ঢাকা, ২১ সেপ্টেম্বর শনিবার, ২০২৪ || ৬ আশ্বিন ১৪৩১
good-food
৪৭

গরমে মাথাব্যথা হওয়ার যত কারণ ও প্রতিরোধের উপায়

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ০৪:১০ ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪  

গরম আবহাওয়া সহজেই স্বাস্থ্যে বাজে প্রভাব ফেলে। এরমধ্যে রয়েছে পানিশূন্যতা ও গরমে মাথাব্যথা। আর যাদের মাইগ্রেইনের সমস্যা আছে তাদের এই গরমে ভুগতে হয় বেশি। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে এই বিষয়ে মার্কিন স্নায়ু-চিকিৎসক লিজা স্মির্নঅফ ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “আমার অনেক রোগী গরমকালে মাইগ্রেইনের সমস্যায় বেশি ভোগার বিষয়ে জানান। অবস্থা বেশি খারাপ হয় যখন দিনের সূর্যের তাপ বৃদ্ধি পায়।”

 

যে কারণে গরমে মাথাব্যথা হয়

ফ্লোরিডা’র মায়ামি নিবাসী এই বিশেষজ্ঞ গরমে মাথাব্যথা হওয়ার কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেন।

পানিশূন্যতা: দেহে পানির অভাব হলে মাথাব্যথা দেখা দেয়। অতিরিক্ত ঘাম হওয়া মানে দেহ পানিশূন্য হচ্ছে। এই অবস্থায় পানি পান করতে ভুলে গেলে বা পর্যাপ্ত তরল গ্রহণ না করলে মাথাব্যথা দেখা দেয়।

 

উজ্জ্বল সূর্যালোক: অতিরিক্ত উজ্জ্বল আলো থেকেও মাথাব্যথা হয়। মাইগ্রেইনের রোগীদের মধ্যে যারা আলোর প্রতি সংবেদনশীল তাদের এই সমস্যা বেশি দেখা দেয়। এমনকি ঘরের মধ্যে থাকলেও সূর্যের আলোর অতিমাত্রা থেকে মাথায় যন্ত্রণা হতে পারে।

 

বাতাসের চাপ পরিবর্তন: আবহাওয়ার দ্রুত পরিবর্তন থেকে মাথাব্যথা হয়। বিশেষ করে কিছুক্ষণ বৃষ্টির পর কড়া রোদ উঠলে বাতাসের চাপের পরিবর্তন ঘটে। দ্রুত তাপ বৃদ্ধির কারণে মাথাব্যথা হয়।

 

গরম থেকে মাথাব্যথা কি বিপজ্জনক?

অন্যান্য কারণের চাইতে গরম থেকে হওয়া মাথাব্যথা অতটা বিপজ্জনক নয়। তবে বিষয় হল, গরমে মাথাব্যথা অন্য গরম-সম্পর্কিত লক্ষণ হতে পারে। ডা. স্মির্নঅফ বলেন, “হিটস্ট্রোক’ নাকি গরমে অবসাদের কারণে মাথাব্যথা হচ্ছে সেটা খেয়াল করা গুরুত্বপূর্ণ।”

 

‘হিট এক্সজসশন’ বা গরমে ক্লান্ত লাগার মানে হল দেহ যত দ্রুত গরম হচ্ছে তত দ্রুত ঠাণ্ডা হতে পারছে না। যাকে গরমে হাঁস-ফাঁস অবস্থাও বলা হয়। আর এই অবস্থার বিপজ্জনক অবস্থা হল ‘হিট স্ট্রোক’, যার জন্য দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে।

 

জন্স হপকিন্স মেডিসিন’য়ের তথ্যানুসারে গরম থেকে মাথাব্যধা হওয়ার লক্ষণগুলো হল

  • ধীর ধীর মাথায় ব্যথা শুরু হওয়া
  • মাথা এক বা দুদিকেই ব্যথা করা
  • ভোঁতা ব্যথা অনুভূত হওয়া, মনে হবে কেউ চেপে ধরছে
  • ঘাড় ও পিঠে ব্যথা ছড়িয়ে পড়া
  • মাঝারি মাত্রার ব্যথা করা, তবে গুরুতর নয়

 

এছাড়াও অনেক সময় বেশি গুরুতর লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে অতিরিক্ত ঘাম বা ত্বক শুষ্ক হওয়া, অজ্ঞান হওয়ার মতো অবস্থা তৈরি, ঝিমঝিম করা, অবসাদ ও পেশিতে টান পড়া। এই ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে হাসপাতালের জরুরি ব্যবস্থায় নিতে হবে।

 

উপসমের উপায়

শুধু ব্যথা নয়, ব্যথার প্রধান কারণ নির্মূলের উদ্যোগ নিতে হবে। যেমন-

  • দ্রুত নিজেকে ঠাণ্ডা করার ব্যবস্থা করা। এটা হতে পারে এসি কক্ষে বা পাখার নিচে বসে। যদি বাইরে থাকা হয় তবে কাপড় ভিঝিয়ে গলা ঘাড় বগলে দিতে হবে।
  • মার্কিন অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ‘মায়ো ক্লিনিক’ পরামর্শ দেয়, অল্প অল্প করে ঠাণ্ডা পানি পান করতে হবে। এছাড়া ইলেক্ট্রোলাইট পানীয় পান করা উপকারী হবে।

 

  • মাথায় ঠাণ্ডাভাপ দিলে উপকারী হবে। এক্ষেত্রে কাপড়, তোয়ালে বা গামছা ভিজিয়ে মাথায় কপালে দিতে হবে।
  • শান্ত অন্ধকারাচ্ছন্ন ঘরে বিশ্রাম নিলে উপকার মিলবে।
  • ডাক্তারের পরামর্শে ব্যথা কমানোর ওষুধ খাওয়া উপকারী হবে।

 

প্রতিরোধের পন্থা

গরমের দিনে যদি বেশিরভাগ সময় বাইরে থাকা হয় তবে নিচের ব্যবস্থাগুলো অবশ্য নেওয়ার পরামর্শ দেন ডা. স্মির্নঅফ

সবসময় আর্দ্র থাকা: বাইরে বের হওয়ার আগে অবশ্যই পানি পান জরুরি। ইলেক্ট্রোলাইট পানীয় গ্রহণ করা উপকারী হবে। এছাড়া পানি সমৃদ্ধ ফল ও সবজি যেমন- তরমুজ, শসা, কমলা খাওয়াতে উপকার মিলিবে। গরমে বাইরে থাকলে পানি পান করে যেতে হবে। প্রতি ১৫ থেকে ২০ মিনিট পরপর এক কাপের মতো পানি পান জরুরি।

 

চোখে ছায়ার ব্যবস্থা: এক্ষেত্রে সানগ্লাস ও কার্নিস দেওয়া টুপি পরা উপকারী। উজ্জ্বল আলো থেকে চোখ বাঁচাতে পারলে মাথাব্যথা দূরে রাখা সম্ভব হবে।

অন্যান্য ‍বিষয় এড়ানো: যদি অনুভূত হয় গরম থেকে মাথাব্যথা হতে পারে তবে অন্যান্য প্রভাবকগুলো এড়াতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে- অ্যালকোহল গ্রহণ না করা, বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়াজাত ও লাল মাংস খাওয়া বাদ দেওয়া, ধূমপান এড়ানো।এছাড়া পর্যাপ্ত ঘুম ও প্রতি বেলায় খাবার খাওয়া বাদ দেওয়া যাবে না।