ঢাকা, ২৫ নভেম্বর সোমবার, ২০২৪ || ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৭৪৮

করোনাভাইরাস: আপনার কিছু প্রশ্নের উত্তর

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২০:০৩ ২৪ মার্চ ২০২০  

করোনাভাইরাস, যার পোশাকি নাম কোভিড-১৯, এখন মহামারি আকারে বিশ্বের বহু দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। যেভাবে প্রতিদিন বহু মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে তাতে মানুষ উদ্বিগ্ন। এর বিস্তার এবং কীভাবে এ সংক্রমণ ঠেকানো যাবে তা নিয়ে মানুষের মনে রয়েছে নানা প্রশ্ন। এরকম কিছু প্রশ্ন এসেছে বিবিসির কাছে।  যেগুলোর উত্তর হয়ত আপনারও কিছু জিজ্ঞাসার জবাব দেবে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সেরে উঠলে আপনার কি এ রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা তৈরি হবে?
এত তাড়াতাড়ি এটা বলা কঠিন। মাত্র ডিসেম্বরের গোড়ার দিকে এ সংক্রমণ শুরু হয়েছে। তবে অন্যান্য ভাইরাস এবং করোনাভাইরাসের এর আগেকার সংক্রমণগুলো থেকে নেয়া অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যেতে পারে- এ ধরনের ভাইরাসে একবার আক্রান্ত হলে সেটা প্রতিরোধ করার জন্য মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। সেটি ভবিষ্যতে একইধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধের ক্ষমতা গড়ে তোলে।
সার্স ও অন্যান্য করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে দেখা গেছে একবার যারা ওই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, তারা আবার ওই ভাইরাসের শিকার হয়নি। তবে চীন ও জাপান থেকে পাওয়া কিছু খবরে জানা গেছে, সেখানে আক্রান্ত কিছু রোগী সুস্থ হয়ে ওঠার পর যারা হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন, পরীক্ষায় তারা আবার পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন। কিন্তু এখানে উল্লেখযোগ্য হলো, পজিটিভ হলেও তারা কিন্তু অন্যকে সংক্রমিত করবে না।

করোনাভাইরাসের ইনকিউবেশন সময় কতদিন?
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ ভাইরাস শরীরে ঢুকলে উপসর্গ দেখা দিতে সময় লাগে গড়ে ৫ দিন। কিন্তু কারো কারো ক্ষেত্রে উপসর্গ দেখা দিতে সময় লাগতে পারে আরও বেশি দিন। ইনকিউবেশন কাল অর্থাৎ যে সময়কাল কোনও ভাইরাস মানুষের শরীরে থাকে। কিন্তু তার কোনও লক্ষণ দেখা যায় না, সেই ইনকিউবেশনের সময়টা কোভিড-১৯-এর জন্য হলো ১৪ দিন পর্যন্ত - বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে।
কিন্তু কোনও কোনও গবেষক বলছেন, এ সময়টা ২৪ দিন পর্যন্তও হতে পারে। অর্থাৎ জীবাণু আপনার শরীরে সুপ্ত অবস্থায় এ সময়কাল থাকতে পারে। এ ইনকিউবেশনের সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা সঠিক জানা থাকলে ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীরা সেটা বিবেচনায় নিয়ে ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেন।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে কতদিন এ রোগ থাকে?
প্রতি ৫ জনের মধ্যে ১ জনের ক্ষেত্রে এ সংক্রমণ সাধারণ সর্দি-জ্বরের মতোই। এতে জ্বর আসে, শুকনো কাশি হয়। লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার পর সপ্তাহখানেক আপনি অসুস্থ বোধ করবেন। কিন্তু ভাইরাস যদি আপনার ফুসফুসে বেশ চেপে বসে, তা হলে আপনার শ্বাসকষ্ট এবং নিউমোনিয়া হতে পারে। আক্রান্ত প্রতি ৭ জনের মধ্যে ১ জনের হয়ত হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হতে পারে।

যাদের হাঁপানি আছে তাদের জন্য করোনাভাইরাস কতটা ঝুঁকির?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যাদের খুব বেশি হাঁপানি হয়, তাদের জন্য এ ভাইরাস “অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ”। কারণ যাদের হাঁপানি আছে, তাদের করোনাভাইরাসের মতো জীবাণুর সংক্রমণ হলে তাদের হাঁপানির লক্ষণগুলো শুরু হয়ে যাবে।
আর সেই কারণেই হাঁপানি (অ্যাজমা) বা এ ধরনের শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা যাদের আছে,- চিকিৎসকরা তাদের ঘরের ভেতরে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন। বেশি লোকের সঙ্গে মেলামেশা এক ধরনের ঝুঁকিতে থাকা লোকেদের জন্য ভয়ের কারণ। কেননা আপনি জানেন না কে এ জীবাণু শরীরে বহন করছেন। কে ইনকিউবেশন সময়ের মধ্যে রয়েছেন।

