ঢাকা, ২৫ নভেম্বর সোমবার, ২০২৪ || ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
১৩৩৮

করোনায় অভ্যেস বদল : ফ্যাশনে-প্রয়োজনে ফিরবে আবার বাই সাইকেল

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৬:১৬ ২৬ মে ২০২০  

সৌপ্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় (কলকাতা) :  বলা হচ্ছে এই করোনায় না কি পৃথিবী রিবুট হচ্ছে। অনেক পুরনো ভাবনা, কাজকর্ম যাকে স্লথ, বস্তাপচা বলে ফেলে দেওয়া হয়েছিল তারাই আবার ফিরে আসবে। অন্যতম সাইকেল। লকডাউন আরও শিথিল হলে কিংবা লকডাউন উঠলে কাজকর্মে বা কোথাও যেতে ব্যাবহার করুন সাইকেল নিয়ে।

 

৯০এর দশক পর্যন্ত অনেকেই সাইকেল নিয়েই অফিসে যেতেন, আড্ডা মারা, খেলতে যাওয়া সাইকেল বাড়ির অন্যতম প্রধান যান। হাতে বাইক পেয়ে বিলাসিতায় তা বাতিল হয়েছে। সেই অভ্যাস ফিরিয়ে আনতে বলছেন অনেকেই। সাইকেল সমাজও সেই কথা বলছে।


যাত্রাপথ ২০ কিলোমিটার হলে গণপরিবহন এড়িয়ে যান সাইকেল নিয়ে। এটাই উপায় রাস্তাঘাটে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার। এতে খরচ বাঁচবে। আবার কিছুটা হলেও সুরক্ষা বজায় থাকবে নিজের।

 

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী লকডাউন ৪.০-র ইঙ্গিত দিয়েছেন। আবার কিছুটা অন্যরকম লকডাউনের কথাও বলছেন। অর্থনীতিকে সচল করার জন্য কিছু ছাড় আরও দেওয়া হবে বলে ইঙ্গিত স্পষ্ট। ঘটনা হল অনেকে সরকারের এই সিদ্ধান্তকে তাড়াহুড়ো বলে মনে করছেন। কিন্তু এসবের মধ্যেই রাস্তায় নেমে গিয়েছে বাস।চলবে এবার ট্যাক্সি অটো। শারীরিক দূরত্ব বজার রাখা সম্ভব নয়।

 

কর্মস্থলে যদি জীবনের মহাঝুঁকি নিয়ে যেতেই হয় তাহলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন গনপরিবহন এড়িয়ে চলার। তা কি করে সম্ভব? দূরে দূরে অফিস। কলকাতা সাইকেল সমাজ জানাচ্ছে বাঁচতে ও বাঁচাতে হলে হাতে তুলে নিন সাইকেল। প্যাডেলে চাপ দিন। চলে যান কাজে।

 

লিপিকা বিশ্বাস বিখ্যাত সাইক্লিস্ট। তিনি বলছেন, ‘এই সময়ের দাবি বাইসাইকেল কে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়ার জন্য। সরকার ও প্রশাসনের এক্ষুনি উচিত কলকাতার রাস্তায় সাইকেল নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া। সেটা এখনই হোক, কারণ বাস ভাড়া বৃদ্ধি ও নিজের করোনা থেকে নিরাপত্তার জন্য সাইকেল বেশি জরুরি। অনেকে সেটা করবেনও’ একইসঙ্গে তিনি বলছেন, ‘এর জন্য সরকারকেও সাহায্য করতে হবে। স্থানীয় কিছু থানায় পুলিশের ফাইন জুলুমের জন্য সাইকেল চালকদের সাথে ঝামেলা বাড়বে। কলকাতার রাস্তায় সাইকেল নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে। শহর ভালো থাকবে এতে।’

 

‘কলকাতা সাইকেল সমাজ’-এর প্রধান রঘু জানা-র কথায়, ‘আমরা সবাই একটা চাপ এর মধ্যে আছি। করোনা সংক্রমণ ও তার মোকাবেলা নিয়ে অনিশ্চিত অবস্থায় গৃহবন্দী আমরা। করোনার পূর্বে আরেক অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম। কার ভাগ্যে নাগরিকত্ব জুটবে , আর কার ভাগ্যে নাগরিকত্ব জুটবে না এই সংশয়ে দেশ জুড়ে চলছিল বিক্ষোভ। ব্যক্তিগত জীবনে আমরা এমনিতেই চাপে আছি। নিজের কাজকর্ম চাকরি বাকরি কোথায় গিয়ে ঠেকবে জানা নেই। দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার উপর আস্থা কম। করোনা সংকট আরো বেশি অনাস্থা বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রত্যেকের বাড়িতে অন্যান্য নানা রোগে আক্রান্ত প্রিয়জন আছেন। সে আরেক দুশ্চিন্তা। তার মধ্যে এখনী তাড়াহুড়ো করে সব গণপরিবহণ চলতে অনুমতি দিচ্ছেন। আমরা দেখছি করোনা সমস্ত সমস্যা , বিধি ভুলে মানুষ লাফিয়ে, আবারও গাদাগাদি করে যাতায়াত করছেন। আমাদের মত যদি এমন ভাবেই যাবেন তাহলে প্রাণটা একটু সুস্থ করেই যান। সাইকেলে যান। মন ভালো থাকবে। শরীরের ব্যায়াম হবে। আবার শারীরিক দূরত্বের বিধি সহজেই মানা যাবে।’

 
একইসঙ্গে তিনি জানাচ্ছেন , ‘ছেলেমেয়েদের শিক্ষা, ভবিষ্যৎ ভাবনার চাপ নিয়ে তো চলতেই হয় কিন্তু পৃথিবী জুড়ে সমাজ বিজ্ঞানী, অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা মতামত যা ব্যক্ত করেছেন তাতে এই সময়ে মনস্তাত্ত্বিক চাপ আরও বাড়িয়েছে। নীরবে অনিশ্চিতির সংক্রমণ মনে ছড়িয়ে পড়ছে। কোনঠাসা এক নিরাশ অবস্থা ঘিরে ধরছে। এটা ওটা করে পরাবাস্তব সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ভুলে থাকার, এড়িয়ে চলার চেষ্টা চলছে। সাংসারিক মানুষ হিসেবে এই অসহায় অবস্থায় হাত পা সেঁধিয়ে আসে। ভাবার চেষ্টা করি কিভাবে মনোবল ধরে রাখবো। মানসিক ভাবে সক্রিয় না থাকলে কিভাবে চালাবো জীবনটাকে। এই সময়ের চাপ বড়ই মনস্তাত্ত্বিক। আমরা যারা সাইকেল চালাই তাদের একটা সুবিধা সাইকেল চালানো। সাইকেল তো একটা গায়ে গতরে ব্যাপার। পারিপার্শ্বিক সচলতায় মন কিছুটা হালকা হয়। পাঁচ দশ বিশ কিলোমিটার অভ্যাস করলে আরামসে সাইকেল করে যাতায়াত করা যায়। তাছাড়া এটা স্ট্রেস কাটানোর কার্যকরী উপায়।’

 

প্রসঙ্গত নেদারল্যান্ড, জাপানের মতো বহু দেশেই মানুষ সাইকেলে অফিস যান। পরনে স্যুট বুট। পা কিন্তু প্যাডেলে। এই ভাবনাতেই আগে চলত ভারতবর্ষও। শুধু তা এখন নিজের স্বার্থে ফিরিয়ে আনতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা।