ঢাকা, ০৩ ডিসেম্বর মঙ্গলবার, ২০২৪ || ১৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৬৬৮

খারাপ খবর দেখবেন না, শুনবেন না!

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ০০:২৬ ১৩ মে ২০২১  

কোভিড সেরে গেলেও অদূর ভবিষ্যতে আরও দুর্দিনের সম্মুখীন হবেন মানুষ। যা কেউ কেউ হয়তো টের পাচ্ছেন। আবার অনেকেই অবগত নন। কোভিড অসুখের আতঙ্কে যেভাবে দিন কাটছে, পাশাপাশি সারাক্ষণ মাথার মধ্যে ঘুরছে আরও নানা বিষয়ের চিন্তা। তুচ্ছ মন খারাপ, মন কেমন ভেবে কাটিয়ে গেলেই বিপদ জানাচ্ছেন মনোবিদরা। 


চার দেওয়ালের মধ্যে বন্দি অবস্থায় দিনের পর দিন প্রিয়জনের থেকে দূরে থাকা, লকডাউন হলে কীভাবে দিন চলবে সেই চিন্তা, বয়স্ক মা-বাবার শরীর, ঘরবন্দি হয়ে গেলে 'অচ্ছুত' ভেবে পড়শীদের এড়িয়ে চলা ইত্যাদি মানুষের মনের মধ্যে গভীর প্রভাব ফেলছে। করোনার প্রথম ঢেউয়ের তুলনায় দ্বিতীয় ঢেউয়ে মানুষ আরও বেশি ত্রস্ত, ধারণা মনোবিদদের। 


কারণ দিনের শুরু থেকে রাত পর্যন্ত চারপাশে শুধু 'নেই'-এর খবর। হাসপাতালে শয্যা নেই, অক্সিজেন নেই, অ্যাম্বুলেন্স নেই, ওষুধ নেই, ভ্যাকসিন নেই, এগুলো শুনতে শুনতে হঠাৎ অসুস্থ হলে কোথায় ছুটবে, কী হবে এ ভেবে মানুষ আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। যা থেকে নিস্তার পেতে হলে মন শান্ত রাখা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।


এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত জানালেন মনোবিদ শর্মিষ্ঠা চক্রবর্তী। তাঁর মতে, 'কোভিডের পর মানসিক রোগের প্যানডেমিক শুরু হবে। কারণ, এ মুহূর্তে যে প্যানিকের সৃষ্টি হচ্ছে, এই মৃত্যুর মিছিল, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু, পরিচিত কারও মৃত্যু সংবাদ মনের উপর সাংঘাতিক আঘাত ফেলছে। এ থেকে অবসাদ, আত্মহত্যার প্রবণতা, প্যালপিটিশন অর্থাৎ বুক ধড়ফড় করা, রাতে ঘুম না হওয়া, প্যানিক অনেক কিছুরই শিকার হচ্ছেন মানুষ। 


এর প্রতিকার হিসেবে তিনি বলেন, একটাই কথা বলব, এ সময় সোশ্যাল মিডিয়া থেকে একটু দূরে থাকুন। প্রতিদিন বাথরুমে বসে বা অবসরে ফোন নিয়ে ফেসবুক ঘাঁটা, এগুলো একটু বন্ধ রাখুন। দ্বিতীয়ত, নেতিবাচক খবর শোনা বন্ধ করুন। যা মনের উপর চাপ ফেলছে, সেটা বারবার দেখে নিজেকে কষ্ট দেওয়ার মানে হয় না। 


শর্মিষ্ঠা বলেন, তৃতীয়ত, যেহেতু ঘরবন্দি দশায় সবাই আছি, তাই বন্ধুবান্ধব, প্রিয়জন, আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে ফোনেই নিয়মিত যোগাযোগ রাখাটা জরুরি। আরও একটা বিষয় বলব, হঠাৎ আপনজনের মৃত্যু সংবাদে মানুষ শোক পায়। সেটা কোভিড বলে নয়, যেকোনও সময় হতে পারে। এমন মুহূর্তে চুপ করে থাকাটা বড্ড বিপজ্জনক। তখন মা-বাবা বা যেকোনও কারও সঙ্গে মন খুলে কথা বলা অত্যন্ত জরুরি। অর্থাৎ ভেন্টিলেশন অব দেয়ার ফিলিংস। এটা খুবই প্রয়োজন। 


