ঢাকা, ০৪ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার, ২০২৫ || ২১ মাঘ ১৪৩১
good-food
১৩

ট্রাম্পের আদেশের বড় ধাক্কা বাংলাদেশে, ঝুঁকিতে লাখো মানুষ

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২৩:৩৬ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫  

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসেই বিদেশে সরকারি খরচে লাগাম টেনেছেন। পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি) রোহিঙ্গা সহায়তা ছাড়া বাংলাদেশের বাকি সব কার্যক্রম আপাতত তিন মাসের জন্য গুটিয়ে নিয়েছে। মাত্র এক সপ্তাহ আগের এই আদেশের প্রভাব বাংলাদেশে পড়তে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ইউএসএআইডির অর্থায়নে চলমান প্রকল্পের কাজ বন্ধ বা স্থগিত করা হয়েছে।

 

খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, গণতন্ত্র ও শাসন ব্যবস্থা, পরিবেশ, জ্বালানি এবং মানবিক সহায়তা কার্যক্রমও গতি হারিয়েছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান দিয়েছে কর্মী ছাঁটাইয়ের নোটিশ। এখন উচ্চ মূল্যস্ফীতিসহ নানা কারণে চাপে রয়েছে বাংলাদেশ। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। এরপর দেশে অর্থনীতির ক্ষতগুলো সামনে আসে, যা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর মধ্যে এলো বড় ধাক্কা। কার্যক্রম বন্ধ করে দিলো ইউএসএআইডি। তাতে সামাজিক নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন খাত ঝুঁকিতে পড়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে লাখো মানুষ।

 

যুক্তরাষ্ট্রের এই নতুন সিদ্ধান্ত দেশের জন্য উদ্বেগের বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, উন্নয়নে বিশেষ করে কারিগরি সহায়তায় দীর্ঘ মেয়াদে প্রভাব পড়বে। এজন্য এখন থেকেই নিতে হবে কূটনৈতিক উদ্যোগ। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। দেশটিকে এটি বোঝাতে হবে, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক সহযোগী দেশ।

 

এইচআইভি, ম্যালেরিয়া ও যক্ষ্মা রোগের ওষুধ সরবরাহ স্থগিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে চলমান প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে পড়েছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্থের অভাবে দেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন কর্মসূচি অপারেশনাল প্ল্যানের (ওপি) কর্মকাণ্ড গত ৭ মাস বন্ধ। এতে ২০ হাজারের বেশি কর্মীর বেতন নেই। এ পরিস্থিতিতে মার্কিন সহায়তা স্থগিত স্বাস্থ্য খাতে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’। এখন এইচআইভি-এইডস, যক্ষ্মা, ডায়রিয়া, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, ম্যালেরিয়া অপুষ্টিজনিত নানা সংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা বলছেন, স্বাস্থ্য খাতে বিরূপ প্রভাব এড়াতে নতুন কর্মকৌশল তৈরিতে কাজ করছে সরকার। তবে কিছু প্রকল্পে কাটছাঁট হতে পারে।

 

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আবু জামিল ফয়সাল বলেন, সহায়তা বন্ধের ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে আইসিডিডিআর,বি হাজারের বেশি কর্মী ছাঁটাই করেছে। এতে স্বাস্থ্য খাতে বড় গবেষণা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাদের তহবিলে পরিচালিত হাসপাতাল বন্ধ হয়ে যাবে। এতে বঞ্চিত হবেন লাখ লাখ রোগী।

 

কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, ইউএসএআইডির স্থগিতাদেশ সাময়িক। এই নির্দেশনা গোটা বিশ্বের জন্য। আমরা নির্দেশনার পর বৈঠক করেছি। ইউএসএআইডি কৃষিতে কিছু প্রকল্পে সহায়তা দিচ্ছে। বেশিরভাগ কারিগরি সহযোগিতা। কোনো প্রভাব পড়বে কিনা, তা পর্যবেক্ষণ করছি। আপাতত চূড়ান্ত নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি। পরিস্থিতি বুঝে পদক্ষেপ নেব।

 

ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, বাংলাদেশে মার্কিন অর্থায়নের আমাদের ছয়টি প্রকল্প স্থগিত হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি সরাসরি আমরা বাস্তবায়ন করি। অপর তিনটি অন্য এনজিও দিয়ে বাস্তবায়িত হয়। এসব প্রকল্প থমকে যাওয়ায় অন্তত ৩৫ লাখ মানুষ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন।

 

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করে। তারা বিভিন্ন সংস্থাকে সহযোগিতা করে। সেসব সংস্থা আবার বিভিন্ন দেশে উন্নয়নমূলক কার্যক্রম করে। এখন এসব কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। আবার তিন মাস পর কার্যক্রম শুরু করার অবস্থায় নাও থাকতে পারে। এজন্য বিভিন্ন দেশ চাইবে যেন রিভিউটা ইতিবাচক হয়। তাই আমাদের কূটনৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে। বিভিন্নভাবে তাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। সেটা ঢাকায়, ওয়াশিংটনেও করতে হবে।