ঢাকা, ২১ নভেম্বর বৃহস্পতিবার, ২০২৪ || ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
২৩৮

চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ববাজারে

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ০১:০০ ৯ জুন ২০২৪  

মিষ্টি রসালো সুগন্ধ ও স্বাদে দেশের অন্যান্য জেলার আমের চেয়ে সেরা আম উৎপাদন হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জে। প্যাকেটিং জাত করে কীটনাশক ছাড়াই নিরাপদ আম উৎপাদনে শীর্ষ রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম। নিরাপদ ও সুমিষ্ট আমের জন্য এই আম দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ববাজারে রপ্তানি হচ্ছে। দেশের চার ভাগের এক ভাগ আমই উৎপাদন হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবং বাংলাদেশের মোট ২৩ টি জিআই পণ্যের মধ্যে ৪ টি পেয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৪ জাতের আম সেগুলো হলো খিরসাপাত, ল্যাংড়া, আশ্বিনা ও ফজলি। 

 

ইতোমধ্যেই বিদেশিরা এসে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম বাগান প্রদর্শন করে গেছে। আবার আগামী ২২ই জুন চীন থেকে একটি টিম চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম ও আম বাগান প্রদর্শনে আসার কথা রয়েছে।  চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম দেশের গণ্ডি পেরিয়ে সুইডেন, ইংল্যান্ড, দুবাই আরব আমিরাত, ইতালিসহ প্রায় ১৪ টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। দেশের আম রপ্তানিতেও শীর্ষে রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম।

 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৩৭ হাজার ৬০৪ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। যার উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লক্ষ ৫৫ হাজার মেট্রিকটন যার বাজার মূল্য প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা।চলতি বছর আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় আমের উৎপাদন কম হয়েছে। ফলে বাজারে আমের দামও দ্বিগুণ। যেখানে গত বছর খিরসাপাত, গোপাল ভোগ আম বাজারে বিক্রি হয় ১৮০০ টাকা থেকে ২০০০টাকা মন সেই আম বর্তমানে বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪০০০ টাকা থেকে ৪৫০০ টাকা মন। ভাল দাম পেয়ে আম চাষীরা খুশী।

 

আম চাষি মো. বেলাল জানান, আমার ১০ বিঘা জমিতে আম চাষ করা হয়েছে। গত বছর আমের দাম কম পাওয়ায় অনেক লোকসান গুনতে হয়েছে। এবার আমের দাম বেশী হওয়ায় গত বছরের লোকসান কাটিয়ে উঠে বড় একটা লাভের সম্ভবনা আছে। আরেক আমচাষি জিয়া জানান, এ বছর তীব্র শীত ও কুয়াশায় আমের মুকুল বের হতে পারেনি যা বের হয়ে ছিল তাও আবার বৃষ্টির কারণে প্রায় অর্ধেক নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ফলে আম উৎপাদন এবার কম হয়েছে। তবে আমের দাম গত বারের চেয়ে দ্বিগুণ হওয়ায় আমরা কিছুটা হলেও গত বারের লোকসান কাটিয়ে উঠবো বলে আশা করছি।

 

জেলায় সর্ববৃহত্তম আম বাজার কানসাট এর পরই রয়েছে রহনপুর রেল স্টেশন আম বাজার, ভোলাহাট আম ফাউন্ডেশন আম বাজার এসব আম বাজার ও জেলার বাগান গুলো থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩৫ কোটি টাকার আম বিক্রয় হয়ে থাকে। কানসাট আম আড়ত সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক টিপু জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে গত ৫ জুন থেকে আম ভাঙ্গা শুরু হয়েছে। আমের উৎপাদন কম হওয়ায় আম চাষীরা গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ দামে আম বিক্রয় করছে। গত কয়েক দিন থেকে আম ভাঙ্গা শুরু হওয়ায় এখনও আম বাজার জমে উঠেনি তবে সামনের সপ্তাহে পুরোদমে জমে উঠবে আম বাজার। 

 

তিনি জানান, কানসাট আম বাজার এশিয়া মহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম আম বাজার। এখানে প্রতিদিন গড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ ট্রাক আম বিক্রয় হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যায়। এই কানসাট আম বাজারে প্রতিদিন প্রায় ২৫ থেকে ২৬ কোটি টাকার আম বিক্রয় হয়। কানসাট বাজারের আম নিরাপদ, সুমিষ্ট ও গুণগত মান ভালো হওয়ায় এখানকার আমের চাহিদা দেশ জুড়ে।

 

কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ তানভীর আহমেদ সরকার জানান, রপ্তানি যোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় গোমস্তাপুর উপজেলা ৩৯ জন আম চাষিকে আমের চারা, বালাইনাশক, ফ্রুটব্যাগ, আম বহনের জন্য প্লাস্টিকের ক্যারেট ও বাগানে সেচ ও পরিচর্যার জন্য নগদ অর্থ তুলে দিয়েছি। এবং এই প্রকল্পে আম চাষিদের নিয়ে মাঠ দিবস করেছি। আশা করি রপ্তানিকারকরা আগামীতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আম রপ্তানিতে আরো আগ্রহ প্রকাশ করবে।

 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ ড. পলাশ সরকার জানান, আবহাওয়া প্রতিকূলে না থাকায় এবার আমের উৎপাদন কম হয়েছে। তাতে আমের বাজার দর ভালো পাবে আম চাষিরা।  চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের উৎপাদন বৃদ্ধি ও রপ্তানি যোগ্য করে তোলার জন্য আমাদের প্রজেক্ট কাজ করছে। প্রজেক্টের আওতায় আমরা বিভিন্ন ধরনের প্রদর্শনী দিয়েছি। এছাড়া গ্যাপ মেন্টাল করে যে আম উৎপাদন হয় তা আমরা পাটনার প্রকল্পের আওতায় করছি।

 

তিনি বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাণিজ্যিকভাবে এখানে কিছু উদ্যোক্তা নাচোল, গোমস্তাপুর, ভোলাহাট, শিবগঞ্জ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরসহ ৫ টি উপজেলাতেই এরা কাজ করছে। এবার আমরা আমের প্রক্রিয়াজাত করণের উপর নজর দিয়েছি আশা করি আগামী বছর আমের প্রক্রিয়াজাত করণের কিছু কাজ হবে। এলাকার আম চাষীদের বড় সমস্যা হলো আমের উৎপাদন বেশি হলেই তারা বলেন যে আমের দাম পাচ্ছি না।

 

ড. পলাশ সরকার বলেন, আবার আমের উৎপাদন কম হলে তারা হতাশায় থাকে এবং বলে যে আমের উৎপাদন কমে গেছে। সে ক্ষেত্রে যদি কিছু আমের প্রক্রিয়াজাত সেন্টার গড়ে তুলতে পারি সে ক্ষেত্রে দেখা যাবে যে আমের একটা বড় অংশ সেখানে চলে গেছে। দেখা যাবে আমের উৎপাদন কম হলেও এর হেরফের হয়ে চাষিরা যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে সেটি আর হবে না। 

 

তিনি আরো বলেন, গত বছর যে আম রপ্তানি হয়ে ছিল বিগত কয়েক বছরের তুলনায় অনেক বেশি ছিল। এ বছরও রপ্তানি বাড়ানোর জন্য কাজ করছি ইতোমধ্যে রপ্তানিকারকরা আমাদের বিভিন্ন উপজেলার আম বাগান প্রদর্শন করেছে যেটি এর আগে কোন দিনও হয় নি। রপ্তানিকারকরা আমাদের বিভিন্ন বাগান প্রদর্শন করে আম পছন্দ করেছে এবং অগ্রিম  চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। তিনি আসা করেন আগামী দিনে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমের স্বর্ণালী দিন আসবে এবং এখান থেকে প্রচুর পরিমাণ আম বিদেশে রপ্তানি হবে। তাতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হবে। কৃষি পণ্য রপ্তানিতে আম একটা বিরাট ভূমিকা রাখবে। গত বছরের চেয়ে আমের রপ্তানি দ্বিগুণ করার প্রত্যয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।