ঢাকা, ২১ নভেম্বর বৃহস্পতিবার, ২০২৪ || ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
১৫৯

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে এক দফা দাবি ঘোষণা

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ০২:৩৯ ৪ আগস্ট ২০২৪  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রিসভার পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এছাড়া বর্তমান সরকার পদত্যাগের পর একটি জাতীয় সরকার গঠনেরও আহ্বান জানিয়েছেন তারা। কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া সংগঠনটির সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই ঘোষণা দেন।

 

শনিবার (৩ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে শহীদ মিনারে সমবেত ছাত্র-জনতার উদ্দেশে বক্তব্য দেন নাহিদ। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রিসভাকে পদত্যাগ করতে হবে। তিনি রবিবার (৩ আগস্ট) থেকে সারাদেশে অসহযোগ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

 

ঘোষণাপত্রে তারা বলেন-

'যেহেতু, বর্তমান সরকারের নির্দেশে নির্বিচারে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে, নারী-শিশু-ছাত্র-শিক্ষক-শ্রমিক কেউ এ গণহত্যা থেকে রেহাই পাননি; যেহেতু, সরকার এ হত্যাযজ্ঞের বিচার করার পরিবর্তে নির্বিচারে ছাত্র-জনতাকে গ্রেপ্তার ও নির্যাতন করছে;

 

যেহেতু, সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রাণঘাতী আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে হত্যাযজ্ঞ সংঘটন করেছে; যেহেতু, ছাত্র-শিক্ষক-শ্রমিক-মজুরসহ আপামর জনগণ মনে করছে এ সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ বিচার এবং তদন্ত সম্ভব নয়; সেহেতু, আমরা বর্তমান স্বৈরাচারী সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা করছি। একইসঙ্গে সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য ব্যক্তির নেতৃত্বে একটি গ্রহণযোগ্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় সরকার গঠনের দাবি জানাচ্ছি।'

 

এসময় সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা জনগণকে মুক্ত করতে আবার রাস্তায় নেমে এসেছি। আমরা আজকে এক দফা দাবিতে এখানে হাজির হয়েছি। আমরা বাংলাদেশের মানুষের জীবনের নিরাপত্তা, সমাজের ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা এক দফা সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি”। 

 

এই সরকার কোনোভাবেই আর এক মিনিটও ক্ষমতায় থাকার অধিকার রাখে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা বলেছে, গণভবনের দরজা খোলা আছে। আমরা সাধুবাদ জানাই যে তিনি বুঝতে পেরেছেন গণভবনের দরজা খোলা রাখতে হবে।


সারাদেশে ছাত্র-নাগরিকের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা করে খুনের প্রতিবাদ ও ৯ দফা দাবিতে গতকাল নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তারা আজ সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল ও কাল রবিবার থেকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়।

 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালন করতে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে জড়ো হয়েছে শিক্ষার্থীসহ হাজারো আন্দোলনকারী। এই কর্মসূচি ঘিরে শনিবার বেলা ৩টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন আন্দোলনের সমন্বয়করা।

 

সকালে ঢাকার বিভিন্ন সড়ক ও মোড়ে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করে দুপুরের পর শহীদ মিনারমুখি যাত্রা শুরু হয়। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সেখানে উপস্থিত হন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এক পর্যায়ে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ।

 

শহীদ মিনারের চর্তুদিকে লোকে-লোকারণ্য হওয়ায় তিল ধারণের ঠাঁই নেই। ছাত্রদের সঙ্গে চলে এসেছেন তাদের অভিভাবক, বন্ধু, স্বজন ও পরিবারের সদস্যরাও। জমায়েত একদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছাড়িয়ে পুরাণ ঢাকার চানখারপুল পর্যন্ত। পূর্বদিকে দোয়েল চত্বর ছাড়িয়ে ও উত্তরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল টাওয়ার পার করেছে জমায়েত।

 

শহীদ মিনার এলাকায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে,’ ‘জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস,’ ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেব রক্ত,’ ‘স্বৈরাচারের গদিতে আগুন জ্বালো একসাথে,’ ‘জ্বালো রে জ্বালো, আগুন জ্বালো,’ ‘বুকের ভেতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’, ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান, অভ্যুত্থান’, ‘পদত্যাগ পদত্যাগ, শেখ হাসিনার পদত্যাগ’ এমন নানা স্লোগান দিচ্ছেন। 

 

এর আগে গত ১৮ থেকে ২১ জুলাই সংঘর্ষে যে-সব হত্যাকাণ্ড হয়েছে, সেগুলোর বিচারের দাবি আছে শিক্ষার্থীদের। সংঘাতের পর শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়ে তারা মামলা প্রত্যাহারের দাবি তুলেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিটি মৃত্যুর তদন্তের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি তদন্তে জাতিসংঘের সহযোগিতা নেয়ার কথাও বলেছেন একাধিক বক্তব্যে।

 

শিক্ষার্থীদেরকে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণও জানিয়েছেন সরকারপ্রধান। বলেছেন, গণভবনের দরজা খোলা। কোটা আন্দোলনকারীদের সাথে আমি বসতে চাই, তাদের কথা শুনতে চাই। আমি সংঘাত চাই না। আন্দোলনের মধ্যে যেসব ছাত্র গ্রেপ্তার হয়েছে, তাদেরকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান সরকার প্রধান। তবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারীরা।

বাংলাদেশ বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর