ঢাকা, ০৮ সেপ্টেম্বর রোববার, ২০২৪ || ২৪ ভাদ্র ১৪৩১
good-food
৮৪

কে এই ৪০০ কোটি টাকার পিয়ন পানি জাহাঙ্গীর?

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ০২:১৪ ১৫ জুলাই ২০২৪  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমার বাসার একসময়কার পিয়ন ৪০০ কোটি টাকার মালিক। শুনেছি সে হেলিকপ্টার ছাড়া চলে না। তার বিষয়ে খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে। রবিবার (১৪ জুলাই) বিকেলে গণভবনে সাম্প্রতিক চীন সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এরপর থেকেই দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। সবার প্রশ্ন একটাই, কে এই ৪০০ কোটি টাকার মালিক পিয়ন। 

 

ইতোমধ্যে চাউর হয়েছে, সেই পিয়নের নাম জাহাঙ্গীর আলম ওরফে পানি জাহাঙ্গীর। তার বাড়ি নোয়াখালীর চাটখিল থানার খিলপাড়া ইউনিয়নে।  বাবা মৃত রহমত উল্ল্যাহ।  শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেত্রী থাকাকালে সুধাসদনে কাজ করতেন জাহাঙ্গীর।  সেখানে আগত অতিথিদের পানি এগিয়ে দিতেন তিনি।  ফলে তার নাম হয় পানি জাহাঙ্গীর।  পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা।  এসময় তার ব্যক্তিগত কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন তিনি।

 

তবে সরকারপ্রধানের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে পরিচয় দিতেন জাহাঙ্গীর।  ঘুরতেন লাইসেন্সকৃত পিস্তল। নানা তদবির করে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন তিনি।  নোয়াখালী ও ঢাকায় গড়েছেন বিপুল সম্পদ। এসব অভিযোগে গত বছরের ৬ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।  তাতে বলা হয়, জাহাঙ্গীরের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী কোনো সম্পর্ক নেই। তার বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হচ্ছে।  প্রয়োজনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তা নিতে বলা হয়।

 

একপর্যায়ে রাজনীতির মাঠে নামেন পিয়ন জাহাঙ্গীর। চাটখিল উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতির পদ বাগিয়ে নেন।  পরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পাওয়ার জন্য নমিনেশন তোলেন।  সেটা না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন। তবে পরবর্তীতে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান তিনি। নোয়াখালী-১ আসনের নৌকার প্রার্থী এইচ এম ইব্রাহীমের বিরোধিতা করেন জাহাঙ্গীর। তাকে হারানোর পাঁয়তারার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।  রাজধানীতে একাধিক প্লট-ফ্ল্যাট রয়েছে জাহাঙ্গীরের।  ধানমন্ডিতে তার স্ত্রীর নামে আড়াই হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট আছে। 

 

নোয়াখালীর মাইজদী শহরের হরি নারায়ণপুরে জাহাঙ্গীরের আটতলা বাড়ি রয়েছে। সেটিও তার স্ত্রীর নামে। সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য বিপুল অর্থ খরচ করেন তিনি। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে বিশাল বহর নিয়ে করতেন সভা-সমাবেশ। বিভিন্ন সময়ে সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে নিজের এলাকায় দাওয়াত করে নিয়ে যান জাহাঙ্গীর। যাতায়াতের জন্য হেলিকপ্টার ব্যবহার করেন তিনি।ধানমন্ডিতে আলিশান ফ্ল্যাট ছাড়া মোহাম্মদপুর ও নিউমার্কেটে দুটি দোকান রয়েছে তার।  

 

মিরপুরে সাততলা ভবন ও দুটি ফ্ল্যাট র জাহাঙ্গীরের। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় কৃষিখাত থেকে প্রতি বছর ৪ লাখ টাকা, বাড়ি ও দোকান ভাড়া থেকে সাড়ে ১১ লাখ টাকা, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত থেকে ৯ লাখ টাকা, চাকরি থেকে ৬ লাখ এবং অন্যান্য উৎস থেকে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টাকা আয়ের তথ্য জানান তিনি।  সবমিলিয়ে বছরে তার প্রায় ৫০ লাখ টাকার আয়ের কথা জানানো হয়।

 

নির্বাচনী হলফনামা অনুযায়ী, জাহাঙ্গীরের নামে আড়াই কোটি টাকা এবং তার স্ত্রীর নামে ব্যাংকে সোয়া ১ কোটি টাকা রয়েছে। ডিপিএস আছে পৌনে ৩ লাখ টাকা। এফিডিআর রয়েছে সোয়া ১ কোটি টাকা। স্ত্রীর নামে বিলাসবহুল গাড়ি কিনেছেন জাহাঙ্গীর। বিভিন্ন কোম্পানিতে কোটি টাকার শেয়ার রয়েছে। এছাড়া একটি অংশীদারি প্রতিষ্ঠানে তার ৬ কোটি টাকার বিনিয়োগও আছে।

 

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পিয়ন হিসেবে কাজ করার সময় ব্যক্তিগত পরিচয় দিয়ে তদবির, টেন্ডারবাজি, নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অপকর্ম করেন জাহাঙ্গীর।  গাজীপুরের ইপিজেড এলাকার ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। এসব বিষয়ে জানতে একাধিকবার জাহাঙ্গীরের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয়। তবে তা বন্ধ পাওয়া যায়। কিন্তু একাধিক সূত্র জানা হেছে, বিকেল পর্যন্ত তার ফোন খোলা ছিল। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর তা বন্ধ করে গা ঢাকা দেন তিনি।

অপরাধ বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর