ঢাকা, ২১ এপ্রিল সোমবার, ২০২৫ || ৭ বৈশাখ ১৪৩২
good-food
৪৫৭

করোনা সংক্রমণ ফের বাড়ছে কেন?

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২২:১২ ১৭ মার্চ ২০২১  

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ আবার বাড়ছে। এজন্য জনগনের অসতর্কতা এবং অনেক ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের দাায়িত্বহীনতাকে দায়ী করা হচ্ছে। 

 

বাংলাদেশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ১,৮৬৫ জনের দেহে করোনাভাইরাস সনাক্ত করা হয়েছে। শতকরা সনাক্তের হার ৭.৬৮%। তবে সপ্তাহ খানেক আগেও এই হার ৩ শতাংশের আশেপাশে ছিল।

 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ৮ মার্চ থেকে সংক্রমণের হার বাড়তে শুরু করে। সেদিন ৮৪৫ জনের দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সনাক্ত করা হয়।

 

এর মধ্যে ১৪ই মার্চের পর থেকে হঠাৎ করেই সংক্রমণের হার অনেক বেড়ে যায়। সেদিন আক্রান্ত হয় ১,৭৭৩ জন।

 

বাংলাদেশে হঠাৎ সংক্রমণের হার আবার বেড়ে যাওয়ার পেছনে একাধিক কারণের কথা উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে এ বিষয়ে এখনো সরকারি বা কেন্দ্রীয় উদ্যোগে কোন পরিসংখ্যান বা জরিপ, তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণের মতো কাজগুলো করা হয়নি।

 

ইউকে ভেরিয়ান্ট


স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক একজন পরিচালক ডা. বে-নজীর আহমেদ মনে করেন, সংক্রমণ হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ার একটা কারণ হতে পারে ইউকে ভেরিয়ান্ট বা যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাসের যে নতুন ভেরিয়ান্ট পাওয়া গিয়েছিল সেটি ছড়িয়ে পড়া।

 

গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাসের নতুন ধরনটি সনাক্ত হয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা জানান যে, এটি ৭০ শতাংশ বেশি হারে বিস্তার ঘটাতে পারে। সেই সাথে এটি শিশুদেরও আক্রান্ত করতে সক্ষম।

 

মি. আহমেদ বলেন এই ভেরিয়ান্টের সংক্রমণ জটিল হওয়ার শঙ্কা বেশি এবং মৃত্যুহারও বেশি।


তিনি মনে করেন, এরকম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কারণ, যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি অনেক প্রবাসী রয়েছেন যাদের আসা বন্ধ করা হয়নি। যারা এসেছেন তাদের কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশন যথার্থভাবে করা হয়নি, কারো তিনদিন, কারো চারদিন, কারো সাতদিন হিসেবে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে। এছাড়া কঠোরভাবে কোয়ারেন্টিনের নিয়মও মানা হয়নি। তারা পরিবারের সদস্যদের সাথে মিশেছে।

 

তিনি বলেন, সম্প্রতি যে সংক্রমণ বাড়ছে তার মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং সিলেট এলাকায় সংক্রমণের মাত্রা বেশি। অন্য জেলাতে খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। উদাহরণ হিসেবে তিনি নওগাঁর কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ওই জেলাটিতে বেশ কয়েক দিন ধরে কোন নতুন রোগী সনাক্ত হচ্ছে না।


যুক্তরাজ্য থেকে আসা বাংলাদেশিদের মাধ্যমে করোনাভাইরাসের ইউকে ভেরিয়ান্ট এসেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

 

তার মতে যেসব জেলার সাথে যুক্তরাজ্য থেকে প্রবাসীদের ফেরার সংশ্লিষ্টতা বেশি, সেসব জেলাতে করোনা

সংক্রমণের হারও বেশি।

 

দ্বিতীয় কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, শীতকালে সংক্রমণ তেমন না বাড়ার কারণে সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন ও অংশগ্রহণ, এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার বিষয়ে উদাসীনতা ছিল পুরো দেশ জুড়েই। করোনাকালীন সময়ে নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হয়েছে।

 

তিনি বলেন, "যখন সরকারের একটা প্রতিষ্ঠান এরকম করে তখন সাধারণ মানুষের মধ্যেও এর প্রতিক্রিয়া হয়। যার কারণে বিয়ে-সাদি, ওয়াজ মাহফিল, ঘুরতে যাওয়ার মতো কাজকর্ম চলেছে।"

 

তার মতে এ কারণে ইউকে ভেরিয়ান্ট ছড়িয়ে পড়ার উপযুক্ত পরিবেশ পেয়েছে।

 

মি. আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে এর বাইরেও ভেরিয়ান্ট ঢুকছে। দক্ষিণ আফ্রিকা এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভেরিয়ান্ট আসাটাও বিচিত্র নয় বলে মনে করেন তিনি।

 

গত বছর শীতের শেষে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে গ্রীষ্মকালে। শীতকালে খুব একটা বাড়েনি। বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে করোনাভাইরাসের যে ভেরিয়ান্টটি রয়েছে সেটি শুধু গ্রীষ্মকালেই বাড়ে কিনা সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখা দরকার বলে মনে করেন তিনি।

 

কর্তৃপক্ষের বক্তব্য


বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পেছনে ইউকে ভেরিয়ান্ট হওয়ার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআর।

 

প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম আলমগীর বলেন, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে ইউকে ভেরিয়ান্ট ছড়ায়নি। যারা যুক্তরাজ্য থেকে এসেছে তাদের মধ্যেই তা সীমাবদ্ধ ছিল।

 

"এই ভেরিয়ান্টের জেনোমিক সারভেইল্যান্স আমরা করছি। আমরা দেখছি যে, আমাদের যে লোকাল স্ট্রেইনটা ছিল, সেটাই ছড়াচ্ছে।"

 

তিনি বলেন, সিলেটে কয়েকজনসহ দেশে কয়েকটি জেলায় বেশ কয়েকজনের দেহে ইউকে ভেরিয়ান্ট পাওয়া গিয়েছিল। তবে তাদেরকে নজরদারির মধ্যে রেখে, পজিটিভ হওয়ার সাথে সাথে আইসোলেশনে রেখে কন্টাক্ট ট্রেসিং করে স্থানীয়ভাবে ছড়িয়েছে কিনা সেটি দেখা হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় কারো মধ্যে এই সংক্রমণ পাওয়া যায়নি।

 

স্থানীয় ভেরিয়ান্টই শক্তিশালী হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি এই আশঙ্কা বাতিল করে দেন। তার মতে, সংক্রমণ বাড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে করোনাভাইরাসের প্রতি মানুষের উদাসীনতা।

 

তিনি বলেন, দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকা, একই সাথে টিকাদান শুরু হওয়ার কারণে মানুষের মধ্যে ঢিলেঢালা ভাব চলে আসা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলা, পর্যটন কেন্দ্রগুলো খুলে যাওয়া, বিয়ে থেকে শুরু করে নানা ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠানের কারণে সম্প্রতি সংক্রমণ বেড়ে গেছে।

 

মি. আলমগীর বলেন, শীতকালে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকায় তখন অনেক মানুষ মাস্ক পরলেও ফেব্রুয়ারিতে টিকা দেয়া শুরু করার পর থেকে মাস্ক পরার হার কমে যায়। তিনি জানান, বর্তমানে ১০ শতাংশ মানুষও মাস্ক পরে না।

 

তিনি বলেন, বাংলাদেশে মাস্ক পরা শুরু করলে সংক্রমণের সংখ্যাও কমেছে।

 

একই মত দিয়েছেন আইইডিসিআর এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিনও। তিনি বলেন, মাঝে সংক্রমণ কমে আসার কারণ ছিল মানুষ তখন সচেতন ছিল।

 

"একটা সময় মানুষ হোটেলে সেইভাবে খেতো না, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতো, গণ-পরিবহনে স্বাস্থ্য বিধি মেনে যাতায়াত করতো। কিন্তু পরবর্তীতে যখন এগুলো শিথিল হয়ে গেলো তখনই আবার সংক্রমণ বাড়তে শুরু করলো," তিনি বলেন।

 

আইইডিসিআর-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মি. আলমগীর বলেন, করোনাভাইরাস বিশ্ব মহামারি। এখনো দুই কোটির বেশি মানুষ আক্রান্ত। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। তার মানে হচ্ছে মহামারি এখনো শেষ হয়নি।

করোনাভাইরাস বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর