ঢাকা, ২৫ নভেম্বর সোমবার, ২০২৪ || ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৫৬৮

টয়লেট চেপে রাখা : যেসব ক্ষতি হতে পারে নারীদের

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২১:৪৭ ১৯ নভেম্বর ২০১৯  

বাংলাদেশে শহর এলাকায় রাস্তাঘাটে নারীদের জন্য টয়লেটের ব্যবস্থা খুবই অপ্রতুল। কোনও কোনও জায়গায় টয়লেট থাকলেও বেশিরভাগ সময় সেগুলো একেবারেই ব্যবহারের অনুপযোগী। এ কারণে পথেঘাটে টয়লেটে যাওয়ার দরকার হলে খুবই বিপদে পড়েন অনেক নারী।
এজন্য নারীদের মধ্যে দীর্ঘসময় ধরে টয়লেট চেপে রাখা এবং পথে যাতে টয়লেট না চাপে সেজন্য কিছু না খাওয়া বিশেষ করে পানি পান না করার প্রবণতা দেখা যায়। দীর্ঘ সময় পায়খানা ও পেশাব চেপে রাখার ফলে নারীরা নানারকম শারীরিক জটিলতার মধ্যে পড়েন। চিকিৎসকেরা বলছেন, কেবল নারীরা নন, এজন্য পুরুষেরাও ভুগতে পারেন মূত্রনালিতে সংক্রমণসহ নানা ধরণের জটিলতায়।
কী ধরণের জটিলতা হতে পারে
বাংলাদেশ জাতীয় কিডনি ইন্সটিটিউটের চিকিৎসক হাসিনাতুল জান্নাত জানিয়েছেন, টয়লেট চেপে রাখার কারণে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন নারীরা। এজন্য মূত্রনালির সংক্রমণসহ নানা ধরণের সমস্যা হতে পারে।
তিনি বলেন, এর ফলে সবচেয়ে বেশি হয় ইউরিনারি ট্র্যাক ইনফেকশন বা ইউটিআই, যাকে বলা হয় মূত্রনালির সংক্রমণ। এটা হয়ই বেশিক্ষণ প্রসাব চেপে রাখলে ব্লাডারে যে জীবাণু জন্মায় তা থেকে। এটা পরবর্তীতে অন্য সমস্যা তৈরি করে। যেমন বারবার যদি কারো ইউটিআই হয়, তাহলে তার নারীর প্রজনন ক্ষমতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
ডা. জান্নাত জানিয়েছেন, প্রসাবে ইউরিয়া এবং অ্যামিনো অ্যাসিডের মতো টক্সিন জাতীয় পদার্থ থাকে। ফলে বেশিক্ষণ চেপে রাখার ফলে বিষাক্ত পদার্থ কিডনিতে পৌঁছে কিডনিতে স্টোন বা পাথর তৈরি করতে পারে। ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলোতে নারী-পুরুষ উভয়ের মধ্যে ইদানীং এ রোগে আক্রান্ত হবার হার বাড়ছে।
তিনি বলেন, এছাড়া পেশাব চেপে রাখার কারণে ব্লাডার ফুলে যেতে পারে। সেই সঙ্গে কারো যদি আগে থেকে কিডনিতে কোনও সমস্যা থাকে এবং সে নিয়মিত প্রসাব চেপে রাখে, তাহলে ক্রমে তার কিডনি কার্যক্ষমতা হারাতে শুরু করবে।
এজন্য রক্তের বিভিন্ন সংক্রমণসহ নানা ধরণের সংক্রমণ হতে পারে। কেবল টয়লেট চেপে রাখার কারণে শ্বাসকষ্ট এবং ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণও হতে পারে বলে জানাচ্ছেন ডা. জান্নাত। এছাড়া প্রসাব করার সময়ে প্রচণ্ড ব্যথাও অনুভব করতে পারেন একজন মানুষ।
কী প্রতিকার?
চিকিৎসক, গবেষক এবং সামাজিক বিজ্ঞানীরা বলছেন, বাংলাদেশে শহুরে এলাকার কর্মজীবী নারীরা এবং শিক্ষার্থীরাই মূলত বাড়ির বাইরে বেরুলে টয়লেট চেপে রাখেন। এজন্য কেবল রাস্তাঘাটে পাবলিক টয়লেটের অপ্রতুলতা দায়ী নয়, কর্মস্থল, শপিং মল, হাসপাতাল কিংবা পার্কের মতো পাবলিক প্লেসে টয়লেটের বিশেষ করে ব্যবহার উপযোগী টয়লেটের অপ্রতুলতা দায়ী।
তবে টয়লেট চেপে রাখার কারণে কী পরিমাণ নারী সমস্যায় পড়েন কিংবা কি ধরণের সমস্যা বেশি হয়, তা নিয়ে কোনও গবেষণার কথা জানা যায় না। কয়েক বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের উদ্যোগে ঢাকা এবং চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কর্মকর্তা এবং কনস্টেবল পর্যায়ে নারী কর্মীদের ওপর একটি গবেষণা চালানো হয়। তাতে দেখা গেছে, রাস্তায় কর্মরত অবস্থায় নারী পুলিশ সদস্যরা টয়লেট চেপে রাখার কারণে অনেকেই ইউরিন ইনফেকশনসহ নানা ধরণের সমস্যায় ভুগছেন। 
কিডনি ইন্সটিটিউটের চিকিৎসক হাসিনাতুল জান্নাত বলছেন, টয়লেট চেপে রাখা ঠেকাতে দুইটি কাজ করতে হবে---এক. নারীদের নিজেদের শরীরের ব্যপারে সচেতন হতে হবে। অর্থাৎ টয়লেট পেলে চেপে না রেখে মোটামুটি ব্যবহারযোগ্য একটি জায়গায় গিয়ে কাজ সেরে ফেলতে হবে। এক্ষেত্রে বাড়ির মেয়েটিকে সচেতন করা এবং উৎসাহ দিতে পরিবারকে প্রধান ভূমিকা পালন করতে হবে। আর দুই. সরকারকে কেবল পাবলিক টয়লেট বানানোর দিকে নয়, বরং কর্মস্থল, শপিং মল, হাসপাতাল ও পার্কের মতো পাবলিক প্লেসে টয়লেটের সংখ্যা বাড়ানো এবং কার্যকর করার দিকে নজর দিতে হবে।
কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে?
ডা. জান্নাত বলছেন, যখনই কোনও নারী প্রসাবে জ্বালাপোড়া হবে, প্রসাবের রাস্তায় চুলকানি হবে এবং তলপেটে ব্যথা হবে, তখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বিশেষ করে এ উপসর্গগুলো যদি বারবার ঘটে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে।