ঢাকা, ২৬ নভেম্বর মঙ্গলবার, ২০২৪ || ১২ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
১০৪৯৫

ঝুঁকি নিলেই ঘটতে পারে অঘটন

গর্ভাবস্থায় বিপদ

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৩:০০ ১২ জুন ২০১৯  

গর্ভাবস্থায় নারীদের দরকার বিশেষ যত্ন। মহিলাদের গর্ভধারণের আগেই নিজের স্বাস্থ্য, গর্ভধারণ ও সন্তান পালন সংক্রান্ত বিষয়ে সচেতন হওয়া দরকার। কারণ একজন সুস্থ্য মা-ই পারেন একটি সু্স্থ ও স্বাভাবিক শিশুর জন্ম দিতে। তাই গর্ভবতী মায়ের জন্য প্রয়োজন সঠিক যত্ন ও পরিচর্যা।

 

বেশিরভাগ গর্ভাবস্থা সহজেই পার হয়ে যায়। কিন্তু জটিলতার বিপদজ্জনক উপসর্গগুলো জানা থাকলে প্রয়োজনের সময় আপনি দ্রুত উদ্যোগ নিতে পারবেন। আপনার ডাক্তার, প্রশিক্ষিত ধাত্রী বা হাসপাতালের সঙ্গে কথা বলুন, যদি আপনার এ ধরনের যে কোন একটি সমস্যা হয় :

 

  • যোনীপথে উল্লেখযোগ্য পরিমান রক্তপাত (ফোটা পরিমানের চেয়ে বেশি)
  • অল্প সময়ে বার বার অতি মারাত্মক বমি বমি ভাব বা বমি করা
  • অতিরিক্ত পেটে ব্যথা
  • নিয়মিত পরিষ্কার ‘পানির মতো’ যোনীপথে স্রাব নিঃসরণ।
  • মারাত্মক মাথা ব্যথা যা যাচ্ছে না (বিশেষ করে গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় অর্ধাংশে)
  • হঠাৎ পায়ের গোড়ালী, আঙ্গুল এবং মুখমন্ডল ফুলে যাওয়া
  • হঠাৎ চোখে ঝাপসা দেখা
  • তাপমাত্রা ৩৭.৮ সে. এর বেশী হওয়াা

 

  • বাচ্চা ২৪ ঘন্টায় নড়াচড়া না করলে বা অত্যধিক কম করলে গর্ভাবস্থার ৩০ সপ্তাহ পর থেকে

 

  • ৩৭তম সপ্তাহের আগে নিয়মিত ব্যথাযুক্ত সংকোচন হলে।

 

রক্তপাত এবং গর্ভপাত

গর্ভাবস্থার শুরুর দিকে (২০ সপ্তাহের পূর্বে) রক্তপাতকে ভয়প্রদর্শিত গর্ভপাত (Threatened miscarriage) বলে। যদি রক্তপাত এবং পিঠের নিচের দিকে বা পেটে ব্যথা বা অস্বস্তি থাকে (মাসিকের ব্যথার মতো) তাহলে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

 

গর্ভপাত হয়ে যাওয়া সাধারণ ঘটনা। সাধারণত প্রথম ১৪ সপ্তাহের মধ্যে নিশ্চিত পাঁচটি গর্ভাবস্থার একটি গর্ভপাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। গর্ভপাতের পর, কিছু মহিলার একটি পদ্ধতির দরকার লাগতে পারে যাকে dilation and curettage (D&C/ ডি এন্ড সি) বলা হয়। এটি সাধারণ চেতনানাশক দ্বারা করা হয় এবং জরায়ুর ভেতর থেকে সমস্ত গর্ভধারণের কলা/টিসু যেগুলো ছিল তা আস্তে আস্তে বের করা হয়। এটি ভারি রক্তপাত এবং সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। কিন্তু যদি আল্ট্রাসাউন্ড দেখে যে, জরায়ু খালি তাহলে D&C এর দরকার নাই।

 

জরায়ুর বাইরে গর্ভাবস্থা (একটোপিক প্রেগনেন্সি)

জরায়ুর বাইরে গর্ভাবস্থা হলো যখন ভ্রুণ ডিম্বনালীর (ফেলোপিয়ান টিউব) ভেতর অথবা জরায়ুর বাইরে অন্য জায়গায় গেঁথে যায়।

জরায়ুর বাইরে গর্ভাবস্থার যেসব উপসর্গ আপনি অনুভব করবেন তার মধ্যে আছে - মারাত্মক তলপেটে ব্যথা, যোনীপথে রক্তপাত, নিস্তেজ অনুভব, বমি বা এক কাঁধের চূড়ায় ব্যথা। যদি আপনি এসব উপসর্গ অনুভব করেন, জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা নেয়া গুরুত্বপূর্ণ।

 

জরায়ুর বাইরে গর্ভাবস্থার সাধারণ ফলাফল হল গর্ভপাত এবং সাধারণত তা প্রতিরোধযোগ্য নয়।

 

২০ সপ্তাহের পর রক্তপাত

২০ সপ্তাহের পর রক্তপাতকে প্রসব পূর্ববর্তী রক্তপাত বলে। এটি সাধারণ নয়, কিন্তু অবিলম্বে চিকিৎসার দরকার হয়। গর্ভাবস্থার যেকোন ধাপে রক্তপাতের প্রথম উপসর্গ দেখা দিলে সর্বদা আপনার ডাক্তার, ধাত্রী বা হাসপাতালের সঙেগ যোগাযোগ করুন।

 

এর কারণ হতে পারে গর্ভফুলের একটি সমস্যা যাকে ‘প্লাসেন্টা প্রিভিয়া’ বা গর্ভফুলের নিম্নাবস্থান বলে। এর মানে হলো জরায়ুর ওপরের অংশে সংযুক্ত না হয়ে, কিছু অংশ বা পুরো গর্ভফুল জরায়ুর নিচের অংশে সংযুক্ত হয়। গর্ভাবস্থার শেষের দিকে জরায়ু যখন প্রসারিত হতে থাকে, তখন এটি গর্ভফুলের কিছু অংশ স্থানচ্যুত করে এবং এতে করে রক্তপাত ঘটায়।

 

 

কখনো গর্ভফুল (বা প্লাসেন্টা) জরায়ু থেকে সামান্য পৃথক হয়, যদিও এটি সঠিক অবস্থানেই থাকে। এটি অল্প বা ভারি রক্তপাত ঘটাতে পারে এবং কখনো কখনো পেট ব্যথা হয়। যদি গর্ভফুলের অনেক অংশ বের হয়ে আসে, তাহলে তা আপনার এবং আপনার বাচ্চার জন্য প্রধান ঝুঁকিপূর্ণ হবে। শিগগিরই চিকিৎসা বাচ্চাকে নিরাপদ করতে পারে, যদিও সে সিজারিয়ান সেকশন অপারেশন এবং / অথবা সময়ের আগে জন্ম নিতে পারে।

 

বাচ্চার নড়াচড়া

গর্ভাবস্থায় সাধারণত মা ১৬ থেকে ২০ সপ্তাহের মধ্যে বাচ্চার নড়াচড়া অনুভব করেন। পেটের ভেতর বাচ্চা ঘুমায় ও খেলা করে, যার অনুভূতি মা বাইরে থেকে বুঝতে পারেন। বাচ্চার নড়াচড়ার একটা নির্দিষ্ট সীমা এবং সময় রয়েছে যা শুধু মা-ই অনুভব করেন। এর কোনো ব্যতিক্রম হলে মা সেটা খুব দ্রুত বুঝতে পারেন। বাচ্চার অধিক নড়াচড়া বা কম নড়াচড়া দুটিই ক্ষতিকর এবং এসব ক্ষেত্রে নিয়মিত এবং নির্দিষ্ট সময় পরপর ডাক্তারকে দেখানো উচিত।

 

গর্ভাবস্থা, প্রসব এবং পরবর্তী সময়ের বিপজ্জনক সমস্যাগুলো কখনো কখনো সতর্কসংকেত ছাড়াই হঠাৎ দেখা দিতে পারে। তবুও সব দম্পতির এবং আত্মীয়স্বজনের ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভের লক্ষণ, বিপদের পূর্বাভাস ও মারাত্মক লক্ষণগুলো সম্পর্কে ধারণা থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, যে কোনো খারাপ অবস্থার জন্য আগে থেকে মানসিক ও অন্যান্য প্রস্তুতি না থাকলে সমূহ বিপদের সম্মুখীন হতে হয়।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রসবজনিত মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি লাখে ১৭০ জন। প্রতি বছরই প্রায় ১২ হাজার নারী প্রসবজনিত জটিলতার কারণে মারা যান। সুতরাং প্রসবকালিন কিংবা আগে-পরের সব ধরনের জটিলতা এড়াতে স্বাস্থ্যশিক্ষা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া খুবই জরুরি।