ঢাকা, ২২ ডিসেম্বর রোববার, ২০২৪ || ৮ পৌষ ১৪৩১
good-food
৯৭

জনপ্রশাসন সচিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে তিন উপদেষ্টার কমিটি

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ০৪:৪৪ ৪ অক্টোবর ২০২৪  

জেলাপ্রশাসক বদলাতে গিয়ে বিপুল অংকের আর্থিক লেনদেনের যে অভিযোগ জনপ্রশাসন সচিবের বিরুদ্ধে উঠেছে, সে বিষয়ে তদন্ত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টাকে নিয়ে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে বলে এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন সমাজ কল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ।

 

তিনি বলেন, "কমিটি করা হয়েছে, এটা তলিয়ে দেখার, তদন্ত করার জন্য কমিটি করা হয়েছে। তথ্য উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কমিটিতে থাকবেন। সাথে অন্য কাউকে নিতে পারবেন।"

 

ডিসি নিয়োগের ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ নিয়ে দৈনিক কালবেলা পরপর দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত দ্বিতীয় প্রতিবেদনে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা আদানপ্রদানের কিছু ক্রিনশট প্রকাশ করে বলা হয়েছে, ওই আলাপচারিতা একজন যুগ্ম সচিবের সঙ্গে জনপ্রশাসন সচিবের। ডিসি নিয়োগে ‘৫ থেকে ১০ কোটি টাকা’ লেনদেনের কথা হয়েছে সেখানে।

 

ওই অভিযোগ অস্বীকার করে জনপ্রশাসন সচিব মো. মোখলেস উর রহমান বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, “এই অভিযোগকে আমি মূল্যহীন মনে করি। ইটস আ ফেইক নিউজ।” পরে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কমিটি হওয়ার কথা জানান উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ।

 

উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ নিয়ে কী আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে শারমীন মুরশিদ বলেন, "দেখুন, যে ক্লিপটা সোশাল মিডিয়াতে বহুল প্রচারিত হয়ে গেল, সেটা কতখানি এআই প্রডিউসড আর কতখানি রিয়েল, কতখানি ফেইক– এটা সাধারণ মানুষ বলতে পারে না। তাৎক্ষণিক যে সিদ্ধান্তটা হয়েছে, সেটা হল এটার টেকনিক্যাল ইন্টিগ্রিটি কী। এটা জানার জন্য ইতোমধ্যে আমাদের কেবিনেটে কথা হয়ে গেছে। এটা তদন্ত করে দেখতে হবে।

 

"আমাদের প্রশাসনে বা আমাদের অত্যান্ত দায়িত্বশীল অধিষ্ঠিত কর্মকর্তাদের কোনো রকমের দায়িত্বহীনতা মেনে নেওয়া যাবে না। সেটাও আমাদের অনুশাসনের অধীনে আনব আমরা এবং আনতে হবে।"

 

প্রধান উপদেষ্টা এ বিষয়ে কী বলেছেন জানতে চাইলে সমাজ কল্যাণ উপদেষ্টা বলেন, "উপদেষ্টাদের এটা নিয়ে একটা দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কমিটি করে তারা এটা দেখবে। প্রধান উপদেষ্টা অবশ্যই কনসার্ন, কেন হবে না? একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে নিয়ে এরকম একটা কথা কেন উঠল, এটার উৎস কী? এটা তলিয়ে দেখতে হবে। আমরা তো আর সেই আগের অ্যানালগ যুগে নেই। সে কারণে আমাদের বাড়তি কষ্ট হচ্ছে। যেটা সোশাল মিডিয়াতে আসছে লাফ দিয়ে ধরে নিতে পারছি না, যে এটাই সবশেষ সত্যি। আমাদের এটাকে যাচাই করতে হয়।”

 

প্রধান উপদেষ্টা কী নির্দেশে দিয়েছেন জানতে চাইলে শারমীন মুরশিদ বলেন, "উনিইতো বলেছেন, উনিই বলেছেন কমিটি করে তদন্ত করতে।" ক্ষমতার পটপরিবর্তানের পর মাঠ প্রশাসনেও ব্যাপক রদবদল আনে অন্তর্বর্তী সরকার। এর ধারাবাহিকতায় ৫৯ জেলায় নতুন কর্মকর্তাদের জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

 

কিন্তু ১০ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে দিনভর হট্টগোল করেন আগের সরকারের আমলে ‘বঞ্চিত’ উপসচিবরা; শেষ পর্যন্ত প্রজ্ঞাপন বাতিলের আশ্বাসে তারা মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কার্যালয় ত্যাগ করেন।

