ঢাকা, ২৬ নভেম্বর মঙ্গলবার, ২০২৪ || ১২ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৭৭৫

করোনা ভাইরাস: চীন ফেরত বাংলাদেশিদের নিয়ে ফেসবুকে বিতর্ক

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২০:১৪ ২ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

চীনের উহান শহরে করোনা ভাইরাসের ব্যাপক প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। এর কারণে কয়েকশ মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। এর পর সেখানে থাকা ৩০০'র বেশি বাংলাদেশি নাগরিককে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, রাজধানীর আশকোনায় হজক্যাম্পে কোয়ারেন্টাইনে আগামী দুই সপ্তাহ পর্যবেক্ষণে রাখা হবে তাদের। তবে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর চীনের ওই এলাকা থেকে এসব বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
অনেকে সরকারের এমন পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেও ভিন্নমত দিয়েছেন কেউ কেউ। এদের মতামত হলো, ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে এদের দেশে ফিরিয়ে না এনে চীনেই চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়া উচিত ছিল। তাদের যুক্তি, বাংলাদেশের তুলনায় সেখানেই এ ভাইরাসের চিকিৎসার সুব্যবস্থা রয়েছে।
মূলত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ বিতর্কে জড়িয়েছেন ব্যবহারকারীরা। যারা বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনার পক্ষে মত দিয়েছেন, তাদের বেশিরভাগই উহান ফেরতদের শুভকামনা করে পোস্ট দিয়েছেন। একইসঙ্গে বলেছেন, তাদের আলাদা স্থানে পর্যবেক্ষণে রাখার সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী।
সামিয়া নুর নামে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী বলেছেন, সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। আশা করি, আত্মীয়-স্বজনরা ওখানে গিয়ে ভিড় জমাবে না।
এমডি হারুনুর রশিদ নামে আরেক ফেসবুক ব্যবহারকারী বিশেষ বিমানে করে বাংলাদেশিদের দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়টিকে একটি "চমৎকার উদ্যোগ" বলে বর্ণনা করেছেন।
গৌতম কে. সান্যাল বলেন, সরকার ভালো পদক্ষেপ নিয়েছে। আশা করছি, ভালো কোয়ারেন্টাইনের মাধ্যমে খারাপ কিছু হবে না। ভালো সংবাদ হচ্ছে, উহানে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর এখনো কোনও বাংলাদেশি আক্রান্ত হননি।
তবে বিষয়টিকে ইতিবাচক বলে মনে করছেন না আবার অনেকেই। তামান্না নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী নিজের পোস্টে বলেছেন, যেটা করল, মোটেই ভালো না। এবার বাংলাদেশ বুঝবে কত ধানে কত চাল।
লুকমান আহমেদ নামে একজন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এবার পুরো দেশ আক্রান্ত হবে।
অনেক ব্যবহারকারী আবার ফিরিয়ে আনা বাংলাদেশিদের ঢাকায় রাখার সমালোচনা করেছেন। তারা বলছেন, রাজধানীর জনবহুল হওয়ার কারণে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বেড়েছে। তারা চীন থেকে নাগরিক ফিরিয়ে নেয়া অন্যদেশগুলোর উদাহরণ টেনেছেন।
স্বপন মোল্লাহ নামে আরেকজন বলেছেন, অস্ট্রেলিয়া তাদের শিক্ষার্থীদের দেশে ফেরত নিয়ে গিয়ে মূল ভূখণ্ড থেকে ২০০০ কিলোমিটার দূরে রেখেছে। আর আমাদের গুলোকে আশকোনায়...যেখানে লাখ লাখ লোকের বাস।
কিন্তু এমন বিতর্কের মুখে কী বলছেন স্বাস্থ্যখাত সংশ্লিষ্টরা? রোগ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়ার পরই নাগরিকদের ফিরিয়ে আনা হয়েছে কি-না, এমন এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ডা. সানিয়া তাহমিনা বলেন, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, যেহেতু বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তাই এমন পরিস্থিতিতে যে ধরণের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করে নাগরিকদের ফিরিয়ে আনতে হয়, সবকিছু করতে বাংলাদেশ প্রস্তুত।
ডা. তাহমিনা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক এবং রোগ নিয়ন্ত্রণ ও সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক। তিনি জানান, যারা ফিরে আসবে, তারা ফ্লাইট থেকে নামার পর সেটিকে কিভাবে ডিসইনফেকট্যান্ট বা জীবাণুমুক্ত করা হবে, সব নির্দেশনা দিয়ে ১১ জন ক্রুকেও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
এ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, যারা ফিরে এসেছে, তাদেরও কী করতে হবে, সেটিও ওদের হাতে লিখিত আকারে দেয়া হয়েছে। তারা বিমানবন্দরে কোনও বোর্ডিং ব্রিজে যায়নি। বরং তাদের সরাসরি আশকোনা ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

ডা. সানিয়া তাহমিনা বলেন, আশকোনা ক্যাম্পের পুরো এলাকা নিরাপত্তায় ঘিরে ফেলা হয়েছে। তবে তাদের এটা মনে হবে না, তারা বন্দী হয়ে আছেন। তার মতে, ফিরে আসা এসব বাংলাদেশিদের থেকে রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা একেবারেই নেই।
এসব বাংলাদেশিদের মধ্যে এ ১৪ দিনে কোনও ধরণের উপসর্গ দেখা দিলে তাদের চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য বেশ কয়েকটি হাসপাতালে বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর