ঢাকা, ০৮ সেপ্টেম্বর রোববার, ২০২৪ || ২৪ ভাদ্র ১৪৩১
good-food
৯৩

কবে-কীভাবে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা চালু হলো

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ০৩:২১ ১৭ জুলাই ২০২৪  

সরকারি চাকরিতে ১৯৭২ সাল অর্থাৎ স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৭৬ পর্যন্ত ২০ শতাংশ পদে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হতো। আর বাকি ৮০ শতাংশ পদে কোটায় নিয়োগ হতো। পড়ে ১৯৭৬ সালে কোটা পদ্ধতিতে সংস্কার করে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের হার বাড়িয়ে তা ৪০ শতাংশ করা হয়। আর ১৯৮৫ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে ৪৫ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের নিয়ম চালু করা হয়। বাকি ৫৫ শতাংশ অগ্রাধিকার কোটায় নিয়োগ দেয়া হয়।

 

ওই অগ্রাধিকার কোটার মধ্যে রয়েছে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, ১০ শতাংশ নারী, ১০ শতাংশ জেলা কোটা ও ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী। পরে ১ শতাংশ পদ প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের দিয়ে পূরণের নিয়ম চালু করে মোট কোটা দাঁড়ায় ৫৬ শতাংশ। শুরু থেকেই মুক্তিযোদ্ধা কোটা ছিল। পরে এ কোটায় মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং তারপর নাতি-নাতনি যুক্ত করা হয়।

 

প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কোটার বিপুল পদ শূন্য থাকত। একপর্যায়ে সিদ্ধান্ত হয়, কোটায় উপযুক্ত প্রার্থী পাওয়া না গেলে তা মেধাতালিকা থেকে পূরণ করা হবে।

 

ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০১৮ সালে পূর্বের সব কোটা পদ্ধতি সংস্কার করে তা ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবিতে আন্দোলনে নামে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। সেই আন্দোলনের তোপে পড়ে সরকার একপর্যায়ে ওই বছর নবম থেকে ১৩তম গ্রেডের (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে। তবে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে কোটা বহাল থাকে। এই দুই শ্রেণিতে পোষ্য, আনসার-ভিডিপিসহ কিছু কোটা রয়েছে।

 

কিন্তু ২০২১ সালে কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হাইকোর্টে রিট করলে চলতি বছরের ৫ জুন এক রায়ের মাধ্যমে আবারো ফিরে আসে ২০১৮ সালে বাতিল করা সেই কোটা পদ্ধতি। এরপর কোটা বাতিলে ফের একাট্টা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ফের সেই কোটা আন্দোলনকে তরান্বিত করতে গত ১ জুলাই আবারো রাজপথে নামেন তারা। ইতোমধ্যে এই আন্দোলন দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে।

 

উচ্চ আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ফের দেশব্যাপী উত্তপ্ত হওয়ার বিষয়টি মূলত ৫ জুন হাইকোর্ট নবম থেকে ১৩তম গ্রেডের পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায়ের পড়ে। পড়ে এ রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে, যা ৯ জুন চেম্বার আদালতে ওঠে। সেদিন চেম্বার আদালত আবেদনটি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে ৪ জুলাই শুনানির জন্য নির্ধারণ করেন।

 

এদিন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে (নবম থেকে ১৩তম গ্রেড) মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণার রায় স্থগিত করেননি। হাইকোর্টের দেয়া রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের শুনানি মুলতবি করা হয়েছে। তবে বিষয়টি এখন আদালতে বিচারাধীন।

 

এসবের পরিপ্রেক্ষিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে সরকারের জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল এবং ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে উত্তাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। রবিবার (৭ জুলাই) সারাদেশে সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে শিক্ষার্থীরা।