তিনি বলেন, নিজের কষ্ট বা যখন যেটা ভাবছেন, সেটা কাউকে বললে, শেয়ার করলে খানিকটা হালকা লাগবে।  এর পরেও যদি নিজেকে ঠিক না রাখা যায়, সেক্ষেত্রে অবশ্যই কোনও মনোবিদের পরামর্শ নিতে হবে। প্রয়োজন হলে ওষুধও খেতে হতে পারে। এটা শরীরের উপর ভীষণ প্রভাব ফেলবে।


মনোবিদ সৌভিক চক্রবর্তীর মতে, মিডিয়ার থেকেও সোশ্যাল মিডিয়া আরও আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। তাতে কিছু হওয়ার আগেই মানুষ আধমরা হয়ে বসে আছেন। এ মুহূর্তে নিজেকেই চেষ্টা করতে হবে এমন আতঙ্কের পরিবেশ থেকে দূরে সরিয়ে রাখা। 


তিনি জানালেন, 'পরিসংখ্যান দেখে কিংবা অসুস্থতার হার দেখে মানুষ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ছেন। কিন্তু খোঁজ নিলে দেখা যাবে ৯৮ শতাংশ মানুষ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। কিন্তু প্রথম থেকেই আমাদের মন ইতিবাচক কিছু না ভেবে, নেতিবাচক ভাবনাচিন্তায় জড়িয়ে পড়ে। সেই থেকেই প্যানিক সৃষ্টি হচ্ছে। তার সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়া উপকারে এলেও নানা প্যানিক ছড়াচ্ছে। এটা থেকে নিজেকেই বেরিয়ে আসতে হবে। 

সৌভিক বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় ব্যয় না করে, যেটা করতে ভালো লাগে সেগুলোতে মন দেওয়ার পরামর্শ দেব এ সময়। বই পড়ুন, রান্না করুন, সিনেমা দেখুন, সৃষ্টিশীল কোনও কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে পারেন। এতে মন ভালো থাকবে।


পরিস্থিতিকে মাথায় রাখতেই হবে। অতিমারী রুখতে মাস্ক পরা, পরিষ্কার থাকা, স্যানিটাইজ করা, সর্বোপরি শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতেই হবে। কারণ সময়টা সত্যিই ভয়াবহ। কিন্তু সর্বক্ষণ মাথায় সেই চিন্তা চললে, আস্তে আস্তে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে, জানাচ্ছেন মনোবিদ আরাত্রিকা সেন। 


তিনি জানালেন, 'সবসময় একটা বিষয় নিয়ে চর্চা করলে, তার প্রভাব মনের উপর একটু বেশি পড়ে। তাছাড়া এটাও মনে রাখতে হবে, জীবনে কোনও না কোনও সময় কঠিন মুহূর্ত তো এসেছে। যেভাবেই হোক আমরা নিজের জোরে পেরিয়ে এসেছি মুহূর্তটা। 


সেন বলেন, এ সময় আমাদের মনে রাখতে হবে, এটা শুধু নিজের জন্য নয়, গোটা দেশের, সারা বিশ্বের জন্য একটা খারাপ সময়। প্রতিটা মানুষ লড়াই করছেন এ সময়। একটাই ইতিবাচক ভাবনা রয়েছে, যেমন আগেও যেকোনও কঠিন মুহূর্ত সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কেটে গেছে, এটাও কেটে যাবে। 


তিনি বলেন, করোনাভাইরাস একদিন না একদিন চলে যাবে। সেটার কথা ভেবে সবসময় আতঙ্কে না থাকাই উচিত। ভবিষ্যতের কথা ভেবে এখন বাড়িতেই থাকতে বলব। বাড়িতে পজিটিভ আলোচনা, আড্ডা দিয়ে সবার সঙ্গে কাটালে মন ভালো রাখা যায়। এভাবে নিজেদেরই চেষ্টা করতে হবে ভালো থাকার।
 

মিডিয়া বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর