ঢাকা, ১৭ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার, ২০২৪ || ১ আশ্বিন ১৪৩১
good-food
৭০

জেন জি ও মিলেনিয়ালরা ‘ফোন ধরে না’ কেন?

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ০১:২১ ২৯ আগস্ট ২০২৪  

১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সীদের মধ্যে এক চতুর্থাংশই কখনও ফোন ধরেন না। এমনই উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক জরিপে।জবাবাদাতারা বলছেন, এমন লোকজন সাধারণত ফোনের রিং এড়িয়ে যান, টেক্সটের মাধ্যমে জবাব দেন বা অপরিচিত নম্বর হলে সেটি অনলাইনে সার্চ করে দেখেন।

 

এই তথ্য উঠে এসেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ওয়েবসাইট ‘আসউইচ’-এর করা এক জরিপে। প্রায় দুই হাজার মানুষের ওপর জরিপে দেখা গেছে, ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সী লোকজনের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশই ফোনের বদলে টেক্সট করতে পছন্দ করেন।

 

পুরোনো প্রজন্মের কাছে, ফোনে কথা বলা স্বাভাবিক বিষয় হলেও ২০০৯ সালে মোবাইলে কল করা খুব খরচসাপেক্ষ ছিল।এর ফলে জন্ম নেয় ‘টেক্সটারদের প্রজন্ম’, যেখানে মোবাইল ফোন কল ছিল জরুরি পরিস্থিতির জন্য আর ল্যান্ডলাইন ব্যবহার করা হতো দাদা-দাদিদের সঙ্গে একটানা কথা বলার ক্ষেত্রে।

 

মানসিক পরামর্শক ড. এলিনা তুরোনি’র ব্যাখ্যানুসারে, যেহেতু কিশোর কিশোরীরা ফোনে কথা বলার অভ্যেস রপ্ত করতে পারেনি, ‘তাই এখন ফোনে কথা বলাও যে আর স্বাভাবিক বিষয় নয়, তা ভাবতেও তাজ্জব লাগে।” ফলে, কিশোর বয়সীদের ফোনে রিং বেজে উঠলে তা তাদের জন্য ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।

 

আসউইচের জরিপে অংশ নেওয়া অর্ধেকের বেশি কিশোর স্বীকার করেছেন, অনাকাঙ্ক্ষিত কল এলেই তারা ভাবতেন যে, বাজে কোনো সংবাদ। সাইকোথেরাপিস্ট এলোইস স্কিনার ব্যাখ্যা করে বলছেন, এই কল সংশ্লিষ্ট উদ্বেগের সম্ভাব্য কারণ ‘বাজে কিছুর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা, যার ফলে এমন ভীতিকর ধারণা তৈরি হয়।’

 

“জীবনে ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের কাজের সূচীও এলোমেলো হয়ে যায়। এতে করে কোনো বন্ধুর খোঁজ খবর নেওয়ার সময়ও কমে আসে। এ ছাড়া, ফোন কল এখন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কোনো খবরের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়, যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জটিল কোনো বিষয় হয়ে থাকে।”

 

“ফলে কোন কলগুলো প্রাসঙ্গিক, তা খুঁজে বের করার চেয়ে বরং কল এড়িয়ে যাওয়া সহজ।” এর মধ্যে অনেক কথোপকথনই এখন সোশাল মিডিয়ায় ঘটে, বিশেষ করে ইনস্টাগ্রাম ও স্ন্যাপচ্যাটে, যেখানে টেক্সটের পাশাপাশি বিভিন্ন ছবি ও মিম’ও পাঠানো যায়।

 

আসউইচের জরিপে উঠে এসেছে, ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সীদের ৩৭ শতাংশই বলছেন, তাদের পছন্দের যোগাযোগ ব্যবস্থা হল ভয়েস নোট। সে তুলনায়, ৩৫ থেকে ৫৪ বছর বয়সীদের মধ্যে এ প্রবণতা মাত্র এক শতাংশ।

 

কর্মক্ষেত্রে ‘ফোন ফোবিয়া’

ফোন ফোবিয়া বুঝতে সহায়ক হতে পারে ৩১ বছর বয়সী আইনজীবী ও কনটেন্ট নির্মাতা হেনরি নেলসন-কেসের ‘ওভারহোয়েলম্ড মিলেনিয়াল’ সিরিজের ভিডিওগুলো, যার বিভিন্ন দৃশ্যায়নে উঠে এসেছে কোম্পানিজুড়ে ইমেইল পাঠানোর ক্ষোভ, ভদ্রভাবে অতিরিক্ত সময় কাজ করাকে নাকচ করা, এমনকি এক কর্মী ফোন কল এড়ানোর জন্য যে কোনো কিছু করছেন, এমন বিষয়গুলো।

 

“ফোন কল একটু বেশিই উন্মুক্ত ও এতে উচ্চ স্তরের অন্তরঙ্গতা লাগে, যেখানে মেসেজিং একটু লোকচক্ষুর আড়ালে থাকে ও এটি আপনাকে দূর্বল বা উন্মুক্ত অনুভব না করিয়েই অন্যদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের সুযোগ দেয়,” ব্যাখ্যা করেছেন ড. তুরোনি।

 

তাই এখন হয়ত ফোন কল বাদ দিয়ে টেক্সট করার সক্ষমতাকে স্বীকৃতি দেওয়ার সময় এসেছে, অনেকটা ৯০’র দশকে ফ্যাক্স মেশিনের প্রচলন কমে যাওয়ার মতো। একইভাবে ২০২৪ সালে এসে বিভিন্ন ভীতিকর ফোন কল এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ মেলে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।