ঢাকা, ২৬ নভেম্বর মঙ্গলবার, ২০২৪ || ১২ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
১১০৭

জরায়ুমুখ ক্যান্সার কাদের হয়, প্রধান কারণ ও লক্ষণ কী?

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২১:১৯ ৭ জুন ২০১৯  

চার সন্তানের জননী রাফিজা খানমের বয়স এখন ৩৬ বছর । বাবা-মা আর্থিকভাবে অসচ্ছল হওয়ায় দশম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় বিয়ে হয় প্রবাসী আব্দুস সাত্তারের সঙ্গে। বিয়ের মাত্র দুই মাসের মাথায় অন্তঃসত্তা হয়ে পড়ে রাফিজা। আর তাই পরে মেট্রিক পরীক্ষা দেয়া হয়নি তার। কিন্তু স্বামী আশ্বস্ত করে বাচ্চা হওয়ার পরে সে আবার পড়ালেখা করতে পারবে।

এভাবেই এক সময় মাস্টার্স শেষ করে নীলফামারীর স্থানীয় এক উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার চাকরীও পেয়ে যান রাফিজা। স্বামী প্রবাসে থাকলেও চার সন্তান নিয়ে সুখেই দিন কাটছিল তার। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে শরীরটা খুব খারাপ যাচ্ছে ওর। প্রায়ই সময় তলপেটে যন্ত্রণা আর প্রসাবের জ্বালা-পোড়া।

শেষ পর্যন্ত এক গাইনি ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে রাফিজা। অনেক পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর জানা যায়, সে জরায়ুমূখ ক্যান্সারে আক্রান্ত। যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে তার।

ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যানসারের (আইএআরসি) সূত্র মতে, বাংলাদেশের নারীরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় স্তন ক্যানসারে। এর পরেই জরায়ুমুখ ক্যানসার । প্রতিবছর জরায়ুমুখ ক্যানসারে বাংলাদেশে ৮ হাজার ৬৮ জন জন আক্রান্ত হয়। আর মৃত্যুবরণ করে প্রায় ৫ হাজার। এছাড়া বিশ্বে প্রতিবছর এ রোগে আক্রান্ত হয় প্রায় সাড়ে ৫ লাখ নারী। আর মৃত্যু হয় প্রায় ৩ লাখ।

গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. রোকেয়া বেগম বলেন, মূলত জরায়ুমুখ ক্যান্সারের অন্যতম কারণ হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) ।  এ এইচপিভি বিভিন্ন ধরনের আছে। এর মধ্যে এইচপিভি ১৬ ও ১৮ জরায়ুমুখ ক্যান্সারের জন্য সবচেয়ে বেশি মারাত্মক।

তিনি বলেন, মূলত যেসব মেয়েদের বাল্যবিবাহ হয় এবং যেসব নারী অধিক সন্তান জন্ম দেন তারাই এ জরায়ুমুখ ক্যান্সারের ঝুঁকিতে থাকে। এছাড়া নারীর ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছনতার বিষয়টিও রয়েছে। যেসব অল্পবয়সী নারী মাসিকরে সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে না পারে তাদের বিভিন্ন ধরনের জীবানু আক্রমণ করতে পারে। তাই মাসিকের সময় অবশ্যই পরিষ্কার কাপড় ব্যবহার এবং নিজেকে পরিষ্কার রাখতে হবে।

 ডা. রোকেয়া বলেন, অল্প বয়সী মেয়ে বিশেষ করে ৯ থেকে ১৫ বছর বয়সী মেয়েদের জন্য রয়েছে এইচপিভি টিকা। একটু দামী হলেও এই টিকা দিয়ে দেয়াই উত্তম। এছাড়া বেশী বয়সী নারীদের জন্য রয়েছে ক্যান্সার স্ক্রিনিং। ক্যান্সার স্ক্রিনিং এর মাধ্যমে সহজে এই রোগ নির্ণয় করা যায়। পরবর্তী চিকিৎসা দ্রুত শুরু করা যায়।

আরেক গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. শাহানা আক্তার বলেন, আমাদের দেশে বিশেষ করে এখনো গ্রামাঞ্চলে মেয়েদের বয়:সন্ধির সময় নোংরা কাপড় ব্যবহার করতে দেয়া হয়। এসময় তাদের স্কুল পর্যন্ত বন্ধ করে দেয় কিছু কিছু অভিভাবক। অথচ তার কোনো দরকারই হয় না। এখন বাজারে অল্প দামে দেশীয় তৈরি বিভিন্ন ধরনের প্যাড পাওয়া যায়। তারা এসব সহজেই ব্যবহার করতে পারে।

তিনি বলেন, এসব বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম আরো বেশি পরিমাণে বাড়াতে হবে। যদিও বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার স্বাস্থ্যসেবা ঘরের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দেয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিক অন্যতম। কিন্তু তারপরও কিছু কিছু মানুষ এখনো এসব সেবা নিতে আগ্রহী নয়। তাদের এসব সেবার আওতায় আনার জন্য আরো বেশি পদক্ষেপ নিতে হবে।

ডা. শাহানা বলেন, প্রাথমিকভাবে এ ক্যান্সার ধরা পড়লে খুব সহজেই এ থেকে নিরাময় সম্ভব। নিয়মিত ওষুধ সেবন করলে এ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে যদি দেরিতে ধরা পড়ে তবে তা অনেক সময় জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলতে পারে। অনেক সময় ডাক্তারদেরও আর কিছু করার থাকে না। আর তাই এ বিষয়ে পরিবারের সবার মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে।

তিনি বলেন, এখনো পর্যন্ত আমাদের দেশের নারীরা এসব মেয়েলী শারীরিক সমস্যা নিয়ে কারো সঙ্গে আলোচনা করতে লজ্জা পায়। একেবারে চরম পর্যায়ে না গেলে তারা তা কাউকে জানায় না । এমনকি অনেক বিবাহিত নারীরাও তাদের স্বামীর সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন না। এর ফলে অনেক নারীই এক প্রকার বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। যা কখনোই কাম্য নয়।

তিনি সরকার এবং বিভিন্ন এনজিও যেসব সংস্থা এসব বিষয়ে কাজ করেন তাদের এ বিষয়ে আরো বেশি জোরালো ভূমিকা রাখার জন্য আহ্বান জানান।