ঢাকা, ২৫ নভেম্বর সোমবার, ২০২৪ || ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৫১৪

করোনাকালে বেড়েছে শিশু ও মাতৃমৃত্যু!

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২১:০১ ১ সেপ্টেম্বর ২০২০  

করোনা মহামারির বিরূপ প্রভাব পড়েছে মাতৃস্বাস্থ্যের ওপর। দেশে প্রসব পূর্ব-প্রসব পরবর্তী সেবা কমে গেছে। বাড়িতে প্রসব বেড়েছে ২৩ শতাংশ। এতে মাতৃমৃত্যুর ঝুঁকি বেড়েছে।
গবেষক ও জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদি পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতির ব্যবহার কমেছে। অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ বেড়েছে। অনিরাপদ গর্ভধারণও বেড়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মইনুল ইসলাম বলেন, যারা সেবা দেবেন এবং যারা সেবা নেবেন, উভয়েই করোনা সংক্রমণের আশংকায় আছেন। সেবা না পাওয়ার মানে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া, মৃত্যু বেড়ে যাওয়া।
গতমাসে যুক্তরাজ্যভিত্তিক চিকিৎসা ও জনস্বাস্থ্য সাময়িকী ল্যানসেট বলেছে, করোনার কারণে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার বাড়তে পারে। এসব দেশে পরিবার পরিকল্পনা সেবা ৯.৮ শতাংশ কমে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। ফলে জন্ম নিযন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার কমবে। বাড়বে অনিরাপদ গর্ভপাত। আর প্রসব পূর্ব ও প্রসব পরবর্তী সেবা কমে যেতে পারে ১৫ শতাংশ করে।
সরকার বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত। পরিকল্পনা কমিশনে এ বিষয়ে সভা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মা, শিশু ও কৈশোর স্বাস্থ্য কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর শাসুল হক জানান, করোনার কারণে সব সেবার মতো মাতৃস্বাস্থ্যসেবাও বিঘ্নিত হয়েছে। সেবা পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে কাজ করছি।
পরিকল্পনা কমিশনের সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনা বিষয়ক পাবলিক হেলথ এ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য আবু জামিল ফয়সাল। তার উপস্থাপনায় দেখা যায়, গত বছর মার্চে একবার প্রসব পূর্ব সেবা পাওয়া গর্ভবতী নারী ছিলেন ৪২ হাজার ৫২৬ জন। আর এ বছর মার্চে সেবার সংখ্যা কমে হয়েছে ২৫ হাজার ৪১৫ জন। পরিস্থিতির আরো অবনতি হয় এপ্রিলে। গত বছর এপ্রিলে প্রসবপূর্ব সেবা পেয়েছিলেন ৪২ হাজার ৫৭১ জন গর্ভবতী নারী। এ বছর ১৮ হাজার ৬২ জন।
বাংলাদেশে ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর সংক্রমণ থেকে দূরে থাকার বিষয়টি সামনে চলে আসে। মানুষ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যাপারে সতর্ক হয়। এর প্রভাব পড়ে স্বাস্থ্যসেবার ওপর। অনেক স্বাস্থ্যকর্মী বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকেন। আবার অনেক সেবাগ্রহীতা স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে যাওয়া বন্ধ করে দেন।
গবেষকদের মতে, সেবা কমার মূলত চারটি কারণ: মাতৃস্বাস্থ্যসেবায় জনবল কমেছে, সেবা সামগ্রী সরবরাহে বিঘ্ন ঘটেছে এবং সেবা গ্রহণের সুযোগ কমেছে।
সরকারি তথ্য ব্যবহার করে জনস্বাস্থ্যবিদ জামিল ফয়সাল বলেন, গত বছর মার্চ-এপ্রিলে চারবার প্রসব পূর্ব সেবা নিয়েছিলেন ২০ হাজার ৩২৬ জন নারী। আর এ বছর একই সময়ে নিয়েছেন ১৫ হাজার ৬৩১ জন নারী। গত বছর এ দুই মাসে দেশের উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে স্বাভাবিক প্রসব হয়েছিল ২৫ হাজার ১৯২টি। একই পরিস্থিতি পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এবং জেলা হাসপাতালে। একইভাবে কমেছে প্রসব পরবর্তী সেবা।
প্রভাব পড়েছে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহারের ওপরও। সরকার দীর্ঘমেয়াদি বা স্থায়ী পদ্ধতির ওপর বেশি জোর দিয়ে আসছে। কিন্তু দু’টো পদ্ধতির ব্যবহার কমেছে। তবে বড়ি ও কনডম ব্যবহার প্রায় একই আছে।
‘তথ্যমতে প্রসূতিদের একলামশিয়া বা খিচুনি বেড়েছে। প্রসব পরবর্তী রক্তক্ষরণও বেড়েছে। খিচুনি ও প্রসব পরবর্তী রক্তক্ষরণ দেশের মাতৃমৃত্যুর অন্যতম কারণ।’
করোনা মাতৃস্বাস্থ্যের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মইনুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানে প্রসব কমে যাওয়ার অর্থ হলো প্রসব হচ্ছে বাড়িতে। বাড়িতে প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী নেই। এতে মাতৃমৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ছে। বাড়িতে প্রসব হলে প্রসূতি প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীর সেবা কম পান। দেশে মাতৃমৃত্যুও সিংহভাগ হয় বাড়িতে। মহামারি পরিস্থিতির আগে ৫০ শতাংশ প্রসব হতো বাড়িতে। এখন তা বেড়ে ৭৩ শতাংশ।
করোনা পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে তা কেউ বলতে পারে না। মাতৃস্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা পরিস্থিতি আগে থকেই দুর্বল ছিল। করোনার কারণে তা আরো দুর্বল হয়ে পড়েছে।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক (মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য কর্মসূচি) মোহাম্মদ শরিফ বলেন, আমরা পরিস্থিতি মূল্যায়ন করেছি। সেবা চালু রাখার সব উদ্যেগ নেয়া হয়েছে।
মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যকে মহামারি মোকাবেলার প্রস্তুতি ও কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্যবিদরা। তারা বলছেন, নতুন স্বাভাবিক জীবনে আগের সেবাদান কৌশল ও পদ্ধতি পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন করা দরকার। নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে মানানসই পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। আগের মতো করে চলা যাবে না।