ঢাকা, ২৫ নভেম্বর সোমবার, ২০২৪ || ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৬২৫

করোনাভাইরাস প্রতিষেধক তৈরির কাজ কতটা এগোলো?

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২০:১৭ ২১ মার্চ ২০২০  

করোনাভাইরাস বিশ্বের অধিকাংশ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে এখন পর্যন্ত প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে ধ্বংস করার মতো কোনো ওষুধ কিংবা এর থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করার কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। আমরা আসলে করোনা থেকে প্রাণরক্ষাকারী ওষুধ থেকে কত দূরে রয়েছি?
করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক কবে আবিষ্কার হবে?
এ ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য দুরন্ত গতিতে গবেষণা চলছে। এ মুহূর্তে ২০টিরও বেশি প্রতিষেধক তৈরির কাজ চলছে। এর মধ্যে একটি অন্যান্য প্রাণীর ওপর পরীক্ষা না চালিয়েই মানুষের দেহে পরীক্ষা করা শুরু করেছে। তারা এটি নিরাপদ কি-না এবং এর কার্যকারিতা আছে কি-না, তা বোঝার চেষ্টা করছে।
অন্যান্য বিজ্ঞানীরা এখনো অন্য প্রাণীর দেহে এর কার্যকারিতা পরীক্ষা করার ধাপে রয়েছেন। এ বছরের শেষভাগের মধ্যে ফলাফল পাওয়ার আশা করছেন। তবে বিজ্ঞানীরা এ বছরের মধ্যে প্রতিষেধক তৈরি করতে পারলেও এটিকে বৃহৎ পরিসরে উৎপাদন করার চ্যালেঞ্জ থেকেই যায়।
অর্থাৎ বাস্তববাদী চিন্তা করলে আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ের আগে এ ভাইরাসের প্রতিষেধক বাজারে আসবে না। আর এসবই হচ্ছে অত্যন্ত দ্রুত সময়ে এবং প্রতিষেধক তৈরির গতানুগতিক ধারার বাইরে। কাজেই এ প্রতিষেধক যে আসলেই কাজ করবে, এরও কোনো নিশ্চয়তা নেই।
মনে রাখতে হবে মানুষের মধ্যে ছড়ায় এরকম চারটি করোনাভাইরাস রয়েছে। সেরকম একটি ভাইরাসই সাধারণ সর্দি-জ্বরের কারণ এবং সেগুলোর একটির প্রতিষেধকও নেই মানুষের কাছে।
সব বয়সের মানুষকে কী সুরক্ষা দেবে এ প্রতিষেধক?
এটি প্রায় অবশ্যম্ভাবী, এ প্রতিষেধক বয়স্কদের ওপর কম সফলভাবে কাজ করবে। এটি প্রতিষেধকটির জন্য নয়। বরং বয়স্ক মানুষের রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থা প্রতিষেধকে বেশি কার্যকর হয় না। সাধারণ ফ্লু'র ক্ষেত্রে প্রতিবছরই আমরা এ ধারা দেখতে পাই।
এর কী পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকবে?
সবধরণের ওষুধ, এমনকি সাধারণ ব্যাথানাশকেরও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে। কিন্তু ক্লিনিকাল ট্রায়াল ছাড়া একটি পরীক্ষামূলক প্রতিষেধকের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানা সম্ভব নয়। এ বিষয়টির দিকেই ওষুধ প্রশাসন নজর রাখতে চাইবে।
প্রতিষেধক কার প্রয়োজন হবে?
প্রতিষেধক যদি তৈরি হয়, তাহলে সেটার যোগান হবে সীমিত। অন্তত শুরুর দিকে। কাজেই কার জন্য প্রতিষেধক দেয়া হবে তা নির্ধারণ করা গুরুত্বপূর্ণ হবে। যেসব স্বাস্থ্যকর্মীরা কোভিড-১৯ এর রোগীদের সংস্পর্শে আসবেন, তাদের সবার আগে প্রতিষেধক দেয়া হবে।
যেহেতু এ রোগটি বয়স্ক মানুষের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ। কাজেই বয়স্কদের মধ্যে এ প্রতিষেধক কার্যকর হলে তাদেরও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেয়া হতে পারে। তবে যারা বয়স্কদের সঙ্গে থাকে বা তাদের সেবা দেয়, সেসব মানুষকেও প্রতিষেধক দেয়া প্রয়োজনীয় হতে পারে।
ওষুধের বিষয়ে কী হবে?
চিকিৎসকরা বর্তমানে অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধ পরীক্ষা করে দেখছেন, সেগুলো করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর কি-না। এই ওষুধগুলো যেহেতু মানুষের ব্যবহারের জন্য নিরাপদ হিসেবে স্বীকৃত, তাই এক্ষেত্রে গবেষণা দ্রুতগতিতে পরিচালিত হচ্ছে।
আক্রান্ত দেশগুলোর হাসপাতালগুলোতে পরীক্ষা চলছে। তবে ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডক্টর ব্রুস এডওয়ার্ড বলেন, আপাতত একটি ওষুধই কার্যকর বলে আমরা মনে করছি। তা হলো রেমডেসিভির।
এটি ইবোলার ওষুধ হিসেবে প্রস্তুত হলেও বিভিন্ন ধরণের ভাইরাস মারতে বলে ধারণা করা হয়। তবে এ ওষুধের পরীক্ষার ফলাফলের জন্য আমরা এখনও অপেক্ষমাণ। বিজ্ঞানীরা আশা করছিলেন, এইচআইভি'র ওষুধ (লোপিনাভির ও রিটোনাভির) করোনাভাইরাসের বিপক্ষে কার্যকর হবে। কিন্তু এ ওষুধ দু'টোর পরীক্ষার ফল ছিল হতাশাজনক।
মারাত্মকভাবে আক্রান্ত কোভিড-১৯ রোগীদের মধ্যে মৃত্যুহার কমানো, ভাইরাসের পরিমাণ কমানো অথবা আরোগ্য, কোনোটিই অর্জন করা যায়নি এ ওষুধের মাধ্যমে। তবে যেহেতু এ ওষুধের পরীক্ষা মারাত্মকভাবে অসুস্থ রোগীদের মধ্যে চালানো হয়েছিল, (যাদের প্রায় চারভাগের একভাগ মারা যায়) এমনও হতে পারে, এটি সংক্রমণের ওই পর্যায়ে রোগীদের শরীরে কাজ করে না।
ম্যালেরিয়ার প্রাচীন এবং সস্তা ওষুধ ক্লোরোকিন করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করে কি-না, সেই বিষয়ে জল্পনা ছিল। গবেষণাগারের পরীক্ষায় দেখা গেছে, এ ওষুধ ভাইরাসটিকে মারতে সক্ষম। তবে রোগীর শরীরে থাকা ভাইরাস এটি মারতে পারে কি-না, সেই পরীক্ষার ফল জানার অপেক্ষায় আছি আমরা। যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশে এ ওষুধের পরীক্ষা চলছে।

