ঢাকা, ০৪ ডিসেম্বর বুধবার, ২০২৪ || ২০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৬১৪

করোনা: ভয়াবহ অপুষ্টি ঝুঁকিতে শিশুরা

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২০:৪৬ ২ জানুয়ারি ২০২১  

সমগ্র বিশ্বকেই মারাত্মকভাবে ঝুঁকিতে ফেলেছে করোনা। পুরো বিশ্বের জন্যই মহামারি রূপ নিয়েছে চীনের উহানে প্রথম শনাক্ত হওয়া ভাইরাসটি। পৃথিবীতে এমন কোনও সেক্টর নেই, যেখানে প্রভাব ফেলেনি প্রাণঘাতী এ ভাইরাস। 

 

করোনা অতিমারির কারণে সৃষ্ট আর্থ-সামাজিক সংকটে ২০২১ সালে দক্ষিণ এশিয়ার ৫ বছরের কম বয়সী ৩৯ লাখ শিশু অতিরিক্ত অপুষ্টিতে ভুগতে পারে। ফলে শিশুরা ভয়াবহ রকমের শীর্নকায় হবে। চিকিৎসা বিষয়ক সাময়িকি ল্যানসেটে প্রকাশিত এক সমীক্ষায় এ উদ্বেগজনক চিত্র ফুটে উঠেছে। 

 

সমীক্ষাটির বরাত দিয়ে জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফ সতর্ক করে বলেছে, অন্য রোগ-বালাইয়ের চেয়ে এ মহামারিতে শিশুরা বেশি ক্ষতির শিকার হবে। ল্যানসেটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী করোনায় শীর্নকায় অবস্থায় বা রুগ্নতার মুখে পড়তে পারে ৬৭ লাখ শিশু। এর অর্ধেকের বেশি প্রায় ৫৮ শতাংশ (৩৯ লাখ) হবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে। 

 

রুগ্নতাকে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ বলে বর্ণনা করেছে ইউনিসেফ। চরম অপুষ্টির কারণে শিশুরা এর শিকার হয়। ফলে তারা খুবই রোগা, পাতলা ও দুর্বল হয়। এতে শিশুর জীবন ঝুঁকিতে পড়ে। তাদের সঠিক শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটে না। 

 

সমীক্ষা বলছে, কোভিড-১৯ এর কারণে এ বছর নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুরা বেশি অপুষ্টিতে ভুগবে। দক্ষিণ এশিয়ায় এ সমস্যা বেশি প্রকট হবে। কেননা করোনার কারণে দেশগুলোর স্বাস্থ্য সেবা দীর্ঘদিন যাবত ব্যাহত হয়েছে। সরকারিভাবে শিশুদের টিকাদান ও ভিটামিন খাওয়ানো বেশ কয়েক মাস বন্ধ ছিল। বেসরকারিভাবে কোথাও কোথাও এ প্রক্রিয়া চালু থাকলেও তা ছিল দরিদ্র মানুষের নাগালের বাইরে।


সমগ্র বিশ্বে স্বাস্থ্য খাতে যা অবস্থা তা খুবই ভয়াবহ। জরুরি পদক্ষেপ না নিলে এ বছর তীব্র রুগ্নতায় ভোগা শিশুর সংখ্যা কয়েক কোটিতে দাঁড়াতে পারে। ইউনিসেফের মতে, বিশ্বে তীব্র রুগ্নতায় ভোগা শিশুর সংখ্যা এমন পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে, যা এই সহস্রাব্দে দেখা যায়নি। এক হিসাবে করোনা সংক্রমণের পর বাংলাদেশে তীব্র রুগ্নতায় ভোগা শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা ৭৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।


ইউনিসেফের পাশাপাশি জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও), বিশ্ব খাদ্য প্রকল্প (ডব্লিউএফপি) এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, কোভিড মহামারির প্রেক্ষাপটে পুষ্টির বিষয়টি বিশ্বব্যাপী সেভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে না, বিশেষ করে গরীব ও মধ্য আয়ের দেশে। সম্ভাব্য এ পরিস্থিতি এড়াতে ইউনিসেফ ২৪ কোটি ডলারের জরুরি তহবিলের আবেদন করেছে।


স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. বেনজির আহমেদের মতে, স্বাস্থ্য একটা দেশের সর্ববৃহৎ খাত। কোভিড শুরু হওয়ার আগে কেউই এ বিভাগের কর্মযজ্ঞ বুঝতে পারেনি। এ মহামারি শুরু হওয়ার পরই সবাই বুঝতে পেরেছে দেশের স্বাস্থ্য বিভাগের গুরুত্ব। সরকারও এ খাতে বেশ নজর দিয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় এখনো বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি অনেকটাই ভালো। তবে গত ১০ মাসে আমরা অনেক ভঙ্গুর অবস্থাও অবলোকন করেছি। তবুও আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। করোনা ভাইরাসের কারণে শিশুরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। 

 

তিনি বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। এছাড়া দেশে চলছে শীতকাল। এ শীতে এমনিতে শিশুদের নানা প্রকার অসুখ হয়। এজন্য বাবা-মাকে অনেক বেশি সচেতন থাকতে হবে, যাতে করে প্রতিটি শিশুকে এ থেকে রক্ষা করা যায়। করোনার কারণে আর্থিক সংকটে পড়ায় অনেকেই নিজ নিজ শিশুর সঠিক পরিচর্যা করতে পারছেন না। পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার অনেক শিশু পায় না। সেটা অনেকটা আর্থিক কারণে। আবার কখনো অজ্ঞতার কারণে। শিশুর সুন্দর ভবিষ্যত গড়তে তাকে পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার দিতে হবে।


ড. বেনজির বলেন, সরকারের একার পক্ষে এ কাজ করা সম্ভব নয়। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থাকে এগিয়ে আসতে হবে। তবে শিশু স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রধান কাজটি সরকারকেই করতে হবে। যথাযথ পরিকল্পনা ও তা যথাযথভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে শিশুর অপুষ্টি সমস্যা রোধ করা যেতে পারে।

শিশু বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর