ঢাকা, ১৭ জানুয়ারি শুক্রবার, ২০২৫ || ৪ মাঘ ১৪৩১
good-food
৭৪৪

চলে গেলেন মোহাম্মদ নাসিম

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১১:৩০ ১৩ জুন ২০২০  

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর ব্রেইন স্ট্রোকে সঙ্কটাপন্ন হয়ে উঠেছিল সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের জীবন। সেই সঙ্কট আর কাটল না শেষ পর্যন্ত। প্রবীণ এ রাজনীতিক অসুখের সঙ্গে যুদ্ধ করে চলে গেলেন না ফেরার দেশে।

 

চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সকালে তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া।

 

নাসিমের ছেলে তানভীর শাকিল জয়ের কাছে এই খবর পেয়েছেন বলে জানান তিনি।


আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নাসিমের বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। তিনি স্ত্রী ও তিন সন্তান রেখে গেছেন।

 

শনিবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর শ্যামলী বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বলে  জানান নাসিমের ছেলে তানভীর শাকিল জয়।

 

শুক্রবার (১২ জুন) জয় গণমাধ্যমে জানিয়েছিলেন তার বাবা আগের মতোই আছেন। অবস্থার কোনো উন্নতি বা পরিবর্তন হয়নি।

 

এর আগে বৃহস্পতিবার (১১ জুন) রাতে মোহাম্মদ নাসিমের মেডিক্যাল বোর্ডের প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া জানিয়েছিলেন, নাসিমের শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ। অবস্থার উন্নতির জন্য সব ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, চেষ্টা করা হচ্ছে।


 
গেল ১ জুন জ্বর-কাশিসহ করোনাভাইরাসের লক্ষণ নিয়ে ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি হন মোহাম্মদ নাসিম। রাতে করোনা পরীক্ষার ফল পজিটিভ আসে।

 

পরদিন ভোর সাড়ে ৫টায় মোহাম্মদ নাসিমের ব্রেন স্ট্রোক হয়। হাসপাতালের নিউরোসার্জন অধ্যাপক রাজিউল হকের নেতৃত্বে কয়েক ঘণ্টায় তার অস্ত্রোপচার সফল হয়। সফল অস্ত্রোপচার হলেও তার মাথার ভেতরে বেশ কিছু রক্ত জমাট বেধে ছিল। স্ট্রোকের পর থেকে গত ৮ দিন তিনি অচেতন অবস্থায় ভেন্টিলেশন সাপোর্টেই ছিলেন।

 

এরই মধ্যে পরপর দুইবার করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ রেজাল্ট আসলে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নেয়ার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়য়ের পক্ষ থেকে সিঙ্গাপুরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।

 

তবে সঙ্কটাপন্ন অবস্থার কারণে মোহাম্মদ নাসিমকে আপাতত দেশের বাইরে স্থানান্তরের ঝুঁকি নিতে চাননি তার পরিবারের সদস্যরা।

 

১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর কারাগারে নিহত জাতীয় চার নেতার একজন এম মনসুর আলীর ছেলে নাসিম সংসদে পঞ্চমবারের মতো সিরাজগঞ্জের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছিলেন।

 

এবার মন্ত্রিত্ব না পেলেও দলের সভাপতিমণ্ডলীতে থাকার পাশাপাশি ১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করছিলেন দেশের অন্যতম প্রতিথযশা রাজনীতিক ও অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান নাসিম। 

 

নাসিমের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও শোক জানিয়েছেন।


নাসিমের জন্ম ১৯৪৮ সালের ২ এপ্রিল সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর উপজেলায় এম মনসুর আলী ও মা মোসাম্মৎ আমেনা মনসুরের ঘরে।

 

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মনসুর আলী স্বাধীনতা পরবর্তী বঙ্গবন্ধু সরকারের মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছিলেন।

 

নাসিম জগন্নাথ কলেজ (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নেন।

 

গত শতকের ষাটের দশকে ছাত্র আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী নাসিম স্বাধীনতার পর ১৯৯৩ সালে যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হন।

 

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর কারাগারে মনসুর আলীকেও হত্যা করা হলে আওয়ামী লীগে সক্রিয় হন নাসিম। তখন কারাগারেও যেতে হয়েছিল তাকে।

 

১৯৮৬ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নাসিম। তখন সংসদে বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপের দায়িত্বও পান তিনি। তখন তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক।

 

এরপর ১৯৯৬ ও ২০০১, ২০১৪, ২০১৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।

 

শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করার পর ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান নাসিম। পরের বছর মার্চে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও তাকে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 

নাসিম এক সঙ্গে দুই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন ১৯৯৯ সালের ১০ মার্চ পর্যন্ত। পরে মন্ত্রিসভায় রদবদলে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।

 

২০০৮ সালে নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরলেও সেবার মন্ত্রিসভায় জায়গা হয়নি নাসিমের। তবে পরের মেয়াদে ২০১৪ সালে তাকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী করেন শেখ হাসিনা।

 

রাজনীতির পাশাপাশি সমাজকল্যাণমূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন নাসিম। ঢাকাসহ নিজ এলাকা সিরাজগঞ্জে বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন ত্যাগী এ রাজনীতিবিদ।