প্রতিষেধক বা চিকিৎসা তৈরি হওয়ার আগে কী করার আছে?
প্রতিষেধক সংক্রমণ রোধ করে এবং এ মুহূর্তে সংক্রমণ রোধের সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি হলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। আপনি যদি করোনাভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হন। তবে অধিকাংশ মানুষের জন্যই এটি সাধারণ একটি অসুখ হিসেবে চিহ্নিত হবে। সেক্ষেত্রে ঘরে বিশ্রাম, প্যারাসিটামল এবং প্রচুর পরিমাণ পানি পানের মাধ্যমে এ রোগের চিকিৎসা সম্ভব। তবে কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে রোগ জটিল আকার ধারণ করতে পারে। তাদের হাসপাতালে চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে।
কীভাবে প্রতিষেধক তৈরি করা হয়?
যেকোনো প্রতিষেধক রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থার সামনে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াকে (অথবা তাদের ক্ষুদ্র অংশ) তুলে ধরে। শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তখন তাদেরকে বহিরাগত হিসেবে চিহ্নিত করে। এরপর এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে শেখে।
তবু যদি কখনো আসলেই সেই ধরণের ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা শরীর আক্রান্ত হয়, তখন রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে ওই সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। যুগ যুগ ধরে প্রতিষেধক তৈরির মূল পদ্ধতিতে আসল ভাইরাসটিকেই ব্যবহার করা হয়।
হাম, মাম্পস ও রুবেলা (এমএমআর) প্রতিষেধক ওই ভাইরাসগুলোর দুর্বল অনুরূপ ভাইরাস ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। যেন ভাইরাসগুলো শরীরে পুরোপুরিভাবে সংক্রমণ তৈরি করতে না পারে।
মৌসুমি ফ্লু'য়ের ওষুধ তৈরি করা হয়, একের পর এক সাধারণ ফ্লু'য়ের প্রজাতিগুলো নিয়ে। নতুন করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক তৈরির কাজ নতুন ধরণের, কম পরীক্ষিত পদ্ধতিতে করা হচ্ছে, যেটিকে 'প্লাগ অ্যান্ড প্লে' প্রতিষেধক বলা হয়। যেহেতু আমরা নতুন করোনাভাইরাসের জেনেটিক কোড জানি, কাজেই আমরা ভাইরাসটি তৈরি করার পূর্ণ নকশা পেতে পারব।