ঢাকা, ১২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার, ২০২৪ || ২৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৩৫৮

করোনা : রক্ষা পাবেন যেভাবে

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২২:০৭ ২ এপ্রিল ২০২০  

ডাঃ মোঃ শহীদুল্লাহ সিকদার  :  করোনাভাইরাস-কভিড-১৯ অতীতের যে কোন সংক্রামক ব্যাধি থেকে অধিক আক্রমণাত্মক। এর দ্রুত ভৌগোলিক বিস্তৃতি, আক্রান্তের সংখ্যা এবং মৃত্যুর হার সেটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ করে।

 

কোন অবস্থায়ই কোন ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, দেশ অথবা বিশ্ব পরিমন্ডলে একে কম গুরুত্ব দেয়া যাবে না। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে অতীতের যে কোন রোগ থেকে একে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে কারণ রোগ তৈরির ক্ষেত্রে এর চরিত্র একেবারেই আলাদা। বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে গোটা বিশ্বের মানুষকে কভিড-১৯ থেকে রক্ষার জন্য এগিয়ে আসতে হবে।

 

বাংলাদেশে এর আসন্ন সঙ্কটের কথা মনে রেখে ’৭১ এ মহান মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতার জন্য যেমন গোটাজাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়েছে, আজকে করোনা সঙ্কটেও বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একযোগে কাজ করতে হবে। মনে রাখতে হবে বিলম্ব হলে আমাদের চরম মূল্য দিতে হবে : কারণ প্রতিরোধই মূল কর্তব্য। রোগ হওয়ার সুযোগ দেয়া যাবে না।

 

বিশেষ কিছু খাদ্য শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় বলে আমাদের জানা আছে। যেমন, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল আমড়া, পেয়ারা, কমলা, পেঁপে, আপেল, আঙ্গুর ইত্যাদি আর সবজিতে গাজর, ব্রকলি, শসা ইত্যাদি রসুন, আদা, কাঁচামরিচ এই ধরনের খাদ্য সামগ্রী আমাদের শরীরে ভিটামিন সি ও অন্যান্য ভিটামিন খনিজ পদার্থ এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহের মাধ্যমে শরীরে রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়িয়ে দেয়, যা করোনাভাইরাস প্রতিরোধে অতীব প্রয়োজনীয়।

 

ইতোমধ্যেই আমরা শিখেছি হাঁচি, কাশি, সংস্পর্শ, ব্যবহার্য রুমাল, কাপড়-চোপড়সহ অনেক সামগ্রীর মাধ্যমে এটি ছড়ায়। সুতরাং সবাইকে সচেতনভাবে এর চর্চা করতে হবে। রোগী বা আক্রান্ত ব্যক্তিকে আলাদা রাখতে হবে এবং তার সেবার ক্ষেত্রে সতর্কতার সঙ্গে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার করে রোগ ছড়ানোর সম্ভাব্য পথ বন্ধ করতে হবে।

 

দ্রুত সম্ভাব্য আক্রান্ত ব্যক্তির পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে তিনি রোগী কিনা! হলে আইসোলেশনে রেখে তার চিকিৎসা করতে হবে। যার পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি তাকে আক্রান্ত এলাকা থেকে আসলে বা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসলে ১৪ দিন হোম অথবা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন এ রাখতে হবে।

 

সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা খুবই জরুরী। প্রয়োজন ব্যতিরেকে ঘরের বাইরে না যাওয়া এবং রোগের লক্ষণ দেখা দিলে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সঙ্গে অথবা চিকিৎসকের সঙ্গে অনলাইনে বা মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে চিকিৎসা নেয়া। কোন মিথ্যা গুজব বা অপচিকিৎসা অথবা অবৈজ্ঞানিক বিষয়ের ওপর নির্ভর করা উচিত নয়। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো রোগীর ব্যবস্থাপনার জন্য সাধ্যমতো প্রস্তুত রয়েছে। ভীত না হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সচেতন তার মাধ্যমে নিজে বাঁচুন এবং অন্যকে বাঁচাতে সহযোগিতা করুন।


 
ব্যক্তিগত, গোষ্ঠীগত এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি পরিহার করে মানবিক পদক্ষেপ নেয়া এখন খুবই জরুরী। চিকিৎসক, নার্স ও সহযোগী স্বাস্থ্যকর্মীদের সুস্থ রাখতে হবে এবং কর্মক্ষম রেখে তাদের কাছ থেকে সেবা নিশ্চিত করার জন্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় নজর দেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিধায় তাদের জন্য পিপিই-মাস্ক সরবরাহ জরুরী। তাদের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। চিকিৎসকদের প্রতি বলছি, পিপিই ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করুন এবং সেবা দিন। নিজে সুস্থ থাকুন, অন্যকেও সুস্থ রাখুন।

 

ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জাম ও অন্যান্য সহযোগিতার মাধ্যমে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মীদের সহযোগিতা করুন। যদিও নির্দিষ্ট কোন ওষুধ নেই, তবু সঠিক চিকিৎসা পরিচর্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব। সমন্বিত প্রচেষ্টা, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি ও সঠিক বৈজ্ঞনিক জ্ঞান প্রয়োগের মাধ্যমে করোনাভাইরাসের কার্যকর মোকাবেলা সম্ভব।

 

লেখক :  অধ্যাপক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়

মুক্তমত বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর