ঢাকা, ২৫ নভেম্বর সোমবার, ২০২৪ || ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৪৬০

করোনা ভাইরাস নিয়ে ছড়াচ্ছে গুজব, কান দেবেন না

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২০:৪১ ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস খুব অল্প সময়ের মধ্যে চীনসহ প্রায় ২৫টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।  ফলে বাংলাদেশে উদ্বেগের পারদ নামছে না। মানুষের এ উদ্বেগে অনেকটা আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কিছু ফেক নিউজ।
যেখানে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পেছনে অদ্ভুত সব কারণকে দায়ী করা হচ্ছে। পাশাপাশি এর অনেক চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে বলা হচ্ছে। এমনকি বাংলাদেশে করোনা আক্রান্ত মানুষ শনাক্ত হয়েছে। এমন দাবিও তোলা হয়েছে।


যদিও এদেশে এখন পর্যন্ত কারও মধ্যে এ ভাইরাসের কোনও অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট (আইইডিসিআর)  এ তথ্য জানিয়েছে।

এ গুজব ছড়িয়ে পড়া নিয়ে উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, এ ধরণের ফেক নিউজ ভাইরাসের মতোই ক্ষতিকর হতে পারে।


সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এমন মন্তব্য করে এ ধরনের প্রচারে কান না দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আইইডিসিআরের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। এক্ষেত্রে উদ্বিগ্ন না হয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।


ফ্লোরা বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। যেগুলো জনমনে আতঙ্ক তৈরি করছে। যেমন ফেসবুকে আমি একটি পোস্ট দেখলাম - ভারতে ২ হাজারের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত। অথচ সত্যিটা হলো কেরালা রাজ্যে তিনজনের মধ্যে ভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। আর ২০০০ জন চীন থেকে ফিরেছেন।  তাদের কেবল পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তারা কেউ আক্রান্ত নন। এছাড়া বাংলাদেশের অমুক জেলায় করোনা রোগী সনাক্ত হয়েছে। এমন খবরও দেখেছি। যেগুলোর কোনও ভিত্তি নেই।

 

গত ১ ফেব্রুয়ারি চীনের উহান শহর থেকে ৩১২ জন বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে আনা হয়। তাদের মধ্যে ৩০১ জনকে আশকোনা হজ ক্যাম্পে এবং বাকি ১১ জনকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ১৪ দিনের কোয়ারান্টিনে রাখা হয়েছে। কারণ করোনা ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করার পর উপসর্গ প্রকাশ পেতে ১ থেকে ১৪ দিন সময় লাগে। প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষায় তাদের কারও মধ্যেই ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়নি।


চীন থেকে সম্প্রতি যারা বাংলাদেশে ফিরেছেন; বিশেষ করে এদেশে যেসব চীনা নাগরিক আছেন; তাদের কারও মধ্যে এ রোগের লক্ষণ দেখা যায়নি। তবুও এ ভুয়া খবরগুলোর কারণে এ মানুষগুলোকে পারিবারিকভাবে এবং সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হতে হচ্ছে বলে আক্ষেপ করেন মিস ফ্লোরা।


তিনি বলেন, চীন থেকে ফিরেছেন এবং ভাইরাসের প্রাথমিক উপসর্গ দেখা গেছে। এমন ৫১ জনের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন পরীক্ষা করা হয়েছে। কোনও পরীক্ষায় কারও মধ্যে ভাইরাস শনাক্ত হয়নি।
সতর্কতার অংশ হিসেবে বিমানবন্দরের পাশাপাশি দেশের নৌবন্দর, স্থলবন্দরগুলোতেও চীন থেকে ফেরত যাত্রীদের থারমাল ডিটেক্টরের সাহায্যে স্ক্রিনিং করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত বিমানবন্দরে দেশটি থেকে আসা ৭ হাজার ২৮৪ জনকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে। তাদের কারও শরীরে করোনা ভাইরাস পাওয়া যায়নি। 


এজন্য করোনা সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য প্রচারের আগে সেটা ভালোভাবে যাচাই করে নেয়ার পরামর্শ দেন ফ্লোরা। এছাড়া এ ভাইরাসের চিকিৎসা সংক্রান্ত কিছু গুজব ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। কোথাও বলা হচ্ছে, রসুন, লবঙ্গ, আদাজল খেলে করোনা ভাইরাস ভালো হয়। এ নিয়ে অনেকে বিভিন্ন ওষুধের বিজ্ঞাপনও প্রচার করছেন। যেগুলোর কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।


এ ব্যাপারে মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ করতে পারে এমন কোনও ভ্যাকসিন বা টিকা এখনো আবিষ্কার হয়নি। এ রোগের আলাদা চিকিৎসা পদ্ধতিও বের হয়নি। সাধারণ সর্দি, কাশি বা শ্বাসকষ্টে যে ধরণের চিকিৎসা দেয়া হয়। বিশ্বব্যাপী সেটাই দেয়া হচ্ছে। তাই গুজবে বিভ্রান্ত হবেন না।


এসব গুজবের কারণে একদিকে মানুষ যেমন আতঙ্কিত হয়ে পড়বে, তেমনি ভুল চিকিৎসার দিকে ধাবিত হয়ে আরও বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন। এমন অবস্থায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কিংবা আইইডিসিআর এর ওয়েবসাইটের তথ্য উপাত্ত যাচাই করে কিংবা স্বাস্থ্য অধিদফতরের মতামত নিতে বলেছেন ফ্লোরা। করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের বেশিরভাগ সেরে উঠছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো হলে এ রোগ কিছুদিন পর এমনিতেই সেরে যায়। হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন নেই। শুধু সাবধান থাকতে হয়।


ভাইরাসটি সম্পর্কে নতুন নতুন তথ্য আসছে। কিন্তু একজন রোগীর তথ্য যেটা কি না শুধু তার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, সেটা বিচার বিশ্লেষণ না করেই অনেক গণমাধ্যমে খবর প্রচার করা হয়েছে বলে আক্ষেপ করেন আইইডিসিআরের পরিচালক।


চীনা স্বাস্থ্য কমিশনের বরাত দিয়ে ফ্লোরা বলেন, করোনা ভাইরাসে যাদের মৃত্যু হয়েছে; তাদের মধ্যে ৮০% রোগীর বয়স ৬০ বছরের উপরে এবং ৭৫% রোগীর অন্যান্য রোগ যেমন ডায়াবেটিস, হৃদরোগ বা কিডনি সমস্যাও রয়েছে। এ থেকে বোঝা যায়, করোনা সবার জন্য মারাত্মক আকার নেয় না। তাই আমরা আশ্বস্ত করতে চাই এটি কোনও জটিল রোগ নয়। গুজবে আতঙ্কিত না হয়ে সাবধান থাকলেই এর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।