 

নতুন দায়িত্ব পাওয়া ৫৯ জন জেলা প্রশাসকের মধ্যে আটজনকে পরদিনই প্রত্যাহার করে নেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সেই সঙ্গে চার জনের কর্মস্থল বদলে দেওয়া হয়। আর একজন উপসচিবকে করা হয় ওএসডি। হট্টগোলের ঘটনা তদন্তে গঠন করা হয় কমিটি।

 

এর মধ্যে এক যুগ্ম সচিবের কক্ষ থেকে তিন কোটি টাকার একটি চেক এবং ডিসি নিয়োগ সংক্রান্ত কিছু চিরকুট উদ্ধারের খবর দিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে দৈনিক কালবেলা। সেই প্রতিবেদন নিয়ে তোলপাড় তৈরি হলে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

 

তবে গত ৩০ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলন ডেকে কালবেলার ওই প্রতিবেদনকে ‘গুজব’, ‘সম্পূর্ণ ভুয়া’ এবং ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ আখ্যায়িত করেন মোখলেস উর রহমান। এরপর বৃহস্পতিবারের প্রতিবেদনে খোদ মোখলেস উর রহমানের বিরুদ্ধেই আর্থিক লেনদেন নিয়ে আলোচনার অভিযোগ তুলে ধরে কালবেলা।

 

প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, “একটি মেসেজে সচিব নিজেকে ‘নির্লোভ’ দাবি করে মাত্র ৫ কোটির একটি আবদার করেন। জিয়া (যুগ্ম সচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ) তাকে সুখবর দিয়ে বলেন ১০ কোটি রাখার কথা। এতে সন্তুষ্ট হয়ে সচিব তাকে বলেন, ‘আচ্ছা ঠিক আছে, তোমার যেটা ভালো মনে হয়।’ তবে টাকা-পয়সার প্রতি নিজের তেমন লোভ নেই বলেও জিয়াকে জানান সচিব।”

 

প্রতিবেদন প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন জনপ্রশাসন সচিব।সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “বিন্দু বিসর্গের সত্যতা নাই। এই প্রশ্ন করার আগে আপনারা নিজেকে প্রশ্ন করেন, আমাকে এই প্রশ্ন করা কতটুকু যৌক্তিক হচ্ছে।”

 

হোয়াটসঅ্যাপ কথোপকথনের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, "আমার মোবাইলটা হল স্যামসাং, ওখানে (কালবেলার প্রতিবেদনে) যেটা শো করছে সেটা হল আইফোন। উনারা কী দেখাইল, সেটা উনাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন। আমি এইটা সম্পর্কে কিছুই জানি না।

 

"আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ। সরকার যে মোবাইল দিয়েছে সেটাও আমি ব্যবহার করি না। আমার আগের যে নম্বর সেটাই আমি ব্যবহার করতেছি।" ওই কথোপকথনের সত্যতা আছে কিনা– এমন প্রশ্নে জনপ্রশাসন সচিব বলেন, “যদি স্টান্টবাজি নিউজ করতে চান, তাহলে এগুলো প্রশ্ন করতে পারেন।”

 

খবর যদি মিথ্যা হয়, তাহলে কী ব্যবস্থা নেবেন– সেই প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা তিনটি পদক্ষেপ নিয়েছি। পত্রিকটির নাম উল্লেখ করে আমরা তথ্য সচিবকে চিঠি দিয়েছি। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারি চিঠি দেওয়া হয়েছে। প্রেস কাউন্সিল আছে, অন্যান্য যে নিয়ম কানুন আছে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

“যে ভুয়া লোককে কেন্দ্র করে এতকিছু, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র সচিবকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আগামী এক দুই দিনের মধ্যে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে। যে ব্যাংকারের ভুলের কারণে এ ধরনের একটা অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে, তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

 

নিজের বিষয়ে যে অভিযোগ উঠেছে, সে বিষয়ে প্রশ্ন করলে মোখলেস উর রহমান বলেন, “যারা এটা করেছে তাদেরকে আমরা কতটুকু গুরুত্ব দেব? একটা রাস্তার লোক আমাকে অনেক কিছু বলতে পারে, আমি কি রাস্তার লোকের পেছনে দৌঁড়াব?

 

“আমরা সরকারের পজিশনে থেকে জনগণের স্বার্থে কাজ করি। যেভাবে আছি সেভাবেই কাজ করব। যতদিন আল্লাহ হায়াতে রেখেছে নিয়ম অনুযায়ী কাজ করব।”

অপরাধ বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর