কোটি টাকারও বেশি। এছাড়া আফতাবনগর ৩ নম্বর সেক্টরের এইচ ব্লকের ৮ নম্বর রোডের ৩৬ নম্বর প্লটে তার ২১ কাঠা জমি আছে।

 

আছাদুজ্জামানের স্ত্রী আফরোজা জামানের নামে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এল ব্লকের লেন-১-এ ১৬৬ ও ১৬৭ নম্বরে ছয়তলা আলিশান বাড়ি রয়েছে। বর্তমানে বাড়িটি স্কুল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই সম্পত্তির বাজারমূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা। আফরোজার নামে ইস্কাটন গার্ডেন ১৩/এ প্রিয়নীড়ে ফ্ল্যাটের সন্ধান পাওয়া গেছে। ২০১৮ সালে তিনি বিশেষ কোটায় রাজউক থেকে প্লট বরাদ্দ পান। অথচ রাজউকের নীতিমালা অনুযায়ী, স্বামী-স্ত্রীর প্লট পাওয়ার সুযোগ নেই।

 

আফরোজার নামে গাজীপুর, ফরিদপুর ও নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে জমির সন্ধান মিলেছে। গাজীপুরের কালীগঞ্জের চাঁদখোলা মৌজায় তার নামে ১৩৭ শতাংশ জমি রয়েছে। ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে তা কেনা হয়। ২০২০ সালে একই এলাকার সাহারা মৌজায় ১৫ কাঠা জমি কেনেন। এছাড়া ২০১৮ সালে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কৈয়ামসাইল-কায়েতপাড়া মৌজায় ৬০.৬০ একর জমি কেনেন তিনি।প্রতিবেদন ও নথি অনুযায়ী, আছাদুজ্জামান ও তার পরিবারের সদস্যদের মালিকানায় অন্তত দুটি কোম্পানির সন্ধান পাওয়া গেছে। স্ত্রী আফরোজা উভয় কোম্পানির অংশীদার এবং মৌমিতা ট্রান্সপোর্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

 

আছাদুজ্জামান ডিএমপি কমিশনার থাকাকালে রাজধানীর রুট পারমিট কমিটির প্রধান ছিলেন। তার আমলে মৌমিতা পরিবহনকে রুট পারমিট দেয়া হয়। মৌমিতা ট্রান্সপোর্ট লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান হারিসুর রহমান সোহান আফরোজার সৎ ভাই। একসময় তিনি লেবার ভিসায় সৌদি আরবে গেলেও পরে বাংলাদেশে ফিরে ব্যবসা শুরু করেন।আফরোজা শেফার্ড কনসোর্টিয়াম লিমিটেড নামে আরেকটি কোম্পানির চেয়ারম্যান। যার পরিচালক আসাদুজ্জামানের বড় ছেলে আসিফ শাহাদাত। সম্প্রতি আছাদুজ্জামান দাবি করেন, বৈধভাবে উপার্জিত অর্থ দিয়ে সম্পদ কিনেছেন এবং বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন তিনি। সরকারকে বিব্রত করতে পরিকল্পিতভাবে এসব প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।

 

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে দুর্নীতি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে সেগুলো অর্জন করেন। আইন রক্ষার পরিবর্তে ভক্ষকে পরিণত হয়েছেন তারা।এসব বিষয়ে সরকার ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবস্থান স্পষ্ট করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন টিআইবি নির্বাহী পরিচালক। সেই সঙ্গে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বা ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দৃঢ় সংকল্প দুদকের আছে কিনা সংশয় রাখেন তিনি।

 

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. সালাহ উদ্দিন রিগ্যান বলেন, দুর্নীতির অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নেয়া দুদকের কাজ। সাংবাদিকরা দুদকের কাজ ১২ আনা করে দিচ্ছে। তারা দাগ, খতিয়ান, বাড়ি নম্বর বের করে দিচ্ছে। তবু দুদক অনুসন্ধান করতে না পারলে কর্তব্যে অবহেলা বলে ধরে নেয়া যায়। তিনি বলেন, এখন দুদকের উচিৎ নিজ দায়িত্বে সবকিছু অনুসন্ধান করা। আর যদি না পারে তাহলে মনে করতে হবে তারা দন্ত্যহীন বাঘে পরিণত হয়েছে।

অপরাধ বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর