ঢাকা, ২১ ডিসেম্বর শনিবার, ২০২৪ || ৭ পৌষ ১৪৩১
good-food
২০৪

কড়া শাসনে আদৌ কি সন্তানের ভালো হয়!

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ০২:৫০ ৩ আগস্ট ২০২৪  

সন্তানকে বড় করতে গিয়ে অনেক সময় কঠোর আচরণ করেন বাবা-মা। কড়া শাসন ও নানা নিয়মবিধির মধ্যে ফেলে দেন সন্তানে দৈনন্দিন জীবন। অনেক সময় শিশু কথা না শুনলে, পড়াশোনা না করলে, কিংবা পরীক্ষায় আশানুরূপ ফল না করলেই শাস্তি পেতে হয়। কখনো ধমক, কখনো আবার হাতও উঠে যায় বাচ্চার ওপর। কিন্তু এতে কি আদৌ শিশুর কোনো ভালো হয়? বদলায় কি পরিস্থিতি?

 

মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, সন্তানের কাছে বাবা-মায়ের প্রত্যাশা থাকে। তার আচরণ, পড়াশোনা, বেড়ে ওঠা সমস্ত ক্ষেত্রেই। সেই প্রত্যাশা পূরণ না হলে, হতাশা থেকেই অভিভাবক সন্তানকে বকাঝকা করেন বা কখনো মারধরও করে ফেলেন। কিন্তু ভাবতে হবে, এতে লাভটা কী হলো? শিশুকে বকলে বা শাসন করলেই কি তার পরিবর্তন হবে? যত ক্ষণ না সেই শিশু নিজের ঠিক-ভুল, উপলব্ধি করতে পারছে, তত ক্ষণ কিন্তু তার আচরণ বদলাবে না।

 

পেরেন্টিং কনসালট্যান্টদের মত, শাস্তি দিয়ে কিন্তু শিশুকে শোধরানো সম্ভব নয়। সে যদি ভুল করে, কোথায় ভুল, কেন ভুল, সেটা শিশুর বোঝা দরকার। বোঝার আগেই ধমক খেলে সে কিন্তু শোধরাবে না। বরং তার মনে ভয় তৈরি হবে। সে ধীরে ধীরে বিভিন্ন কথা লুকোতে শুরু করবে।

 

শাসনে শিশুর ওপর কী প্রভাব পড়তে পারে?

পড়াশোনা হোক বা অন্য কারণ, ক্রমাগত বকাবকি বা মারধরে শিশুর মনে প্রভাব পড়তে পারে। শিশু এ ক্ষেত্রে হয় নিজেকে গুটিয়ে নিতে পারে, না হলে তার মধ্যে রাগ, ক্ষোভ, হতাশার জন্ম হতে পারে। এর প্রভাব শিশুর ভবিষ্যৎ জীবনেও পড়তে পারে। তার ব্যক্তিত্ব গঠনে সমস্যা হতে পারে। রাগ, ক্ষোভ ক্রমাগত জমতে থাকলে, একসময় সে ধ্বংসাত্মক পথে হাঁটতে পারে। নিজের ক্ষতি করে ফেলার সম্ভাবনাও সে ক্ষেত্রে উড়িয়ে দেয়া যাওয়া না। আবার কোনো কোনো শিশু আত্মবিশ্বাসের অভাবে নিজেকে গুটিয়েও নিতে পারে। বিষণ্ণতা, হতাশা গ্রাস করতে পারে।

 

শিশু মনোবিশেষজ্ঞর মতে, ক্রমাগত ধমক, মার খেতে খেতে শিশুরা অনেক সময় প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে উঠতে পারে। কারণ, সে বড়দের সামনে কিছু করতে পারছে না। সেই রাগ, ক্ষোভ মনে জমছে। সেই রাগ সে অপেক্ষাকৃত দুর্বলের উপর দেখাতে পারে।

 

ভীতি জন্মাবে

স্কুল যাওয়া, পড়াশোনা, পরীক্ষা, এগুলো ধীরে ধীরে শিশুর জীবনে প্রবেশ করে। তবে যদি পড়া নিয়ে বেশি চাপ দেয়া হয়, অঙ্ক ভুল করলে, নামতা ভুল বললে প্রচণ্ড বকবকি করা হয়, তবে কিন্তু শিশুর মনে আগ্রহ তৈরি হওয়ার বদলে ভীতি জন্মাতে পারে।

 

উদ্বেগ

অতিরিক্ত শাসন শিশুর মনে আতঙ্ক তৈরি করতে পারে। যা থেকে একসময় উদ্বেগ তৈরি হওয়া অস্বাভাবিক নয়। শিশু ভুল করবে, শিখবে। তারও নিজস্ব জগৎ আছে। সেই জগতে সে যদি প্রতি মুহূর্তে শাস্তির ভয় পায় তা এক সময় মানসিক সমস্যা তৈরি করতে পারে। বাবা-মায়ের প্রত্যাশাপূরণের চাপ, বকাবকি, শাস্তির ভয় শিশুমনে গভীর রেখাপাত করতে পারে। যার ফলে উদ্বেগের সমস্যা হওয়াও অস্বাভাবিক নয়।

 

সিদ্ধান্ত ও মেলামেশায় সমস্যা

কোনো কোনো বাবা-মায়েরা কথায় কথায় শিশুর ভুল ধরেন। তাদের মতামতের তোয়াক্কা করেন না। অনেক সময় অন্য শিশুদের সঙ্গে তুলনা টানেন। এই ধরনের বিষয়গুলি শিশুর ভবিষ্যত জীবনে খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। এতে শিশুর মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখা দিতে পারে। অন্যের সঙ্গে তুলনা টানার প্রবণতায়, শিশুর মধ্যে নিজেকে গুটিয়ে নেয়ার প্রবণতা তৈরি হতে পারে। আর পাঁচ জনের সঙ্গে স্বাভাবিক মেলামেশা করার বিশ্বাসটাই হারিয়ে ফেলতে পারে সে। প্রতি মুহূর্তে কোনো কাজ করার আগে বার বার জিজ্ঞাসা করার প্রবণতা তৈরি হতে পারে।

 

অভিভাবকের করণীয়

দুষ্টুমি করলে, কথা না শুনলে সন্তানকে বোঝাতে হবে। পড়াশোনায় যদি শিশু অমনোযোগী হয় বা খারাপ ফল করে, তা হলে তার কারণ খোঁজার চেষ্টা করতে হবে। পড়াশোনা করতে গিয়ে সন্তানের কোথাও কোনো অসুবিধা হচ্ছে কি না, সেটা আগে জানতে হবে। যদি দেখা যায়, এমনিতে সমস্যা নেই কিন্তু সে অমনোযোগী, সে ক্ষেত্রে কেন মনোযোগের অভাব হচ্ছে তা জানার চেষ্টা করতে হবে। অনেক সময় শিশুরা খুব ছটফটে হয়। দুষ্টুমি করে। সে ক্ষেত্রে তাদের যদি মাঠে বা খোলা জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায়, সে আনন্দে থাকবে।