নিজের ও অন্যদের সুরক্ষার জন্য আমার কি মাস্ক পরা উচিত?
চিকিৎসা সেবা যারা দিচ্ছেন, তারা অবশ্যই মাস্ক পরছেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণ মানুষ মাস্ক পরে খুব একটা লাভ পাবেন না। ইংল্যান্ডে জনস্বাস্থ্য বিষয়ে পরামর্শদানকারী সংস্থা পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড বলেছে, তারা করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য মাস্ক পরার পরামর্শ দিচ্ছে না। তারা বলছে, চিকিৎসা পরিমণ্ডলের বাইরে সাধারণ মানুষ মাস্ক পরে খুব একটা লাভবান হবেন, এমন কোনও যুক্তি বা তথ্যপ্রমাণ তাদের কাছে নেই।

আক্রান্ত কোনও ব্যক্তির হাতে তৈরি খাবার থেকে আপনি কি সংক্রমিত হতে পারেন?
আক্রান্ত কোনও ব্যক্তি যদি স্বাস্থ্যসম্মতভাবে রান্না বা খাবার তৈরি না করেন, তাহলে সেই খাবার থেকে আপনার আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকতে পারে। মানুষ যখন কাশে, তখন সেই কাশির সঙ্গে যে সূক্ষ্ম থুতুকণাগুলো বেরিয়ে আসে, যেটাকে ‘ড্রপলেট’ বলা হয়, সেগুলো যদি আপনার হাতে পড়ে আর সেই হাত দিয়ে যদি আপনি খাদ্যবস্তু ধরেন, তাহলে সেই খাবার আপনাকে সংক্রমিত করতে পারে। যারা খাবার তৈরি করছেন, যেকোনও খাদ্যবস্তু ধরার সময় তার ভালোভাবে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুয়ে নেয়া খুবই জরুরি।

টাকা বা মুদ্রা, দরজার হাতল এবং অন্যান্য শক্ত যেসব জিনিস আমরা হাত দিয়ে ধরি, সেখান থেকে সংক্রমণের আশঙ্কা কতখানি?
কেউ যদি এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন বা তার কাশি হয়, সেই কাশির থুতুকণা যদি তার হাতে লেগে থাকে আর সেই হাত দিয়ে সে যদি কোনও কিছু স্পর্শ করে, তাহলে সেই জিনিসটা সংক্রমিত হতে পারে। দরজার হাতল বিশেষভাবে ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
গবেষকরা এখনও স্পষ্টভাবে জানেন না, করোনাভাইরাস কোন জিনিসের ওপর কতক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে। কোনও কোনও বিশেষজ্ঞ বলছেন, এ ভাইরাস বাইরে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকে। কয়েকদিন বেঁচে থাকার ধারণা সঠিক নয়। কিন্তু এ নিয়ে মতভেদ আছে।
সবচেয়ে ভালো পরামর্শ হলো এ ধরনের কোনও কিছু স্পর্শ করার পরই ভালো করে হাত ধুয়ে ফেলা। নিয়মিত ঘন ঘন হাত ধোয়া এ ভাইরাসের বিস্তার ঠেকানোর সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পরামর্শ।
চীন সরকার বলেছে, সেদেশে সব ব্যাংকে যত নগদ অর্থ জমা পড়েছে, সেগুলো মানুষের হাতে ফেরত যাওয়ার আগে, তারা সব নোট এবং মুদ্রা জীবাণুমুক্ত করবে, যাতে ভাইরাসের বিস্তার কমানো যায়। আবারও- ব্যাংকনোট, মুদ্রা ব্যবহারের পর হাত ধোয়াই সবচেয়ে ভালো উপায়।

আক্রান্ত কোনও দেশ থেকে আসা চিঠিপত্রের মাধ্যমে কি ভাইরাস ছড়াতে পারে?
ডাকে আসা চিঠি কোনও ধরনের ঝুঁকির কারণ হতে পারে, এমন কোনও প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। করোনাভাইরাসসহ কোনও কোনও রোগ ছড়ায় মানুষের হাঁচি, কাশি থেকে নির্গত সূক্ষ্ম জলকণা কোনও জিনিসের বা শরীরের কোনও অংশে পড়লে সেখান থেকে। কিন্তু সেই জীবাণুকণা শরীরের বাইরে যেহেতু দীর্ঘক্ষণ বাঁচে না বলেই বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, তাই ডাকের মাধ্যমে দূর দেশ থেকে চিঠিপত্র সেই জীবাণু বয়ে আনবে না বলেই তারা বলছেন।